গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান
গাত্রহরিদ্রা বা গায়ে হলুদ। ভারতীয় বিয়ের এক গুরুত্বপূর্ণ রীতি। বর বা কনে তো বটেই, বাড়ি সুদ্ধ সবাই মিলে হইচই করে হলুদ মাখামাখি, সে এক দারুণ আনন্দের অনুষ্ঠান। তবে গায়ে হলুদের এই রীতির কিন্তু একাধিক তাৎপর্য রয়েছে। বরপক্ষ এবং কনেপক্ষের বাড়ির বিবাহিত নারীরা এই অনুষ্ঠান করে থাকেন নতুন বর বা কনের জন্য। মূলত কাঁচা হলুদ বাটা ব্যবহার করা হয়। বরের গায়ে ছোঁয়ানো হলুদ দিয়ে আরম্ভ হয় কনের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান। সঙ্গে থাকে নানা উপহার। কোনও কোনও ক্ষেত্রে আবার বর কনের একসঙ্গে গায়ে হলুদের রীতিও রয়েছে।
ভারতীয় সংস্কৃতি অনুসারে হলুদ আশীর্বাদের প্রতীক। মনে করা হয় শুভ ও ইতিবাচক হলুদের সংস্পর্শে নেতিবাচক শক্তি দূর হয়। বর-কনেকে কুদৃষ্টি থেকে রক্ষা করে ও ইতিবাচক শক্তির সঞ্চার হয়। পাত্র-পাত্রীর দীর্ঘ ও স্বাস্থ্যকর দাম্পত্য জীবনের উদ্দেশ্যে এই আশীর্বাদ। কারণ হলুদ যে শুভ ও মঙ্গলদায়ক।
হলুদ আশীর্বাদের প্রতীক
পাশাপাশি হলুদের আয়ুর্বেদিক গুরুত্বও রয়েছে। ত্বককে উজ্জ্বল করে তুলতে তা বিশেষ ভাবে উপকারি। ত্বকের মৃত কোষ সরিয়ে তাকে আরও ঝলমলে করে তোলে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কাঁচা হলুদ প্রাকৃতিক জীবাণুনাশক। শরীরে তাপের ভারসাম্য রাখা, শরীরকে পরিষ্কার রেখে সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করা তার গুণাগুণ। বিয়ের দিন বর-কনে উপোস করে থাকেন- শরীর জুড়ে ক্লান্তি, মনের মধ্যে উদ্বেগ। হলুদের স্নিগ্ধতা এগুলি কমিয়ে, মনকে শান্ত ও শুদ্ধ করে তোলে।
অন্য দিকে আবার জ্যোতিষশাস্ত্রীয় তাৎপর্যও রয়েছে এই অনুষ্ঠানের। মনে করা হয়, হলুদ দেবগুরু বৃহস্পতির সঙ্গে সম্পর্কিত। বিয়ের অনুষ্ঠান যাতে অনুকূল ও মঙ্গলদায়ক হয়, সে কারণেই এই গায়ে হলুদ বেশ গুরুত্বপূর্ণ। গায়ে হলুদে সাধারণত ১০ থেকে ১২টি ডালায় বিভিন্ন জিনিসপত্র সাজিয়ে দেওয়া হয়। প্রয়োজন অনুসারে সেই সংখ্যা বাড়ানোও যেতে পারে। বরের বাড়ি থেকে কনের বাড়িতে গায়ে হলুদের তত্ত্ব পাঠানোর আচার তো রয়েছেই।
এই প্রতিবেদনটি 'সাত পাকে বাঁধা' ফিচারের অংশ।