প্রতিবেদন: প্রিয়ঙ্কর, চিত্রগ্রহণ ও সম্পাদনা: সুব্রত
যাঁরা রাতবিরেতে আপনার পছন্দের রেস্তরাঁর পছন্দের খাবারটি আপনার বাড়ির দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়ে যান, তাঁদের খবর রাখেন আর ক’জন। সময়মতো খাবার পৌঁছে দিতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ার খবর বার বার শিরোনামে এসেছে। গত মাসেই হায়দরাবাদে এক ডেলিভারি সংস্থার কর্মী গ্রাহকের কুকুরের তাড়া খেয়ে তিন তলার ফ্ল্যাট থেকে ঝাঁপ দিয়েছিলেন। এই কয়েক দিন আগে বাইকের হ্যান্ডেলে বিরিয়ানির প্যাকেট ঝুলিয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মারা যান বছর তেইশের তরুণ অভিজিৎ দাস। আনন্দবাজার অনলাইন সে দিন এই সব অ্যাপ-ভিত্তিক ডেলিভারি সংস্থার কর্মীদের সম্পর্কে লিখেছিল ‘জীবন বাঁধা রেটিং আর গতিতে’। কেমন হয় এক জন ডেলিভারি কর্মীর সারাটা দিন? আরও হাজার হাজার মানুষের মতো, অতিমারির সময়ে কাজ হারিয়েছিলেন মধ্যবয়স্ক অঞ্জন সরকার। তার পর থেকে অঞ্জন এক অ্যাপ-ভিত্তিক খাবার সরবরাহকারী সংস্থার কর্মী। এই কাজে রাস্তায় ঘুরে ঘুরে বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা হয়েছে অঞ্জনের। রাতে খাবার পৌঁছে দিতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ে বিছানা নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। আড়াই মাস পরে যে দিন আবার কাজে ফিরলেন, আনন্দবাজার অনলাইন তাঁর সঙ্গী হয়েছিল। অঞ্জনের সঙ্গে ঘুরে দেখল এক ডেলিভারি কর্মীর রাতের শহর।
অর্থনীতিবিদেরা জানাচ্ছেন, এই ‘প্ল্যাটফর্ম ইকোনমি’ বা ‘গিগ ইকোনমি’-র যুগে অ্যাপ-ভিত্তিক ডেলিভারি সংস্থাগুলির রমরমা সারা দুনিয়া জুড়ে। এখানে ক্রেতার বাড়ি বাড়ি পণ্য সরবরাহ করেন যাঁরা, তাঁরা কেউই সেই সব সংস্থার ‘শ্রমিক’ বা ‘কর্মী’ নন, ‘পার্টনার’। অনেক ডেলিভারি কর্মী এবং অর্থনীতিবিদের মতে, ‘কর্মী’ পরিচয় দিলে শ্রম-আইনের আওতায় পড়তে হবে, সেই আশঙ্কায় ডেলিভারি কর্মীদের ‘পার্টনার’ বা ‘অংশীদার’ বলে সংস্থাগুলি। তাঁদের দাবি, এতে কর্মীদের স্বার্থ সুরক্ষিত হয় না। মালিক ও কর্মীদের মধ্যে সম্পর্কটিকে ‘অংশীদারিত্ব’ বললে ভুল বলা হবে। কলকাতার ইনস্টিটিউট অফ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ়ের অধ্যাপক সীমন্তিনী মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, আপাত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে যে সংস্থার সঙ্গে এই কর্মীদের সম্পর্ক ‘সমানে-সমানে’, আদৌ তা নয়, কর্মীদের অনেক দাবিদাওয়া সংস্থা এড়িয়ে যেতে পারে এই ‘অংশীদার’ তকমার অজুহাতে। ‘শ্রমিক’-এর স্বীকৃতির দাবিতে বার বার সরব হয়েছেন এই সব সংস্থাগুলির কর্মীদের একাংশ। দেশের বিভিন্ন রাজ্যে নিজেদের এক জোট করে গড়ে তুলেছেন নানান সংগঠন। ধর্মঘট করেছেন ছাঁটাইয়ের বিরুদ্ধে এবং অন্যান্য দাবিদাওয়া নিয়ে। এ রাজ্যেও হয়েছে। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের অ্যাপ-ভিত্তিক ডেলিভারি সংস্থাগুলির কর্মীদের একটি সংগঠন শ্রম কমিশনে মামলা করেছে একটি সংস্থার কর্মী-ছাঁটাইয়ের বিরুদ্ধে। তাঁদের দাবি, এই বিষয়টি শ্রম-আইনের আওতায় পড়ে না এই যুক্তি দেখিয়ে সংস্থা তাঁদের আবেদন শুনতে চায়নি। সামনেই কমিশনে শুনানি রয়েছে এই মামলার।