বিশ্বকর্মা পুজো মানেই আকাশে ঘুড়ির ঝাঁক। আর সেই সঙ্গে চিনা মাঞ্জা (সিন্থেটিক সুতো)-র দাপট! কয়েক বছর ধরেই রাস্তায়, বিশেষত উড়ালপুলগুলিতে বিপজ্জনক চিনা মাঞ্জায় আহত হওয়ার একাধিক ঘটনা ঘটেছে। দিন কয়েক আগে শ্রীরামপুর উড়ালপুরে কোন্নগরের বাসিন্দা এক বাইক আরোহীর নাক কেটে গিয়েছিল এই নিষিদ্ধ মাঞ্জায়। প্রতি বছর বিশ্বকর্মা পুজোয় পুলিশ প্রশাসনও অভিযান চালান চিনা মাঞ্জার ব্যবহার রুখতে। কিন্তু কোনও এই কমানো যায়নি এই মাঞ্জার দৌরাত্ম্য!
এ বার বিশ্বকর্মা পুজোর আগের দিন, অর্থাৎ রবিবার থেকে উত্তরপাড়া হিন্দমোটরে দেদার বিকোতে দেখা গেল চিনা সুতো। খবর পেয়ে সেখানে অবশ্য অভিযান চালায় উত্তরপাড়া থানার পুলিশ। পুলিশি অভিযানে আটকও হয়েছে প্রচুর চিনা মাঞ্জা। চন্দননগর পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘নাইলন সুতো বিক্রি আটকাতে অভিযান চলবে।’’
একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটায় ২০১৬ সালের ১৪ ডিসেম্বর জাতীয় পরিবেশ আদালত দেশ জুড়ে চিনা মাঞ্জা নিষিদ্ধ করেছিল। জাতীয় পরিবেশ আদালতের চেয়ারম্যান, বিচারপতি স্বতন্ত্র কুমারের ডিভিশন বেঞ্চ প্রতিটি রাজ্যের মুখ্যসচিবকে ওই নির্দেশ অবিলম্বে কার্যকর করতে বলেছিল। নির্দেশে বলা হয়েছিল, দেশে ওই মাঞ্জা সুতো তৈরি, মজুত ও কেনাবেচা বন্ধ করতে হবে। সমস্ত জেলার জেলাশাসক ও জেলা পুলিশের প্রধানকে ওই নির্দেশের প্রতিলিপি পাঠিয়ে চিনা মাঞ্জায় ঘুড়ি ওড়ানো নিষিদ্ধ করতে বলা হয়। এই সুতো বা মাঞ্জার উপকরণ বিদেশ থেকে আমদানি করার উপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। বলা হয়েছিল, নির্দেশিকা অমান্য করে কেউ চিনা মাঞ্জা দেওয়া সুতো ব্যবহার করলে ১৯৮৬ সালের পরিবেশ রক্ষা আইন এবং ১৯৭২ সালের বন্যপ্রাণ সুরক্ষা আইনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। সুপ্রিম কোর্টও সেই নির্দেশই বহাল রাখে।
কিন্তু তা সত্ত্বেও চিনা মাঞ্জার বিক্রি বন্ধ হয়নি বলে অভিযোগ। কলকাতা এবং শহরতলি জুড়েও এ বছর রমরমা এই সুতোর। সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার, ক্রিক রো, বাঘা যতীন-সহ একাধিক এলাকার ঘুড়ি বাজারে রীতিমতো ১০০ টাকা মিটারে বিক্রি হতে দেখা গিয়েছে চিনা মাঞ্জা! ব্যবসায়ীদের একাংশের দাবি, দক্ষিণ এবং উত্তর ২৪ পরগনার বহু বাজার থেকেও শহরে এমন সুতো ঢুকছে। কলেজ স্ট্রিটের একটি ঘুড়ির দোকানের মালিক বললেন, ‘‘আমরা না বিক্রি করলেও লোক হাতে পেয়ে যাবে। দমদম, বারাসত, বারুইপুর, সোনারপুরের রাস্তার মোড়ে মোড়ে এমন সুতোর দোকান।’’