CPM

Bengal Polls: রাজ্য রাজনীতিতে সদ্য উত্থিত নব্য বাম রাজনীতি কি অভিমুখ বদলাবে?

আগামী দিনে উন্নততর বামফ্রন্ট গড়তে হলে আমেরিকার কালো হাত গুঁড়িয়ে দিলে চলবে না, বরং কিছু ক্ষেত্রে সেই বাড়ানো হাত ধরতে হবে।

Advertisement

সুদীপ দত্ত, শুভময় মৈত্র

শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২১ ১৩:৪১
Share:

এই নির্বাচনে ‘কাজের মানুষ’ হিসেবে কয়েক জন যুবক যুবতীর দিকে লক্ষ রাখছেন ভোটমুগ্ধ বাঙালি।

বাংলার রাজনীতির যা মান, তাতে ভোঁতা শব্দের ধার বেশি। ‘হাঁদারাম’ থেকে ‘হোঁদল কুতকুত’ পর্যন্ত বিস্তৃত ঘটমান বর্তমান বঙ্গযুদ্ধে একমাত্র অস্ত্র বাঁটুল। কোদালকে কলম দিয়ে রুখে দেওয়ার গল্প আপাতত শেষ। কালি শুকিয়েছে, কলমের 'ক' অক্ষর নিরামিষ গাছপাঁঠা। সেই কারণেই সকালে আর বিকেলে ২ তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিপক্ষের হয়ে পথপ্রান্তে মহিমা বিতরণ করে যান অভিনেত্রী। আমরা হাঁ করে দুটো মিছিলই গিলি। নেহাত ‘গিলি গিলি গে’ উচ্চারণে একই বৈদ্যুতিন ভোটযন্ত্রের বৃন্তে ২টি বোতাম একসঙ্গে টেপা মুশকিল। না হলে হারিয়ে যাওয়া মনের সায় ছিল। কেউ যদি বলেন, রাজনীতির একটা কাজ জনগণকে ধোঁকা দেওয়া, সে ক্ষেত্রে বাংলার জনগণের যে বিপুল প্রাপ্তি, আর তার ব্যকরণ মানা ক্রিয়াপদের যা বিশাল ব্যাপ্তি, তাতে কোনও কাজই খারাপ নয়। তবে বাঙালির এখন ক্রিয়াপদ থেকে ‘ভাবা’ বাদ দেওয়াই ভাল। সে ক্ষেত্রে ঘুমনো যাবে অনেক নিশ্চিন্তে। তবে আধোঘুমের আবিল্যিতে একটা কথা কিন্তু মনে পড়বেই। আজকের রাজনীতির আঙিনায় পঞ্চাশোর্ধ্ব যাঁদের দেখছেন, তাঁদের মধ্যে অল্প কয়েকজন বাদ দিলে সবাই এক সময়ের পুরনো অতিবাম, বামফ্রন্ট কিংবা কংগ্রেস থেকে শুরু করে আজকের বিজেপি কিংবা তৃণমূল। অল্প ক’জন বাম বামে রয়ে গেছেন, কংগ্রেস কংগ্রেসে। নতুন আমদানি ধর্ম নিরপেক্ষ জোট। আর গত এক দশকে বিবর্তনের পথ দেখাচ্ছেন একঝাঁক নবীন অভিনেতা অভিনেত্রী। অভিনয় করলে রাজনীতির বোধ থাকতে নেই, এমন কথা কেউ লিখে দেয় নি। অধিক আলোচনায় আবার সলিল-উৎপল কিংবা সৌমিত্র-মৃণাল নিয়ে টানাটানি হবে। সেই মতানুসারী কয়েক জন অভিনেতা অভিনেত্রী আজও আছেন বাম দলগুলিতে, অথবা তার বাইরে নির্দল স্বতন্ত্র ভাবনায়। তবে তাঁরা নগণ্য।

