সম্পাদনা: সৈকত
৫ জানুয়ারি, সরবেড়িয়ায় তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের বাড়িতে ইডি অভিযান। ‘পিটিয়ে’ ফেরত পাঠান হল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকদের। রক্তপাতের সেই শুরু। তারপর? ‘আগুন’ আর ‘আন্দোলন’। শেখ শাহজাহান এবং তাঁর দুই শাগরেদ শিবপ্রসাদ হাজরা এবং উত্তম সর্দারের বিরুদ্ধে গর্জে উঠল সন্দেশখালি। বিঘার পর বিঘা জমির দখল! উর্বর জমিতে নোনা জল ঢুকিয়ে ভেড়ি বানানো! প্রতিবাদ করলেই মারধর শাসানি! নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধেও। উত্তাল পরিস্থিতির মধ্যেই সামনে এল গণধর্ষণের মতো অভিযোগও। তড়িঘড়ি গ্রেফতার শিবু এবং উত্তম।
শাসক যখন কোণঠাসা তখন রাজনীতির এই উর্বর জমিতে ‘ইস্যু’ বুনতে শুরু করল বিরোধীরাও। সুন্দরবনের সবুজদীপে আনাগোনা বাড়ল সুকান্ত-শুভেন্দুদের। গেলেন মিনাক্ষীও। জমি ফিরে পেতে এলাকা অভিযানে তৃণমূল বিধায়ক সুকুমার মাহাতো। কিন্তু প্রশ্ন, কোথায় সাংসদ?
প্রায় দু’মাস ধরে সন্দেশখালি যখন জ্বলছে, সাংসদ নুসরত জাহানের জীবনে তখন ‘বসন্ত’। এলাকার মানুষ ভুলেই গিয়েছেন তাঁদের সাংসদকে কেমন দেখতে। অনেকে এমনও বলছেন, নুসরত জাহানকে তাঁরা অভিনেত্রী হিসাবেই চেনেন। যদিও সোশাল মিডিয়ায় নিজের মত ব্যক্ত করে সন্দেশখালির মানুষকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছেন, তিনি আছেন এবং সব দেখছেন! সম্প্রতি এক্স হ্যান্ডেলে একটি দীর্ঘ পোস্টে নুসরত জাহান লিখেছেন, ‘‘একজন মহিলা এবং জনপ্রতিনিধি হিসাবে আমি সব সময় দলীয় অনুশাসন মান্য করেছি। সন্দেশখালির ঘটনায় ইতিমধ্যেই আমাদের মুখ্যমন্ত্রী উপযুক্ত পদক্ষেপ নিয়েছেন। আমি সন্দেশখালির মানুষের সুখে, দুঃখে আছি। আমি বিশ্বাস করি রাজ্য সরকার এবং প্রশাসনের উপর সকলের আস্থা রাখা উচিত। একে অপরের সমালোচনা করার সময় এটা নয়। বরং, এখনই শান্তি স্থাপনায় একসঙ্গে কাজ করা দরকার। মানুষের উন্নয়ন এবং নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য। রাজনীতি করা বন্ধ করুন।”
সন্দেশখালির মানুষ যার বিরুদ্ধে সব থেকে বেশি সোচ্চার, যার বিরুদ্ধে সব থেকে বেশি ক্ষিপ্ত, মাস দু’য়েক আগে সেই শেখ শাহজাহানের সঙ্গেই মিটিং করেছেন নুসরত জাহান। ৫ জানুয়ারি রেশন দুর্নীতির তদন্তে শাহজাহানের বাড়িতে অভিযান চালায় ইডি। তার ঠিক পনেরো দিন আগেই, তৃণমূলের মঞ্চে এক সারিতে বসেছিলেন সাংসদ নুসরত জাহান এবং শাহজাহান শেখ। ছিলেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক এবং সুজিত বসু। সেটা ছিল চব্বিশের লোকসভার আগে তৃণমূলের প্রস্তুতি সভা। ঘটনাচক্রে সন্দেশখালিতে ‘বসন্ত’ ফিরিয়ে আনতে এই দুই মন্ত্রীকেই দায়িত্ব দিয়েছে তৃণমূল।
গ্রেফতারির ‘ভয়ে’ আত্মগোপন করেছেন শেখ শাহজাহান। আড়াল থেকে অডিয়ো বার্তায় তিনি জানিয়েছেন, “আপনারা সিবিআই, ইডি নিয়ে ভয় পাবেন না। এটা একটা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। ওরা মনে করছে, আমাকে দমাতে পারলেই সন্দেশখালিতে তৃণমূল কংগ্রেস দুমড়ে-মুচড়ে যাবে। আমি কোনওদিন কোনও অন্যায়ের সঙ্গে যুক্ত নই। যদি কেউ প্রমাণ করতে পারেন, আমি কোনও অপরাধের সঙ্গে যুক্ত, তাহলে নিজেই নিজের মুন্ডু কেটে নেব। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে থাকবেন। আমার কী হবে, কোথায় যাব, ভাবার দরকার নেই। মৃত্যু একদিন না একদিন হবে। ষড়যন্ত্রকারীরা নিপাত যাবে।”
এই পরিস্থিতিতে শাহজাহানের গ্রেফতারি কিংবা এলাকার পরিস্থিতি সামাল দিতে কী সদর্থক ভূমিকা নিলেন নুসরত? মেন্টাল ছবির প্রচার, সাফল্যের বাইরে নুসরতকে রাজনীতির ময়দানে কবে দেখা যাবে? আদৌ দেখা যাবে? বসিরহাটের সাংসদকে ফোন করা হলে তিনি কোনও উত্তর দেননি।