তেভাগা আন্দোলনের স্মৃতি এখনও বয়ে বেড়ায় কাকদ্বীপ। অহল্যা, বাতাসীদের লড়াইয়ের সেই জমিতে দাঁড়িয়ে এ বার বিধানসভা ভোটের দড়ি টানাটানির আঁচ অনুভূত হচ্ছে। তবে ‘তৃণমূলের গড়’ বলে পরিচিত সূর্যনগর, মধুসূদনপুর, শ্রীনগর, বাপুজি এলাকায় উত্তাপটা বেশি। ওই সব পঞ্চায়েতে তৃণমূলকে রুখে দেওয়ার চেষ্টায় মরিয়া জোট শিবির। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের ফলাফলের নিরিখে তৃণমূল এই সব এলাকা থেকেই অনেকটা ব্যবধান তৈরি করে নিয়েছিল। ফলে ওই সব এলাকায় জমি ধরে রাখতে মরিয়া তৃণমূলও।
এই টানাপড়েনের মধ্যে পড়ে এলাকাগুলিতে উত্তেজনার পারদ চড়েছে কাকদ্বীপের অন্য প্রান্তের তুলনায় বেশি। ওই সব এলাকায় বিরোধীদের মিথ্যা মামলায় জড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলছেন কংগ্রেস প্রার্থী রফিকউদ্দিন মোল্লা।
বিদায়ী মন্ত্রী তথা এ বারের তৃণমূল প্রার্থী মন্টুরাম পাখিরার বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাতে জোটের ভরসা যিনি, সেই রফিউকদ্দিন মোল্লা রাজনীতিতে খুব পোড় খাওয়া নন। তবু ব্যাটিং করছেন ভালই। তাঁর একটি বিএড কলেজ রয়েছে। দীর্ঘদিন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা চালানোর সুবাদে এলাকায় একেবারে আলটপকাও নন।
রফিকউদ্দিনের বক্তব্য, ‘‘রাজনৈতিক ভাবে লড়াইয়ে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছেন মন্টুরাম পাখিরা। তাই বিভিন্ন ভাবে মিথ্যা মামলায় জোটশিবিরের লোকজনকে জড়িয়ে দিতে চাইছেন। নিজেদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের দায় চাপাচ্ছেন জোটের উপরে।’’ ইতিমধ্যেই শাসকদলের হয়ে কাজ করার অভিযোগ ওঠায় নির্বাচন কমিশনের কোপে পড়েছেন মহকুমার দুই পুলিশ অফিসার। যা বুকে বল জোগাচ্ছে জোট শিবিরকে।
এ সব অভিযোগ ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে উন্নয়নের ঢালাও ফিরিস্তি দিচ্ছেন মন্টুরামবাবু। আত্মবিশ্বাসী তৃণমূল প্রার্থীর কথায়, ‘‘এখানে উন্নয়ন নিয়েই আমরা মাথা ঘামাচ্ছি। রাজনৈতিক অপপ্রচার নিয়ে নয়।’’
মন্টুরামবাবু দীর্ঘদিনের পরিচিত মুখ। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে মাথা চাড়া দিতে না দিয়ে সংগঠনে নিজের একাধিপত্য বজায় রেখেছেন।
কিন্তু নামখানায় হাতানিয়া-দোয়ানিয়া নদীর উপরে সেতুর জন্য এবং ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণ করতে গেলে রাস্তার দু’পাশে যে সব ব্যবসায়ীকে উচ্ছেদ করতে হবে, তাঁদের পুনর্বাসন নিয়ে কোনও পক্ষ কোনও কথা বলছে না। নারায়ণপুরে সুপার মার্কেট তৈরির আশ্বাস জমির সমস্যায় ঠান্ডা ঘরে। বিবেকানন্দ, রামগোপালপুরের কিছু অংশ এবং বুধাখালিতে ভাঙনের সমস্যা রয়েছে, অহল্যা কলোনিতে স্লুইসগেট হয়নি। কালনাগিনী বাদেও আরও ছোটখাট খাল সংস্কার মার খেয়েছে পুরসভা তৈরি না হওয়ার জন্য। বাসিন্দাদের অভিযোগ রাজনৈতিক তরজার বাইরে এ সব বিষয়ে দু’দলের চিন্তাভাবনা জানতে পারলে অনেক নিশ্চিন্ত হতেন তাঁরা।
বিরোধীরা অভিযোগ তুলছে, ভাঙন রোখার চেষ্টা, বন্দরের উন্নয়ন, খাল সংস্কার— এ সব কাজ সবেমাত্র ভোটের কিছু দিন আগে শুরু হল। এত দিন কেন সে সবে নজর দেননি বিদায়ী বিধায়ক, সেই প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা। কাকদ্বীপে ছাত্রীকে ধর্ষণ-খুনের ঘটনাও কয়েক মাস আগে তোলপাড় ফেলে কাকদ্বীপে। বিরোধীদের প্রচারে উঠছে সেই প্রসঙ্গও। ঘাসফুল শিবির জানাচ্ছে, সুন্দরবন উন্নয়ন দফতর পেয়ে মন্টুরামবাবু যাবতীয় উন্নয়ন টানতে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। বিধানসভার ১৩টি পঞ্চায়েতের ১১টিতে রাস্তা-আলোর কাজ হয়েছে প্রচুর। বন্দরের পাশেই একটি ড্রাই ডকের কাজ চলছে। নামখানায় হিমঘর তৈরি হচ্ছে। ঘটিহারা ও নৃসিংহ আশ্রমের কাছে দু’টি কংক্রিটের সেতুর কাজ চলছে। কিছু সাইক্লোন সেন্টার হচ্ছে। কাকদ্বীপ আদালতের নতুন পরিকাঠামো তৈরি হয়েছে।
তবু কয়েকটি মাত্র পঞ্চায়েতের দখলকেই লক্ষ্য করেই ঘুরপাক খাচ্ছে কাকদ্বীপের ভোট তরজা।