অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়
বৃহস্পতিবার, ২১ জুলাই তাঁদের মহা সমাবেশের দিন আদালতের নির্দেশ মেনে বিজেপি সভা করলে আপত্তি নেই বলেই জানালেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে পাশাপাশিই তীব্র কটাক্ষের সুরে বললেন, ‘‘লাইমলাইটে (প্রচারে) থাকতে গেলে তো ওইদিনটাই বাছতে হবে ওদের! আসলে ওরা মানুষের দাবিদাওয়া নিয়ে ভাবিত নয়। এদের একটাই কাজ— ধর্মের ভিত্তিতে বাংলায় বিভাজন আর শান্ত বাংলাকে অশান্ত করা। হেরে গিয়েও ওদের শিক্ষা হয়নি। এটা বিজেপির মরিয়া চেষ্টা!’’
বৃহস্পতিবার তৃণমূলের ‘শহিদ সমাবেশ’-এর দিনেই উলুবেড়িয়ায় সভা ডেকেছিল বিজেপি। সেখানে মূল বক্তা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। কিন্তু কলকাতা হাই কোর্ট বুধবার নির্দেশ দিয়েছে, সভা একান্ত করতেই হলে তা রাত ৮টার আগে শুরু করা যাবে না। পাশাপাশিই আরও একগুচ্ছ শর্ত আরোপ করেছে আদালত।
আদালতের সেই নির্দেশ এবং বিজেপির প্রস্তাবিত সভা নিয়েই তাঁর অভিমত জানিয়েছেন অভিষেক। তাঁর কথায়, ‘‘আদালত অনুমতি দিয়ে থাকলে বিজেপির সভা হবে। আদালতের নির্দেশ আমাদের কাছে শিরোধার্য। কিন্তু ওই সমাবেশ আদালতের দেওয়া শর্ত মেনেই হওয়া উচিত।’’ পাশাপাশিই হাই কোর্টের মঙ্গলবারের পর্যবেক্ষণ টেনে এনে বিজেপিকে বিঁধেছেন অভিষেক। তাঁর কথায়, ‘‘হাই কোর্ট যদি অনুমতি দিয়ে থাকে, তা হলে সভা হবে। হাই কোর্টের রায় শিরোধার্য। এ নিয়ে তো কিছু বলার নেই। কিন্তু গতকাল (মঙ্গলবার) খোদ বিচারপতিই প্রশ্ন তুলেছিলেন, ৩৬৫ দিনের মধ্যে কেন ২১ জুলাইতেই বিজেপিকে সভা করতে হবে? কেন ২০ জুলাই বা ২২ জুলাই সভা করতে পারছে না ওরা?’’
তবে ২১ জুলাই উলুবেড়িয়ায় বিজেপির সভা ঘিরে যাতে কোনও গন্ডগোল না হয়, আদালতের শর্ত মেনে যাতে গেরুয়া শিবিরের সমাবেশ হয়, প্রশাসনকে তা নিশ্চিত করতে অনুরোধ করেছেন অভিষেক। তাঁর কথায়, ‘‘হাই কোর্ট যদি রায় দিয়ে থাকে, সভা হতে কোনও বাধা নেই। কিন্তু ওই সভা যাতে শর্ত মেনে হয়, তা সুনিশ্চিত করতে অনুরোধ করব প্রশাসনকে।’’
উলুবেড়িয়ায় বিজেপির সভা রাত ৮টা থেকে শুরু করার নির্দেশ ছাড়াও হাই কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, সভার জন্য সমাবেশ শুরু হবে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে। রাত ১০টার পরে সভা চালানো যাবে না। সভায় ২০টির বেশি লাউডস্পিকারও ব্যবহার করা যাবে না। উলুবেড়িয়ার মহকুমাশাসককে এমন স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে, যাতে তিনি মাইক কোথায় লাগানো যাবে, তা ঠিক করতে পারবেন।
প্রসঙ্গত, ২১ জুলাইয়ের সমাবেশের জন্য ইতিমধ্যেই বাইরের জেলাগুলি থেকে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা কলকাতায় আসতে শুরু করেছেন। তাঁরা রয়েছেন শহরের বিভিন্ন জায়গায়। সেখানে ঘুরে ঘুরে কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে দেখা করছেন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘‘গোয়া, মেঘালয়, ত্রিপুরা, অসম থেকে তৃণমূলের নেতারা আসবেন। তাঁদের আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তাঁর স্বচক্ষে দেখবেন সমাবেশ।’’ সমাবেশে অন্তত ২০ লক্ষ মানুষের সমাগম হবে বলেও জানিয়েছেন অভিষেক।
অভিষেকের আরও বক্তব্য, ‘‘আমি তৃণমূলের সৈনিক। ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত যুব সভাপতি থাকার সময়েও আমি ২১ জুলাইয়ের সমাবেশের আগে কর্মীদের কাছে এ ভাবেই গিয়েছি। তৃণমূলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক নম্বর। দুই থেকে ৯৯ তৃণমূলের কর্মী। কর্মী হিসেবে আমায় দল যে দায়িত্ব দেবে, আমি তা-ই করব। আমার দায়িত্ব দলকে বাংলায় আরও শক্তিশালী করে দেশের উত্তর থেকে দক্ষিণ এবং পূর্ব থেকে পশ্চিমে দলকে আরও ছড়িয়ে দেওয়া।’’ পাশাপাশিই অভিষেকের বক্তব্য, ‘‘দল বড় হয়েছে। ফলে দু-চারটে জায়গায় দু-চারটে বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটেছে। আমরা সেগুলো সম্পর্কে ব্যবস্থা নিয়েছি।’’
একইসঙ্গে কোভিড নিয়েও সচেতন করেছেন অভিষেক। তাঁর বক্তব্য, ‘‘অতিমারি এখনও শেষ হয়নি। ফলে সকলকেই বলছি, দয়া করে মাস্ক পরে থাকুন। কোভিড কিন্তু তৃণমূল-বিজেপি দেখে না। ফলে প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতা করুন। ফলে দরকার হলে একটু দূরে দূরে হাঁটুন। স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন।’’