ঘরে বসে কেন, প্রশ্ন রণক্লান্ত সিপিএমেই

প্রতি বার ২১শে জুলাই মানে তাঁরই ‘শো’! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছায়ায় ঢাকা পড়ে যায় আর সব কিছু। যাঁদের পতাকা হাতে তিনি সেই ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই মহাকরণের দিকে এগিয়েছিলেন, সে কংগ্রেসও ম্লান হয়ে যায় ২১শে-র তর্পণের দিন। কিন্তু সিপিএম? তাদের হল কী?

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৬ ০৪:২৬
Share:

প্রতি বার ২১শে জুলাই মানে তাঁরই ‘শো’! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছায়ায় ঢাকা পড়ে যায় আর সব কিছু। যাঁদের পতাকা হাতে তিনি সেই ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই মহাকরণের দিকে এগিয়েছিলেন, সে কংগ্রেসও ম্লান হয়ে যায় ২১শে-র তর্পণের দিন। কিন্তু সিপিএম? তাদের হল কী?

Advertisement

২১শে-র বেশ কিছু দিন আগে থেকেই সিপিএম ফ্রন্টে অখণ্ড নীরবতা! মুখ্যমন্ত্রী মমতা ধর্মতলায় ২১শে-র মঞ্চে গিয়ে দাঁড়ানোর আগে তাঁর উদ্দেশে কিছু চ্যালেঞ্জ, কিছু প্রশ্ন ভাসিয়ে রাখতেন সূর্যকান্ত মিশ্র। গত কয়েক বছরে এটাই ছিল দস্তুর। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক এ বার প্রায় মুখে কুলুপ এঁটেছেন। দলের বইয়ে-কইয়ে সাংসদ এবং পলিটব্যুরোর সদস্য মহম্মদ সেলিম রাজ্যের বিষয় নিয়ে বিশেষ মুখ খুলছেন না। রাস্তায় তেমন মিটিং-মিছিল নেই। দলের যুব সংগঠনের মুখপত্রের ৪৯ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আগামী শনি ও রবিবার শিলিগুড়ি ও কলকাতায় দক্ষিণপন্থার বিপদ নিয়ে দু’টি আলোচনাসভায় বক্তা অবশ্য যথাক্রমে সেলিম ও সূর্যবাবু। ওই পর্যন্তই!

বিদ্রোহী রণক্লান্ত হয়ে তা হলে কি শান্ত হয়ে গেল আলিমুদ্দিন? একে ভোটে ভরাডুবি, তার উপরে কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার প্রশ্নে দলের ভিতরে-বাইরে বিতর্কের আগুন। সে সবের হতাশার জেরেই কি হাল ছেড়ে দিতে বসলেন সূর্যবাবুরা? দলের রাজ্য কমিটিতে আলোচনা হয়েছিল, রমজান মিটে গেলে সঙ্গে কেউ থাকুক বা না-থাকুক, কর্মসূচি নিয়ে রাস্তায় নামা হবে। তার কোনও পরিকল্পনা এখন পর্যন্ত চোখে পড়ছে না। সন্ত্রাস এবং হামলার প্রতিবাদে এখানে ওখানে মাঝেমধ্যে বিরোধী দলনেতা, কংগ্রেসের আব্দুল মান্নানের সঙ্গে বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীর একত্র উপস্থিতি ছাড়া।

Advertisement

অথচ দলের মধ্যে বলাবলি হচ্ছে, বলার সুযোগ যে একেবারে ছিল না, তা তো নয়। এ কথা ঠিকই, দ্বিতীয় ইনিংসে অনেক সমঝে চলছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। রাজধর্ম পালনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। তোলাবাজির দায়ে দলীয় কাউন্সিলর গ্রেফতার হয়েছেন, তার পরে পুলিশ দিয়ে ধরে আনা হয়েছে অন্তত ৪৫ জনকে। প্রশ্নের জবাবে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শ্যামল চক্রবর্তী এক দিন শুধু বলেছেন, নিচু তলার দু-এক জনকে ধরে কী হবে? নারদ-কাণ্ডে অভিযুক্তদের কী হল? দলের রাজ্য কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘প্রশ্ন তোলাই বিরোধীদের কাজ। কিন্তু আমাদের দেখে মনে হচ্ছে, ভোটের আসন সমঝোতা নিয়ে দলের মধ্যে বিতর্ক করেই আমরা ক্ষান্ত দিচ্ছি। আর কিছু করতে
চাইছি না!’’

তৃণমূল নেত্রী শক্ত হাতে হাল ধরতে চাইলেও একাধিক জেলায় শাসক দলে গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব বাড়ছে। প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে কিছু জেলায়। সিপিএমেরই একাংশের মত, শাসক দলের অন্দরের বিরোধে সাধারণ মানুষের
জীবনেও আঁচ আসছে, এই মর্মে সরব হয়ে জনতার সমর্থন কিছুটা নিজেদের দিকে টানার চেষ্টা করা যেতে পারে। কর্মসংস্থানের দাবিতে রাস্তায় নামা যেতে পারে।
ভোটের আগে সূর্যবাবুরা তা-ই করতেন। কিন্তু এখন কোথায় সে সব? আড়াই মাস পরে দলের সাংগঠনিক প্লেনাম আসছে কলকাতায়। তার প্রস্তুতি নিয়েই রুদ্ধদ্বার আলোচনা চলছে! দলের এক তরুণ নেতার আশঙ্কা, ‘‘আমরা ময়দান ছেড়ে দিলে বিরোধী রাজনীতির পরিসর পুরোটাই নিয়ে নেবে কংগ্রেস। দ্রুত জায়গা নেওয়ার জন্য উঠে আসবে বিজেপি-ও।’’

প্রয়াত জ্যোতি বসু বলতেন, কমিউনিস্টদের কখনও হতাশ হতে নেই। তাঁর দলের অন্দরেই এখন আক্ষেপ, নেতাদের দেখে মনে হচ্ছে তাঁরা আশা হারিয়েছেন! প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সেই পার্ক সার্কাস ময়দানে রাহুল গাঁধীর মঞ্চে যাওয়ার পরে আর আলিমুদ্দিন ছেড়ে বেরোননি। উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সম্পাদক গৌতম দেব তাঁকে অনুরোধ করেছিলেন, জেলার লোকাল কমিটির সব সদস্যকে নিয়ে ব্যারাকপুরে সাধারণ সভায় অন্তত বক্তৃতা করতে। আমি তো দিল্লিতে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে যাইনি— এই বলে গৌতমবাবুর অনুরোধ সবিনয় ফিরিয়ে দিয়েছেন বুদ্ধবাবু।

রাজ্য সম্পাদক সূর্যবাবুর অবশ্য দাবি, স্থানীয় স্তরে প্রতি দিনই কিছু না কিছু হচ্ছে। যা মিডিয়ার নজরে আসছে না। এর মধ্যে হতাশার কিছু নেই বলেও তাঁর দাবি। সূর্যবাবুর কথায়, ‘‘এই সরকারের সঙ্গে প্রথম বড় সংঘাত হবে ২ সেপ্টেম্বরের সাধারণ ধর্মঘট। এখন সংগঠনের সব স্তরে তারই প্রস্তুতি চলছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement