ধর্মতলার সভাস্থল পরিদর্শনে মমতা। —নিজস্ব চিত্র।
রাত পোহালেই বৃহস্পতিবার তৃণমূলের ‘শহিদ দিবস’। তার আগে বুধবার ধর্মতলায় ২১ জুলাইয়ের সভাস্থল পরিদর্শনে এলেন তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সভার আয়োজন খতিয়ে দেখতে সেখানে আগে থেকেই ছিলেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ অন্য শীর্ষনেতারা। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থাপনার খুঁটিনাটি সম্পর্কে জানতে চান তৃণমূলনেত্রী। খতিয়ে দেখেন ‘মহা সমাবেশ’-এর প্রস্তুতি।
প্রত্যেক বছরই ২১ জুলাইয়ের সমাবেশের আগের দিন সন্ধ্যায় সভাস্থল পরিদর্শন করে থাকেন তৃণমূলনেত্রী। এ বারও সেই রেওয়াজ মেনে বুধবার বিকাল সাড়ে ৫টা নাগাদ ২১ জুলাইয়ের মঞ্চের সামনে আসেন তিনি। তবে মূল মঞ্চের উপরে বা ব্যাকস্টেজে যাননি মমতা। বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটের রাস্তায় চেয়ার পেতে অরূপ, ফিরহাদ, সুদীপদের সঙ্গে বসে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। পরে বলেন, ‘‘সকলকে বলব, শান্ত ভাবে, সুন্দর ভাবে, শৃঙ্খলা রেখে মিছিল করে আসতে। তার পর মিটিং শেষে আবার শান্ত ভাবে বাড়ি ফিরে যেতে। রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালানোর সময় জোরে চালাবেন না। কোনও জেলায় কোনও সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে সমাধান করবেন।’’
মমতা আরও বলেন, ‘‘জায়গাটা তো বদলাতে পারব না। কারণ, ঘটনাটা এখানেই ঘটেছিল। আমি সাধারণ মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। একটু ভিড় হবে। আপনারা একটু কষ্ট সহ্য করে নেবেন একটা দিন। আমরা গত দু’বছর কোভি়ডের জন্য সমাবেশ করতে পারিনি। এ বছর করছি। আপনাদের কোনো অসুবিধা হলে তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।’’
সমাবেশ সফল করতে বুধবার দিকে একটি ভিডিয়ো বার্তাও প্রকাশ করেছেন মমতা। সহযোগিতার আহ্বান ও আবহাওয়া নিয়ে সর্তকতার বার্তা দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘২১ জুলাই দিনটি আমাদের কাছে ঐতিহাসিক এবং স্মরণীয় দিন। এই দিনটির সঙ্গে আমাদের আবেগ ও স্বজনরা জড়িত। জড়িত মা-মাটি-মানুষ। আমাদের শহিদ তর্পণ— মা-মাটি-মানুষকে উৎসর্গ করা। সবটাই আমরা ২১ জুলাইকে ঘিরে করি।’’
তৃণমূলনেত্রীর সংযোজন, ‘‘যদিও এই সময়টায় আবহাওয়াটা ভাল থাকে না। প্রচণ্ড ঝড়-জল-বৃষ্টি হয়। তার মধ্যে আমাদের লাখো লাখো কর্মী সমাবেশে এসে উপস্থিত হন নিজেদের চেষ্টায়। আমি সবাইকে আবেদন করব, আমাদের ২১ জুলাইয়ের অনুষ্ঠানে সবারে করি আহ্বান। সব মানুষকে আবেদন করব। যাঁরা পারবেন তাঁরা আসুন। যাঁরা আসতে পারবেন না, তাঁরা টিভিতে দেখুন, আমাদের ফেসবুক লাইভে দেখুন। আমি সবাইকে বলব, সাবধানে ও শান্তিপূর্ণ ভাবে নিজেরা নিজেদের সঙ্গে সহযোগিতা করে, প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতা করে আসুন।’’
মমতার আগে ধর্মতলার সভাস্থল পরিদর্শনে এসেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। মঞ্চের আশপাশ ঘুরে দেখে কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। বেরোনোর সময় অভিষেক বলেন, ‘‘সমাবেশে অন্তত ২০ লক্ষ মানুষের সমাগম হতে পারে। এ বার গোয়া, মেঘালয়, ত্রিপুরা, অসম থেকেও আসবে তৃণমূল নেতারা।’’
গত দু’বছর কোভিডের কারণে তৃণমূলের ‘শহিদ সমাবেশ’ ভার্চুয়াল মাধ্যমে হয়েছিল। সে কারণেই এ বছর ধর্মতলায় তৃণমূলের ২১ জুলাইয়ের সভা দলীয় কর্মী-সমর্থকদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। গত বিধানসভা নির্বাচনে বিরাট জয়ের পরেও জোড়াফুল শিবিরের পক্ষ থেকে কোনও বিজয়মিছিল করা হয়নি। শাসকদলের বক্তব্য, তখন থেকেই ২১ জুলাইয়ের সমাবেশ বড় করে করার কথা ভেবেছিলেন শীর্ষনেতৃত্ব। সেই মতোই করা হয়েছে এ বছরের সভার আয়োজন।