প্রতিবেদন: সৌরভ, চিত্রগ্রহণ: শুভদীপ, সম্পাদনা: বিজন
মুর্শিদাবাদের কাশিমবাজার রাজবাড়ি। ব্রিটিশদের কাছে যার পরিচিতি ছিল ‘কাশিমবাজার প্যালেস অব দ্য রয়েজ্’ নামে। আনুমানিক তিন শতাধিক প্রাচীন এই রাজবাড়ির গোড়াপত্তন করেন কমলারঞ্জন রায়ের পুত্র দীনবন্ধু রায়। পরবর্তীতে রায় পরিবারের বংশধর অযোধ্যা রাম রায়ের হাত ধরেই ব্যাপ্তি অর্জন করে কাশিমবাজারের রায় পরিবার। প্যালেসের উপরে থাকা ‘কোর্ট অব আর্মস’, যেখানে অমৃতকলসের পাহারায় রয়েছে সিংহ এবং ইউনিকর্ন- যা আসলে রায় বাড়ির সিগনেচার। মধ্যযুগীয় কেল্লার আদলে তৈরি ক্লক টাওয়ার এই বাড়ির অন্যতম প্রাচীন নিদর্শন। তাছাড়াও সিংহদুয়ারের সামনে থাকা ব্যান্ড স্ট্যান্ডও কাশিমবাজার রায়বাড়ির অন্যতম ট্রেডমার্ক।
কাশিমবাজারের রায়েরা আগে থাকতেন ভগবানগোলায়। পীরজপুরে ছিল তাঁদের সাতমহলা বাড়ি। তবে সে সময় বর্গিদের আক্রমণের কারণে বাধ্য হয়েই কাশিমবাজারে চলে আসেন তাঁরা। তারপর এখান থেকেই শুরু করেন রেশম রফতানি। ইউরোপে বিশেষ করে ব্রিটিশদের কাছে রেশম বিক্রি করেই শ্রীবৃদ্ধি অর্জন করে রায় পরিবার। তারপর রায়বাড়িতে পুজো শুরু করেন অযোধ্যারাম রায়। সতেরো শতকে শুরু হওয়া সেই পুজো আজও চলছে।
কাশিমবাজার রাজবাড়ির পুজো অনন্য তার দেবী প্রতিমাতেও। এখানে দেবীর বাহন সিন্ধুঘোটক। অর্থাৎ অর্ধেক ঘোড়া এবং অর্ধেক সিংহের আদলে তৈরি হওয়া বাহনের উপরেই থাকেন দুর্গা। গণেশের রঙ লাল। বংশ পরম্পরায় একই প্রতিমাশিল্পীর পরিবার কাশিমবাজারের প্রতিমা তৈরি করে আসছে। নবরাত্রির পুজোতে রয়েছে কুমারী পুজোর চল। কাশিমবাজার রাজবাড়ির নবমীর নৈবেদ্যে দেওয়া হয় লাউ চিংড়ি, বোয়াল মাছ, ইলিশ মাছ, মোচার ঘণ্ট। প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী কাশিমবাজার রাজবাড়িতে দশমীতে হয় অপরাজিতার পুজো। অতীতে নীলকণ্ঠ ওড়ানোর রীতি থাকলেও এখন তা আর হয় না।