Advertisement

অন্য দিকে, অনেক বেশি প্রচারের আলোয় বেশ কয়েক জন অভিনয় জগতের কলাকুশলী, যাঁরা এ বার মূল ২ দলের প্রার্থী হিসেবে আসরে অবতীর্ণ। এঁদের অনেকের সকাল বিকেল পাণ্ডব কৌরব গুলিয়ে যাচ্ছে। রাজপথ থেকে গঙ্গাবক্ষে ২ বিরোধী দলের প্রার্থীরা মিশে যাচ্ছেন মাঝে মধ্যেই। ‘রাজনৈতিক সৌজন্য’ বলে যুক্তি সাজানো যায় বই কি! তবে অন্য মত বলবে, যে ভাবে সকাল বিকেল এক ছায়া মাড়িয়ে অন্য ছবিতে অভিনয় সম্ভব, রাজনীতিও এঁদের কাছে তাই। শুধু কাজ নয়, কাজের কাজ। সারমর্ম হল, যাঁরা রাজনীতিতে নতুন কিছুর আশা করছেন, তাঁদের মনে করিয়ে দেওয়া ভাল যে অধিকাংশই পুরনো। আর যে নবীন কিংবা কাঁচাদের দেখছেন, তাঁদের বেশির ভাগটা রাজনীতি-হীনতাকেই উচ্চে তুলে নাচাচ্ছেন।

অন্য দিকে এই নির্বাচনে ‘কাজের মানুষ’ হিসেবে কয়েক জন যুবক যুবতীর দিকে লক্ষ রাখছেন ভোটমুগ্ধ বাঙালি। তাঁরা বেশির ভাগই বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বাম দলগুলির হয়ে। অনেকের আশা, রাজনীতি ভাবনায় এঁরা শেষ এক বা দুই দশকের বামফ্রন্ট সরকারের থেকে আলাদা হবেন। দিশা দেখাবেন উদারবাদী গণতন্ত্রের। তাই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বাঙালি কথা শুনছেন এই নবীন প্রজন্মের। সেখানেই উঠে আসছে কিছু প্রশ্ন, কিছু আলোচনা। "বর্ধমান আর নন্দীগ্রামের খিদে কি আলাদা?" ইউটিউবে মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের ভাষণে এই প্রশ্নটা দাগ কেটেছে অনেকের মনে। একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠবে, "নন্দীগ্রাম আর নিউ-ইয়র্কের খিদে কি আলাদা?" আপাতদৃষ্টিতে পশ্চিমবঙ্গীয় বামফ্রন্টের অতীত ভাবধারা দেখলে তা মনে হওয়া স্বাভাবিক। আমেরিকা যেন অন্য গ্রহের কোনও একটি উপত্যকা, যার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের সম্পর্ক জন্মগত ভাবে সাপে-নেউলে। আর তাই আমেরিকার কালো হাত ভেঙে দেওয়া বা গুঁড়িয়ে দেওয়াই পশ্চিমবঙ্গের মুক্তির একমাত্র পন্থা। ছোটবেলায় আমরা এই স্লোগানের সঙ্গে বড় হয়েছি, হয়তো আঠেরোর উদ্দাম উল্লাসে গলাও মিলিয়েছি। আজকের এই ৫০ পার করা আমরা কিন্তু বুঝতে পারছি, সেই বঙ্গীয় বাম আন্দোলনের তত্ত্ব এবং তথ্য কুয়োর ব্যাঙের গণ্ডির বাইরে বেরতে পারেনি।

Advertisement

অভ্যন্তরীণ নীতি এবং সামাজিক প্রগতিশীলতা যদি নৈকট্যের মাপকাঠি হয়, তাহলে সিপিএমের থেকে বড় আমেরিকা ঘেঁষা দল ভূ-ভারতে নেই। —ফাইল চিত্র।

যুক্তির আশ্রয় নিতে আমেরিকার উদাহরণ আঁকড়ে কিছু কথা বলতেই হচ্ছে। সেটি অবশ্যই অন্যান্য অনেক দেশের মতোই বৈপরীত্যে ভরা রাষ্ট্র। ইতিহাসের আর পাঁচটা সাম্রাজ্যের মতো তারও একটা আগ্রাসী চেহারা আছে। সে রূপ অত্যন্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং সময়ে সময়ে সর্বগ্রাসী। আবার উল্টো দিকে, তার একটা মানবিক দিকও আছে। ভিয়েতনাম, ইরাক বা লাতিন আমেরিকা— যেখানেই আমেরিকার ভূমিকা ছিল নিন্দনীয়, সেই নিন্দার বহুলাংশ এসেছে আমেরিকার মধ্যে থেকেই। তাই যতই আমেরিকাকে ধনতন্ত্রের রক্ষাকর্তা হিসেবে তুলে ধরা হোক না কেন, তার বহুত্ববাদকে অস্বীকার করাটাও ইতিহাস বিভ্রম। এখানে অবশ্য ইতিহাসকে একটু গুরুত্ব দিয়ে বিচার করা হচ্ছে। তা মোটেই সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের অষ্টম শ্রেণির পাঠ্য ইতিহাস নয়, যা দল বদলালেই বদলে যায়। বর্ণবৈষম্য, লিঙ্গবৈষম্য, বেতনবৈষম্য, সকলের ভোটাধিকার— বিভিন্ন ইস্যুতে এবং নাগরিক অধিকারের দাবিতে আমেরিকার নাগরিকেরা রাস্তায় নেমেছেন বার বার, মতপোষণ করেছেন দৃঢ়তার সঙ্গে, শ্লোগান তুলেছেন উচ্চকণ্ঠে। ইন্টারনেটের যুগে সেই সব মত প্লাবনের আকার নিয়েছে এবং নিচ্ছে। তার সব কিছুই যে পূর্ণমাত্রায় গৃহীত হচ্ছে, এমনটা নয়। কিন্তু সেই মার্টিন লুথারের আমল বা তার আগে থেকে আমেরিকা ধীরে ধীরে, ধাপে ধাপে এগিয়েছে এবং দেখিয়েছে যে, কোনও বিষয়ে ইচ্ছুক এবং অনিচ্ছুক— উভয়ের মতামত গ্রহণ করে এগোনোই দ্বন্দ্বমূলক বিবর্তন। সর্বোপরি, আমেরিকার প্রগতিশীলতার মূলে নিহিত আছে রাষ্ট্র ও ধর্মের পৃথকীকরণ। রাষ্ট্রের সঙ্গে ধর্মকে মেশালে যে আখেরে ভাল হবে না, সে কথা টমাস জেফারসন বুঝেছিলেন ২ শতাব্দীরও আগে।

ফেরা যাক নিজেদের উঠোনে। ভারতের সাধারণ মানুষকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, এখানকার মার্কিন বিরোধী মূল রাজনৈতিক দল কোনটি, তাহলে অতিবামদের বাদ দিলে হয়ত সিপিএম বা বৃহত্তর বামফ্রন্টের নাম উঠে আসবে। আর আমেরিকার ‘কাছের দল’ বলতে কংগ্রেস কিংবা বিজেপি। কিন্তু রাজনীতির সেই অঙ্ক একেবারে গোদা। বিদেশনীতি বাদ দিয়ে শুধু দেশের অভ্যন্তরীণ নীতি এবং সামাজিক প্রগতিশীলতা যদি নৈকট্যের মাপকাঠি হয়, তাহলে সিপিএমের থেকে বড় আমেরিকা ঘেঁষা দল ভূ-ভারতে নেই। কিন্তু আমেরিকা নামক কল্পিত জুজু না থাকলে অনেক সময় আন্দোলন দানা বাঁধে না। সেখানেই বাধ্যবাধকতা বিলেত ফেরত ১৯৭০-এর দশকের বাম নেতাদের, সেখানেই স্বল্পদর্শিতা ৩৪ বছরের বাম সরকারের একটা বড় অংশের। অবশ্যই গ্রামের কৃষক কিংবা শহরের খেটে খাওয়া মানুষ মার্কিন দেশ নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামান না। তবে বাম সমর্থক কলকাতার শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় যে এই অন্ধ মার্কিন বিরোধিতা এড়িয়ে যান, তা পরিষ্কার। আজ তাঁদের বৃহত্তর পরিবারের অনেকেই কর্মসূত্রে ও দেশে। উপরন্তু বাঙালিদের বরাবর ফার্স্ট বয় বা গার্লের সাফল্যের প্রতি দুর্বলতা আছে। আমাদের শৈশবের বেশ কিছু সময় কেটেছে "অমুকের মতো হয়ে পারিস না?" শুনতে শুনতে। সাম্প্রতিক কালে চিনের দ্রুত উত্থান মেনে নিয়েও তাই বলতে হয় যে রাষ্ট্র হিসেবে আমেরিকা এখনও ‘ফার্স্ট বয়’। যতই চারদিকে মার্কিন সাম্রাজ্যের নিপাত যাওয়ার স্লোগান উঠুক না কেন, মধ্যবিত্ত বাঙালি জানে তার রোজগার এবং রোজকারের প্রিয় হোয়াটসঅ্যাপ আর গুগল-এর দেশ আমেরিকা। তার কল্যাণেই কলকাতায় বসে দাদু তার নাতি-নাতনির জন্মের ছবি দেখতে পান। তাই আজকের নবীন বাম নেতৃত্বকে মনে করিয়ে দেওয়া দরকার যে, পশ্চিমের দেশগুলির প্রতি অহেতুক গালমন্দ রাজনৈতিক অপরিপক্বতা ছাড়া আর কিছুই নয়।

