প্রতীকী ছবি
শমসেরগঞ্জের নিমতিতা ও সুতির জগতাই ১ ও ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের সমস্ত গ্রামে ১৪৪ ধারা জারি করল প্রশাসন। ইতিমধ্যেই নিমতিতা স্টেশনে ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া ও দফাহাটে লুটপাট করে আগুন লাগিয়ে একাধিক দোকান পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় ১৮ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আরও শতাধিক অভিযুক্তের তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। শমসেরগঞ্জ ও সুতি— দুই থানা এলাকাতেই চলছে তল্লাশি অভিযান। শনি ও রবিবার দু’দিন ধরেই আন্দোলনের নামে নিমতিতা স্টেশন ও দফাহাটে তাণ্ডব চলেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
পুলিশের দাবি, পরিস্থিতি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। তবুও যাতে পরবর্তীতে আইন-শৃঙ্খলার কোনও অবনতি না হয় সে জন্য জঙ্গিপুরের এসডিপিও প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে ওই এলাকায় পাঠানো হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার স্টেশন লাগোয়া সুতির দফাহাটে একাধিক বাড়িতে লুটপাট চলে। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় বহু দোকানে।
ওই এলাকায় পুলিশি টহল চলছে। এসডিপিও জানান, ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে ওই দুই এলাকার সমস্ত গ্রামে। তাই কোথাও কোনও জটলা বা জমায়েত দেখলেই সঙ্গে সঙ্গেই তাঁদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রবিবারের লুটপাট ও অগ্নিকাণ্ডের পরে বিড়িশিল্প শহর অরঙ্গাবাদ সোমবার ছিল বেশ থমথমে। এ দিন অরঙ্গাবাদে সর্বদল ও সর্বধর্মের মানুষজনকে নিয়ে শান্তি সভা করা হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী তৃণমূলের জাকির হোসেন, কংগ্রেস বিধায়ক হুমায়ুন রেজা। তার পরেই ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।
এ দিকে পুলিশ গত ক’দিনে জঙ্গিপুর মহকুমা জুড়ে হিংসাত্মক ঘটনার পিছনে স্থানীয় নেতৃত্ব ও তাঁদের জনসংযোগের ঘাটতিকে অনেকাংশেই দায়ী বলে মনে করছে। জেলার এক পুলিশ কর্তা জানাচ্ছেন, সুতি ও শমসেরগঞ্জের সমস্ত পঞ্চায়েত শাসক দল তৃণমূলের দখলে। তবুও নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের রাশ কী ভাবে উচ্ছৃঙ্খল যুবকদের হাতে গেল সেটাই বিস্ময়ের।
ওই পুলিশ কর্তা বলেন, ‘‘অশান্তি ও যে কোনও গন্ডগোল থামাতে পুলিশ গ্রামে গেলে সাধারণ ভাবে পঞ্চায়েত সদস্যদের সাহায্য নেয়। কারণ, ভোটে জেতা পঞ্চায়েত সদস্যদের স্থানীয় লোকজনের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকে। কিন্তু পুলিশ এখন সেই সাহায্য সে ভাবে তাঁদের কাছে পাচ্ছে না।
সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সোমনাথ সিংহ রায়ের কটাক্ষ, ‘‘বেশিরভাগ পঞ্চায়েক সদস্য তো জনগণের ভোটে জেতেননি। গায়ের জোরে ভোটে না লড়েই জিতেছেন। তাই এলাকার জনগণের উপর তাঁদের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। যাঁদের কাজে লাগিয়ে জোর করে পঞ্চায়েতে ভোটে জিতেছে তাঁরাই এখন শাসক দলের পঞ্চায়েত নেতাদের পরোয়া না করেই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তাই তাঁদের তাণ্ডব নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ পুলিশ ও শাসক দলের নেতারা।’’
যা শুনে তৃণমূলের জঙ্গিপুর মহকুমা সভাপতি বিকাশ নন্দ বলছেন, ‘‘এটা মানুষের মরণ-বাঁচন লড়াই। সেই কারণেই ব্যাপারটা আটকানো যায়নি। এর সঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনের কোনও সম্পর্ক নেই।’’