বৃহস্পতিবার ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্বাগত জানালেন নচিকেতা চক্রবর্তী। ছবি: ভিডিয়ো থেকে সংগৃহীত।
চড়া রোদের ফাঁকে অঝোরে বৃষ্টি। তার মাঝেই ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে বিশিষ্ট-সমাবেশ। তুমুল বৃষ্টি বদলে গিয়ে ছিটেফোঁটা হওয়ার সময় মঞ্চে দেখা গেল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তাঁকে স্বাগত জানাতে নচিকেতার কণ্ঠে শোনা গেল তাঁর পরিচিত গান, ‘‘তুমি আসবে বলেই...।’’
বৃহস্পতিবার দুপুরে ধর্মতলায় তৃণমূলের শহিদ সমাবেশের মঞ্চে নচিকেতা ছাড়াও ছিলেন চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্ন, গায়ক সৌমিত্র রায়, প্রাক্তন ফুটবলার মেহতাব হোসেন-সহ একঝাঁক নামজাদা। ছিলেন শিক্ষা এবং নাট্যজগতের বিশিষ্টেরাও। প্রবীণ নাট্য অভিনেতা গৌতম মুখোপাধ্যায়, নাট্যকার অভি চক্রবর্তী, শেখর সমাদ্দার, বিজয় মুখোপাধ্যায়, ইন্দ্রজিৎ চক্রবর্তী-সহ অন্তত ১০ জন। ছিলেন অধ্যাপক অভীক মজুমদারও।
সভা শুরুর আগে সঙ্গীত পরিবেশন করেন ‘পরিবর্তন’ নামের বাংলা ব্যান্ডের গায়কেরা। আর মঞ্চে একমাত্র গান গেয়েছেন নচিকেতা চক্রবর্তী। তখন তুমুল বৃষ্টি থেমে প্রায় ছিঁটেফোঁটায় পরিণত। মঞ্চে ওঠার জন্য প্রস্তুত মমতা। নচিকেতা গান ধরেন, ‘‘তুমি আসবে বলেই আকাশ মেঘলা, বৃষ্টি এখনও হয়নি...।’’ খালি গলায় নচিকেতার দু’কলি গানের পর ভাষণ দিতে ওঠেন মমতা।
বিশিষ্টদের মাঝে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।
করোনাকালে গত দু’বছর ২১ জুলাইয়ের সভা ভার্চুয়াল আঙ্গিকে হয়েছে। ওই দু’বছরে একে একে চলে গিয়েছেন বহু বিশিষ্টজন। তাঁদের অনেককেই ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে দেখা যায়নি। তবে নিজের তাঁদেরও স্মরণ করেন মমতা। নাম করেন লতা মঙ্গেশকর, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, শঙ্খ ঘোষ, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত, অভিষেক চট্টোপাধ্যায়দের। নাম করেন কলকাতায় অনুষ্ঠান করতে এসে প্রয়াত গায়ক কেকে-র।
২১ জুলাইয়ের মঞ্চে বিশিষ্টদের সমাবেশ প্রত্যাশিতই। বাম আমলে শাসক বা বিরোধী শিবিরের আহ্বানে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে, মিটিং-মিছিলে রাজ্যের বিশিষ্টদের একাংশকে আগেও শামিল হতে দেখা গিয়েছে। তবে মূলত তৃণমূলনেত্রী মমতার ডাকে ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে একসঙ্গে একঝাঁক বিশিষ্টের জমায়েত দেখেছে জনতা। বাম আমলে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের পর তৃণমূলের ‘পরিবর্তন’-এর পোস্টারে মুখ-দেখানো ‘পরিচিত বামপন্থী’দের অনেকেই রাজ্যের রাজনৈতিক পালাবদলে অনুঘটক ছিলেন।
তবে বৃহস্পতিবারের মঞ্চে নজরে পড়েননি শিল্পী যোগেন চৌধুরী, কবি জয় গোস্বামী, সুবোধ সরকার বা শ্রীজাত। দেখা যায়নি তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ গায়ক কবীর সুমনকেও।
শিল্পী-সাহিত্যিক, ক্রীড়াক্ষেত্রের দিকপাল থেকে টালিগঞ্জের নামজাদা অভিনেতা-অভিনেত্রী— সমাজের নানা ক্ষেত্রের জনপ্রিয় মুখ মমতার সঙ্গে বার বার ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ ভাগ করে নিয়েছেন। এই মঞ্চেই দেখা গিয়েছিল জ্ঞানপীঠ, সাহিত্য অকাদেমি-সহ নানা সম্মানে ভূষিত মহাশ্বেতা দেবীকে। রাজ্যের প্রান্তিকদের অধিকার আন্দোলনের সরব হওয়ার পাশাপাশি বরাবরই যিনি নিজের রাজনৈতিক পরিচয় জানান দিয়েছেন স্পষ্ট ভাষায়। একদা বামপন্থী থেকে জোড়াফুল শিবিরের সর্বময় নেত্রীরও ঘনিষ্ঠ হয়েছিলেন তিনি। হুইলচেয়ারে বসিয়ে যে অশীতিপর মহাশ্বেতাকে ২০১৮ সালের ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে নিয়ে এসেছিলেন খোদ মমতা। মঞ্চে উঠে জনজোয়ার দেখে মহাশ্বেতার অকপট মন্তব্য ছিল, ‘‘আমার হৃদয় আলোড়িত। আজকের দিনটি সকলের মনে রাখার মতো। শ্রদ্ধা করার মতো!”
মহাশ্বেতার মতোই ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে দেখা আগে গিয়েছে কবি জয়, সুবোধ, শিল্পী যোগেন, শুভাপ্রসন্ন, সমীর আইচ, নাট্যকর্মী শাঁওলী মিত্র থেকে গায়ক কবীর সুমন, নচিকেতা, ইন্দ্রনীল সেন বা সৌমিত্র রায়দের। দেখা গিয়েছে ক্রীড়াজগতের এককালের মহারথীদেরও। একদা ময়দান-কাঁপানো ফুটবলার প্রদীপ (পিকে) বন্দ্যোপাধ্যায়, গৌতম সরকার, সমরেশ চৌধুরী, কম্পটন দত্ত, মানস ভট্টাচার্য, বিদেশ বসু, সুব্রত ভট্টাচার্য থেকে শুরু করে মেহতাব হোসেন বা বাংলার প্রাক্তন অলরাউন্ডার ক্রিকেটার লক্ষ্মীরতন শুক্লদেরও। ২১ জুলাইয়ের মঞ্চেই গিটার হাতে কণ্ঠ ছেড়েছেন সুমন। মমতার লেখনীতে সুর দিয়ে গান করেছেন নচিকেতাও। বৃহস্পতিবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি!