ব্যাঙ্ক ডাকাতির পরে মোটরবাইকে চেপে পালাচ্ছে দুষ্কৃতীরা। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গিয়েছে সেই ছবি।
বারুইপুর থানা এলাকার চম্পাহাটিতে শনিবার বিকেলে হওয়া ব্যাঙ্ক ডাকাতির ঘটনায় চার জনকে আটক করা হয়েছে। ওই রাতেই ঘুটিয়ারি শরিফ থেকে আটক চার জনের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
এ দিকে তদন্তকারীদের দেওয়া ব্যাঙ্ককর্মীদের বয়ান অনুযায়ী, পাঁচ জন সশস্ত্র দুষ্কৃতী ব্যাঙ্কে ঢুকে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে টাকা লুট করে মোটরবাইকে পালিয়েছিল। তার আগে তারা ব্যাঙ্কের সিসি ক্যামেরা ও
কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক ভেঙে দিয়ে যায়। কিন্তু আশপাশের দোকানের বাইরের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গিয়েছে, দু’টি মোটরবাইকে চেপে হেলমেট পরা চার জন সোনারপুর তেমাথার দিকে চলে যাচ্ছে। তবে কি পঞ্চম জন ওই ব্যাঙ্কের আশপাশের বাসিন্দা? ডাকাতির পরে সে কি এলাকায় ফিরে গিয়েছে? তাই ফুটেজে তাকে দেখা যায়নি?
সোনারপুরের তেমাথা এলাকা থেকে রাস্তা দু’দিকে চলে গিয়েছে। এক দিকে ঘুটিয়ারি শরিফ অন্য দিকে ভাঙড়। ডাকাতির পরে মোটরবাইক দু’টি দু’দিকে চলে যেতে দেখা গিয়েছে। তাই দুই এলাকায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে চার দুষ্কৃতীর খোঁজে তল্লাশি চলছে বলে জানিয়েছেন বারুইপুর পুলিশ জেলার কর্তারা।
তদন্তে নেমে একটি সেভেন এম এম পিস্তল ব্যাঙ্ক থেকে উদ্ধার হয়েছে। জানা গিয়েছে, সেটি দিয়েই কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক ভাঙার কাজ করেছিল দুষ্কৃতীরা। দীর্ঘ সময় ওই ব্যাঙ্কের উপরে নজরদারি চালানোর পরে শনিবার বিকেলে তারা হামলা চালিয়েছে বলে অনুমান তদন্তকারীদের। ব্যাঙ্কের ভিতরের পরিস্থিতিও তাদের নজরে ছিল। বিকেল চারটেয় ব্যাঙ্ক বন্ধ হয়। কয়েক ঘণ্টা আগে সব হিসেব করে টাকা ভল্টে রাখা হয়। তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, ঠিক পৌনে চারটে নাগাদ দুষ্কৃতীরা হানা দিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে ভল্ট খুলে টাকা ছিনিয়ে নেয়। কিন্তু কয়েকটি বান্ডিলে পেন্সিল দিয়ে লেখা ছিল। সেগুলিতে হাত দেয়নি তারা। কেন? সেই উত্তর মেলেনি।
ওই ব্যাঙ্ক থেকে কিছু দূরেই চম্পাহাটি পুলিশ ফাঁড়ি। দিনের আলোয় মোটরবাইক ব্যাঙ্কের বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখে ভিতরে নিশ্চিন্তে লুটের ঘটনায় স্থানীয় কোনও বাসিন্দার জড়িত থাকার বিষয়টি নিয়ে তাই তদন্তকারীরা নিশ্চিত।
এ দিকে পর পর ঘটনায় এলাকার আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হওয়ার অভিযোগ তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একটি অংশ। সম্প্রতি বারুইপুরের উকিলপাড়ায় দিনের বেলায় এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে মোটরবাইকে পালায় দুষ্কৃতীরা। কয়েক সপ্তাহ আগে সোনারপুর থানা এলাকায় কাঠগুদাম মালিককে চপার মেরে লক্ষাধিক টাকার ব্যাগ ছিনতাই করা হয়। বারুইপুরেরই পশ্চিম সালেপুরে বৃদ্ধাকে হাত-পা বেঁধে খুন করে লুটপাট চালায় দুষ্কৃতীরা। স্থানীয়দের অভিযোগ, এ সবের পরেও সতর্ক হয়নি পুলিশ। এমনকি সে সবের কিনারাও হয়নি।
সম্প্রতি প্রশাসনিক বৈঠকে বারুইপুর জেলা পুলিশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই বৈঠকে তিনি বারুইপুর পুলিশ জেলার সুপার রশিদ মুনির খানকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। ভাঙড়, কাশীপুর, ক্যানিং, বাসন্তী, কুলতলি, বারুইপুর, সোনারপুর ও নরেন্দ্রপুর থানা এলাকার আইনশৃঙ্খলা নিয়েও উদ্বেগ দেখিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
নরেন্দ্রপুর থানা এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, ইএম বাইপাস লাগোয়া থানা এলাকায় নানা অসামাজিক কাজ চলছে। সেখানে প্রকাশ্যে গাঁজা বিক্রি ও সাট্টা খেলা হয়। ওই সব ঠেকে জমায়েত করা দুষ্কৃতীরাই ছিনতাই বা ডাকাতি করছে। পুলিশে অভিযোগ জানিয়েও কিছু হয়নি। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, অনেক সময়ে ওই সব ঠেকে থানার কোনও কোনও সিভিক ভলান্টিয়ারকেও আড্ডার মেজাজে দেখা যায়।
সব শুনে বারুইপুর পুলিশ জেলার সুপার রশিদ মুনির খানের বক্তব্য, “সব অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ব্যাঙ্ক ডাকাতির ঘটনায় দুষ্কৃতীদের খোঁজ করা হচ্ছে। কয়েক জনকে জেরা চলছে।”