পরপর তৃতীয়বার দেশের ক্ষমতায় এনডিএ। চালক আসনে বিজেপি। জওহরলাল নেহরুর পর নরেন্দ্র মোদীই একমাত্র অ-কংগ্রেসি নেতা, যিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী পদে হ্যাটট্রিক করলেন। ৯ জুন সন্ধ্যায় তৃতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। এই শপথ সমারোহে অতিথি হিসাবে রাষ্ট্রপতি ভবনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ, ভূটান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মলদ্বীপ, মরিশাস এবং সেশলসের রাষ্ট্রনেতারা। ২০১৪ সালে তিনি যখন প্রথমবার ক্ষমতায়, তখন নরেন্দ্র মোদীর শপথে এসেছিলেন তৎকালীন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ এবং আফগানিস্তানের সেই সময়ের রাষ্ট্রপতি হামিদ কারজাই। যদিও এ বার এই দুই দেশেই ব্রাত্য। তবে সরকারে আসার পর শাহবাজ শরিফের শুভেচ্ছাবার্তা পেয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। এখন প্রশ্ন, ভারত যেখানে ‘প্রতিবেশীই প্রথম’ নীতির কথা বলছে, সেখানে কেন আমন্ত্রিত নয় পাকিস্তান? বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তানকে বাদ রেখেই সার্ক গোষ্ঠীভুক্ত প্রতিবেশীদের নিয়ে বিকল্প ‘ব্লক’ তৈরি করতে চাইছে ভারত, যা আসলে এক ঢিলে দুই পাখি। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারতের অবস্থানকে আরও স্পষ্ট করা এবং অন্যদিকে চিনকেও বার্তা দেওয়া— ‘দাদাগিরি’ চলবে না।
শুধু পাকিস্তানই নয়, সাম্প্রতিক সময়ে মলদ্বীপ এবং বাংলাদেশের উপর কব্জা করে যে ভাবে ভারতকে চাপে রাখার চেষ্টা চিন করছিল, শপথ গ্রহণ মঞ্চেই তা প্রতিহত করার বার্তা দিলেন নরেন্দ্র মোদী। খোদ ‘চিনপন্থী’ মইজ্জু এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, “মোদীর শপথ সমারোহকে কেন্দ্র করে ভারত ভ্রমণ, ভারত এবং মলদ্বীপের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে আরও সুদৃঢ় করবে।” চলতি বছরের জানুয়ারি মাসেই ফের একবার বাংলাদেশের ক্ষমতায় এসেছেন শেখ হাসিনা। সম্প্রতি সেখানেও সংগঠিত হয় ‘ভারত বিরোধী’ বিক্ষোভ, যা নিজে প্রতিহত করেছেন হাসিনা। এ বার মোদীর শপথে তাঁর উপস্থিতি, ‘বন্ধু’ ভারতের পাশে বাংলাদেশের থাকার বার্তাকে আরও স্পষ্ট করল বলেই মত বিশ্লেষকদের।
চিন বরাবরই চেয়েছে, মহাসাগরীতটে তাদের আগ্রাসন। ‘ভারতবন্ধু’দের যেনতেন প্রকারেণ ‘বিদ্বেষী’ করতেও পিছপা হয়নি চিন। এ বার সরাসরি ‘কাউন্টার অ্যাটাক’-এ ভারতও। ‘ভিসন সাগর’— ভারতের বিকল্প কৌশল। মহাসাগরীয় তটে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আরও সুদৃঢ় সম্পর্কের পথে এটা আরও একটি পদক্ষেপ। যার মাধ্যমে দেশের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সুদৃঢ় হবে চিনা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবেশীদের বন্ধুত্বের প্রাচীরও।