আজ পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রন্ট তারুণ্যের উপর ভর করে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে।

ছোটবেলায় বাসে করে যেতে যেতে দেওয়ালে নানা রাজনৈতিক লেখা পড়তাম আমরা। তার মধ্যে সব থেকে বেশি দেখা যেত ‘অমুক কারণে দিকে দিকে বামফ্রন্ট প্রার্থীদের ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করুন’। কারণগুলো কী? ‘ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ’, ‘ন্যূনতম মজুরী’, ‘নিত্য প্রয়োজনীয় ১৪টি দ্রব্যের দাম’, ‘সকলের জন্য শিক্ষা’, ইত্যাদি। প্রচুর ভারী ভারী কথাগুলো। বেশির ভাগ লোক বোঝার চেষ্টাও করতেন না সবটুকু। কারণ, ভারতের রাজনীতি বরাবরই মৌলিক বা তাত্ত্বিক আলোচনার তুলনায় অনেক বেশি নির্বাচন সর্বস্ব। কিন্তু মার্কিন দেশে বিষয়টা অনেক ক্ষেত্রে তাত্ত্বিক থেকে ফলিত স্তরে উত্তরণের। ক্যাপিটেশন ফি নেওয়া বেসরকারি স্কুল নয়, আমেরিকার পাড়ায় পাড়ায় অবৈতনিক স্কুলগুলোই সকলের জন্য শিক্ষার স্তম্ভ। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের প্রয়োগ আমেরিকায় খুঁজে পাওয়া যায় প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে। সেখানে নির্দিষ্ট করা আছে ফেডারেল, স্টেট, কাউন্টি এবং সিটি-র ক্ষমতা। রাজ্যে যিনি পৌরসভাতেও তিনি, অথবা কেন্দ্র-রাজ্য ‘ডবল ইঞ্জিন’ সরকার, ইত্যাদি না হলেও সেই ব্যবস্থা সুষ্ঠু ভাবেই চালু থাকে। বামফ্রন্ট আমলে লাগু হওয়া পশ্চিমবঙ্গের ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা সেই বিকেন্দ্রীকরণের ভাবধারারই অনুসারী। গত কয়েক বছরে বিজেপি শাসিত ত্রিপুরা অথবা তৃণমূল শাসিত পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে যে ধরনের প্রশ্ন উঠছে, তা মার্কিন দেশে কল্পনাই করা যায় না। বামপন্থীরা এ বার বলছেন দিনে ৭০০ টাকার উপরে মজুরির কথা। ন্যূনতম মজুরি অবশ্যই ২০২০-র মার্কিন নির্বাচনে অন্যতম বড় ইস্যু ছিল। কেন্দ্রীয় স্তরে অপরিবর্তিত থাকলেও ওয়াশিংটন, ক্যালিফোর্নিয়া, নিউ জার্সি সহ ২৫টি স্টেট তা ইতিমধ্যেই কার্যকরী করেছে। আমেরিকার বর্তমান সমস্যাগুলোর মধ্যে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সংক্রান্ত খরচ অন্যতম। ইউরোপের মতো এখানে ওষুধের বা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ হয় না। ওবামার সময় সাধারণ মানুষের সুবিধের জন্যে চালু হয়েছিল তথাকথিত ওবামা-কেয়ার। যদিও তা নিয়ে প্রচুর বিতর্ক দেখা দেয় এবং ট্রাম্প এসে বিষয়টি বাতিল করেন। এ বারের নির্বাচনে না হলেও আগামীর মার্কিন নির্বাচনগুলিতে আবার ফিরে আসতে পারে এই ইস্যু। বিশেষ করে, কোভিড পরিস্থিতির ভয়াবহতার নিরিখে বিশ্বজুড়ে চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং তাতে সরকারের ভূমিকা নতুন ভাবে ভাবার আশু প্রয়োজন রয়েছে।

