গায়ে আগুন দিয়ে শেষ বয়ান ধর্ষিতার

মেয়েটির অন্তিম বয়ানের ভিত্তিতেই পুলিশ বারুইপুর থানা এলাকা থেকে শেখ ইমরান এবং লালচাঁদ সিপাই নামে দুই যুবককে গ্রেফতার করে। মেয়েটির অভিযোগ, ইমরান তাকে একাধিক বার ধর্ষণ করেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৮ ০৪:৪৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

গত এক বছর ধরে প্রতিবেশী যুবক বারবার ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ, মুখ খুললে ফল মারাত্মক হবে বলে শাসিয়েছে। লাগাতার এই মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে নিজের গায়ে আগুন দিয়েছিল কিশোরী। শুক্রবার এম আর বাঙুর হাসপাতালে মারা গিয়েছে সে। কিন্তু তার আগে মৃত্যুকালীন জবানবন্দিতে সে তার উপরে নির্যাতনের কথা এবং ধর্ষকের নামধাম বলে গিয়েছে পুলিশকে।

Advertisement

মেয়েটির অন্তিম বয়ানের ভিত্তিতেই পুলিশ বারুইপুর থানা এলাকা থেকে শেখ ইমরান এবং লালচাঁদ সিপাই নামে দুই যুবককে গ্রেফতার করে। মেয়েটির অভিযোগ, ইমরান তাকে একাধিক বার ধর্ষণ করেছে। শাসানি দিয়ে গিয়েছে লালচাঁদ। পুলিশ দু’জনের বিরুদ্ধেই পকসো আইনে মামলা করেছে। যোগ করেছে আত্মহত্যায় প্ররোচনার ধারাও। সাক্ষ্য আইনে মৃত্যুকালীন জবানবন্দির গুরুত্ব বিরাট। এর আগে ২০১৩ সালে মধ্যমগ্রামে ধর্ষিতা কিশোরী দগ্ধ অবস্থায় মৃত্যুর আগে পুলিশকে তার যাবতীয় অভিযোগ নিজের মুখে জানিয়ে গিয়েছিল।

শুক্রবার মৃত কিশোরীর বাড়ি বারুইপুরে খোদাবাজার এলাকার গোলপুকুরে। পুলিশ সূত্রে খবর, ২৯ জুন ইমরান ওই কিশোরীকে শেষ বার ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। ওই দিনই সন্ধ্যায় গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় ওই ছাত্রী। গুরুতর জখম অবস্থায় তাকে এম আর বাঙুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

Advertisement

পুলিশের কাছে মেয়েটির মা তখন অভিযোগ করেন, তাঁর মেয়েকে এলাকার এক যুবক উত্ত্যক্ত করত। সেই চাপেই মেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। কিন্তু মা কারও নাম করেননি। পরে পুলিশের কাছে জবানবন্দিতে ১৭ বছরের স্কুলছাত্রীটি তার উপরে দীর্ঘমেয়াদি নির্যাতনের বিবরণ দেয়। ইমরান আর লালচাঁদের নামও বলে। মাস দুয়েক আগে একবার মুখ খুলতে চাইলে তাকে মারধর করা হয়েছিল বলেও দাবি করে মেয়েটি।

বারুইপুর জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, মেয়েটির বয়ানের ভিত্তিতেই পকসো মামলা রুজু হয়। শুক্রবার মেয়েটির মৃত্যুর পরে জুড়ে যায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার ধারাও। ওই দিনই ইমরানদের গ্রেফতার করে বারুইপুর আদালতে তোলা হয়। দু’জনেরই পুলিশি হেফাজত হয়েছে।

কিশোরীর বাবা দিনমজুর। মা বারুইপুর পুরসভায় সাফাইকর্মীর কাজ করেন। তাঁরও অভিযোগ, ইমরান একাধিক বার তাঁর মেয়েকে ধর্ষণ করেছে। প্রতিবাদ করলে প্রাণে মেরে ফেলার শাসানি দিত সে। ভাড়াবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে দেওয়ার হুমকিও দিত। এই ক’দিনেও পকসো আইনে মামলা রুজু হওয়ার পরে ইমরানের শাগরেদ লালচাঁদ একাধিক বার মামলা তুলে নেওয়ার জন্য শাসানি দেয় বলে অভিযোগ। তবে লালচাঁদের স্ত্রীর দাবি, ‘‘আমার স্বামী কোনও ভাবেই জড়িত নন। ওঁকে ফাঁসানো হয়েছে।’’

আগে কোনও দিন ওই কিশোরী ইমরানের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ করেছিল কি? খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এলাকায় জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তদন্তকারীরা। মেয়েটির পরিবারে অনটন ছিল। সেই সুযোগে ইমরান তাকে লোভ দেখিয়ে নানা জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যেত। বছরখানেক ধরে সে মেয়েটিকে ধর্ষণ করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। পুলিশ সূত্রে দাবি, ইমরান বারুইপুরের নানা জায়গায় বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের থাকার ব্যবস্থা করে দিত বলেও অভিযোগ মিলেছে। এ বিষয়ে তার বাড়িওয়ালার কাছেও খোঁজখবর নিচ্ছে পুলিশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement