টেট পাশ চাকরিপ্রার্থীদের বিক্ষোভ। ফাইল চিত্র।
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু থেকে শুরু করে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি গৌতম পাল, সবাই বলেছেন, নিয়োগের জট ছাড়াতে ইচ্ছুক তাঁরা। সেই মতো স্বচ্ছ ভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু হচ্ছে।
যদিও ২০১৪ ও ২০১৭-র প্রাথমিকের টেট পাশ চাকরিপ্রার্থী—উভয়েরই অভিযোগ শুনে অনেকের মনে হচ্ছে, পুরনো জট ছাড়ানোর বদলে নতুন করে জট পাকাচ্ছে। ২০১৪-র চাকরিপ্রার্থীদের অধিকাংশ আগেই বলেছিলেন, তাঁরা ২০১৭-র টেট পাশেদের সঙ্গে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বসতে রাজি নন। প্রয়োজনে মামলায় যাবেন। বৃহস্পতিবার ২০১৭-র টেট পাশ চাকরিপ্রার্থীরাও জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরাও ২০১৪-র টেট পাশেদের সঙ্গে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বসতে অনিচ্ছুক। প্রয়োজনে তাঁরাও মামলা করবেন। আশঙ্কা, সত্যিই মামলা হলে থমকাতে পারে নিয়োগ।
২০১৪-র প্রশিক্ষিত টেট পাশ চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ, তাঁদের জন্য যে শূন্যপদ রয়েছে তা এখনও পূরণ হয়নি। তা হলে কেন তাঁদের নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে বলা হচ্ছে? তাঁদের আশঙ্কা, একসঙ্গে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হলে তাঁরা ২০১৭ সালের টেট পাশেদের থেকে অ্যাকাডেমিক স্কোরে পিছিয়ে পড়বেন। কারণ, ২০১৭-র টেট পাশেরা নতুন পাঠ্যক্রমে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে নম্বর বেশি পেয়েছেন। ফলে অ্যাকাডেমিক স্কোরের নিরিখে ২০১৪-র প্রার্থীদের চাকরির সুযোগ কমে যাবে।
অন্য দিকে ২০১৭-র টেট পাশেরা জানিয়েছেন, ২০১৪-র টেট পাশেরা ইতিমধ্যেই দু’বার ইন্টারভিউ দিয়ে ফেলেছেন। অথচ তাঁরা গত ছ’বছর ধরে বসে থেকে এখনও ইন্টারভিউ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাননি। ২০১৭-র টেট পাশ ঐক্যমঞ্চের আহ্বায়ক সাহারুপ আলম বলেন, “১১ হাজার নতুন যে নিয়োগ হবে, সেখানে ২০১৪-র টেট পাশেদের সুযোগই দেওয়া উচিত নয়। কারণ, ইতিমধ্যে দু’দফায় ২০১৪-র টেট পাশেদের মধ্যে ৬০ হাজারের বেশি নিয়োগ হয়ে গিয়েছে। অথচ আমরা এখনও ইন্টারভিউ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণই করতে পারিনি। এ বার নতুন নিয়োগে শুধু ২০১৭-র প্রার্থীদের সুযোগ দেওয়া হোক।”
পুরনো পাঠ্যক্রমের জন্য ২০১৪-র প্রার্থীদের অ্যাকাডেমিক স্কোর কম থাকার অভিযোগের জবাবে সাহারুপদের দাবি, তাঁদের সবাই যে নতুন পাঠ্যক্রমে পাশ করে এসেছেন, এমন নয়। অনেকেই আগের পাঠ্যক্রমে পরীক্ষা দিয়ে এসেছেন। তাঁদেরও অ্যাকাডেমিক স্কোর কম থাকবে। এক চাকরিপ্রার্থী বলেন, “আসলে বারবার নিয়োগের সুযোগ নিতে চাইছে ২০১৪-র টেট প্রার্থীরা।” ২০১৭-র চাকরিপ্রার্থীদের মতে, ২০১৪-র এমন অনেক চাকরিপ্রার্থী আছেন, যাঁরা আগে টেট পাশ করে পরে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এটা কিন্তু নিয়োগ-নীতি বিরুদ্ধ। আলাদা নিয়োগের দাবিতে মামলা করারও হুমকি দিয়েছেন সাহারুপ।
তবে উভয় চাকরিপ্রার্থীরাই একটি বিষয়ে একমত যে, নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ২০১৪ এবং ২০১৭-কে মিশিয়ে দিয়ে অযথা জটিলতা তৈরি করেছে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। তবে পর্ষদের সভাপতি গৌতম পালের কথায়, “যে নিয়োগ প্রক্রিয়া হচ্ছে, তা ১০০ শতাংশ নিয়ম মেনে স্বচ্ছতার সঙ্গেই হচ্ছে।”