আজ পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রন্ট তারুণ্যের উপর ভর করে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে। কিন্তু তারুণ্য শুধু চুলের রঙে নয়, মনের রঙে আসাটাও আবশ্যিক। মোদ্দা কথা হল, দুনিয়ার মজদুর এক হোক আর না হোক, বিশ্বায়নের যুগে দুনিয়ার অনেক সমস্যাই এক। হয়ত সমস্যাগুলির মধ্যে সূক্ষ্ম তারতম্য বা স্থানীয় প্রভেদ আছে। কিন্তু উদারবাদী গণতন্ত্রের জনমুখী প্রেক্ষিতটুকু মোটামুটি একই। পশ্চিমবঙ্গে এ বার বামপন্থীদের ক্ষমতায় আসা কঠিন, তবে আগামী দিনে দেশ বা রাজ্যে উন্নততর বামফ্রন্ট গড়তে হলে আমেরিকার কালো হাত গুঁড়িয়ে দিলে চলবে না। বরং কিছু ক্ষেত্রে সেই বাড়ানো হাত ধরতে হবে। ফার্স্ট গার্ল বা বয়ের বিরুদ্ধে আস্ফালনে অন্ধ আবেগ থাকতে পারে, কিন্তু তাতে সাফল্য মেলে না। বরং কিছু ক্ষেত্রে এটাই মঙ্গলের হতে পারে যে, প্রথম বিশ্বের সঙ্গে আমাদের চিন্তাধারাও কিছুটা কাছাকাছি। শতরূপ, মিনাক্ষী, দীপ্সিতা, সৃজন, এই শব্দগুলো এক একটা নামের থেকেও বড় হয়ে দাঁড়াবে, যে দিন তাঁরা দলের নিদান অতিক্রম করে বলতে পারবেন, উদারবাদী গণতন্ত্রের পথটা পশ্চিমী প্রথম বিশ্বকে অস্বীকার করে সম্ভব নয়। বিভিন্ন কারণে আজকের রাজনীতিতে একটি বিশেষ জায়গা তৈরি হয়েছে এঁদের জন্যে। তবে নবীন নেতৃত্বের আবিষ্কারে নতুন ভাবনাকে সঙ্গী হতে না দিলে নির্বাচনী সাফল্য ততটা সহজ নাও হতে পারে।

তৃণমূল বা বিজেপির অনেক উচ্ছ্বল অভিনেতা অভিনেত্রীর থেকে আজকের দিনে উজ্জ্বলতর বাম যুব নেতৃত্ব।

সেই সঙ্গে সম্ভাবনা থাকবে জনমানস থেকে অকালে হারিয়ে যাওয়ারও। তৃণমূল বা বিজেপির অনেক উচ্ছ্বল অভিনেতা অভিনেত্রীর থেকে আজকের দিনে উজ্জ্বলতর বাম যুব নেতৃত্ব। তাঁরা একটু চোখ মেলে দেখবেন কি? এঁরা সঠিক ভাবে আলোকিত হলে তবেই তো সে আলো প্রতিফলিত হবে আগামীর রাজনীতিতে, জনমুখী ভাবনায়। কাকতালীয় বিষয় হল, এই লেখা শুরু করার দিনই মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের একটি বক্তব্যে শোনা গেল স্ট্যাচু অফ লিবার্টির উল্লেখ। আর সেই সূত্র ধরেই আঁকতে হয় বালিকা জিনা ফ্লয়েডের সামনে হাঁটু গেড়ে বসা জো বিডেনের ছবি। জিনার বাবা তখনই বদলাতে পারেন এই পৃথিবীকে, যখন জগৎ-সম্রাট মাথা নত করেন রাষ্ট্রের ভুল স্বীকারে। সেই রকম পৃথা বা ঐশীদের দেশ চালানোর স্বপ্ন দেখছি আমরা। যাঁরা দেশ গড়ার সঙ্গে সঙ্গে নতজানু হয়ে ক্ষমা চাইতে জানবেন উদারবাদী গণতন্ত্রের পরিধিতে।

(সুদীপ দত্ত সানফ্রান্সিসকোয় কর্মরত প্রযুক্তিবিদ। শুভময় মৈত্র ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক। মতামত ব্যক্তিগত।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement