সবুজ ধ্বংস: ঝাড়গ্রাম স্টেশনে। নিজস্ব চিত্র
শালগাছ বলি দিয়ে একের পর এক সরকারি ভবন হচ্ছে অরণ্যশহরে। উন্নয়নের কোপে এ বার ঝাড়গ্রাম স্টেশনের শতাব্দীপ্রাচীন অশ্বত্থও। যা দেখে পরিবেশকর্মীরা বলছেন, রাজ্য-কেন্দ্র কোনও সরকারেরই ফারাক নেই।
দিন দুয়েক আগে ঝাড়গ্রাম স্টেশনে এক ও দু’নম্বর প্ল্যাটফর্মের মাঝে থাকা প্রায় দু’শো বছরের পুরনো ওই অশ্বত্থ গাছটি কেটে ফেলা হয়েছে। টাটা-ঝাড়গ্রাম-খড়্গপুর তৃতীয় লাইনের কাজের জন্য গত বছরই কাটা হয়েছে কয়েক হাজার শাল ও অন্য বহু পুরনো গাছ। এ বার প্ল্যাটফর্মের পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য কাটা পড়ল প্রাচীন গাছও। ওই অশ্বত্থ গাছে নানা রকমের পাখির আস্তানা ছিল। রেলের নিয়োগ করা ঠিকাদারের লোকজন প্রায় গোড়া থেকে গাছটি কাটায় তারাও আশ্রয় হারিয়েছে। পাশের একটি পুরনো শিরিষ গাছও কেটে ফেলা হয়েছে।
বিষয়টি নজরে আসতেই সরব হয়েছেন ঝাড়গ্রাম শহরের পরিবেশকর্মীরা। ঝাড়গ্রামের বিশিষ্ট পরিবেশকর্মী তথা ঝাড়গ্রাম নাগরিক উদ্যোগের আহ্বায়ক শ্রীমন্ত রাউত বলেন, ‘‘পরিকাঠামো উন্নয়নের নামে এর আগে রাজ্য সরকার কয়েক হাজার শাল গাছ কেটেছে। এখন রেলের পরিকাঠামো উন্নয়নের নামে স্টেশন চত্বরের পুরনো গাছগুলিতে কোপ পড়ছে। গাছ কাটার ক্ষেত্রে তো দেখছি সব সরকারই এক।’’ অরণ্যশহরের বাসিন্দা পরিমল দে, সঞ্জীব মজুমদারের মতো অনেকেরই মত, গাছ না কেটেও উন্নয়ন করা যেত। স্টেশন চত্বরে সবুজ বাঁচানোর বার্তা দিয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে রেল মন্ত্রক। অথচ তারাই ঐতিহ্যের গাছগুলি কেটে ফেলছে।’’ হাজারিবাগ প্রবাসী বিশিষ্ট পক্ষী বিশারদ শিবশঙ্কর গোস্বামীর আদি বাড়ি ঝাড়গ্রাম শহরে। তিনিও বলেন, ‘‘দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। ওই পুরনো গাছে কয়েক হাজার পাখির আস্তানা ছিল। এ ভাবে গাছ কেটে বাস্তুতন্ত্রে কোপ মারা হয়েছে।’’
পরিবেশকর্মীরা ইতিমধ্যে ঝাড়গ্রাম রেল স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকের সঙ্গে দেখা করেছেন। পরিবেশকর্মী শ্রীমন্ত রাউত জানান, এ ব্যাপারে তাঁরা ফের জেলা ও রেল প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন। রাস্তায় নেমে আন্দোলন হবে। স্টেশন চত্বরেও জমায়েত-বিক্ষোভ হবে। রেল সূত্রে খবর, নতুন প্যানেল ভবন তৈরির জন্যই দুটি গাছ কাটা হয়েছে। আরও কয়েকটি গাছ কাটার সিদ্ধান্ত হয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ‘‘তৃতীয় লাইন সম্প্রসারণের জন্য স্টেশনে কিছু প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোর উন্নয়ন করা হচ্ছে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও প্ল্যাটফর্মে একটি প্যানেল ভবন তৈরির জন্য গাছ কাটতে হয়েছে।’’ তাঁর আশ্বাস, যত সংখ্যক গাছ কাটা হয়েছে, তার থেকে অনেক বেশি গাছ লাগানো হবে।
তবে এতে বিশেষ ভরসা করতে পারছেন না অপরাজিতা ষড়ঙ্গী, সৌরভ মুদলির মতো শহরের পরিবেশকর্মীরা। তাঁরা বলছেন, জেলা জুড়ে পরিকাঠামো উন্নয়নের দোহাই দিয়ে হাজার হাজার শালগাছ ও অন্য বহু পুরনো গাছ আগেই কেটে ফেলা হয়েছে। কিন্তু বিকল্প সবুজায়ন হয়নি।