বৃষ্টিতে ফুঁসে উঠতে পারে পাহাড়ি নদী। বর্ষায় বেড়াতে গেলে কিছু জিনিস নিয়ে যাওয়া দরকার। ছবি: সংগৃহীত।
সবুজ পাহাড়ের বুকে মেঘ-কুয়াশার লুকোচুরি। উত্তাল নদী। সশব্দে আছড়ে পড়া জলপ্রপাত। প্রকৃতির এই রূপ উপভোগের সবচেয়ে ভাল সময় বর্ষা। এ সময় চারপাশ হয়ে ওঠে ঘন সবুজ, সজীব। আপন খেয়ালে সেজে ওঠে প্রকৃতি।
ভরা বর্ষায় বেড়াতে তো যাবেন? কিন্তু যদি আচমকাই প্রকৃতি বিরূপ হয়। রাতভর টানা বৃষ্টিতে ফুঁসে ওঠে নদী, রাস্তায় নামে ধস। তবে উপায়? ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে জুন মাসেই বর্ষা ঢুকে যায়। তার স্থায়িত্ব কোনও সময়ে সেপ্টম্বরও ছাপিয়ে যায়। আসলে প্রকৃতির মতিগতি নিয়ে আবহাওয়া দফতরের আগাম পূর্বাভাস থাকলেও, বিপর্যয় বলে কয়ে আসে না। তাই বর্ষায় বেড়াতে গেলে কয়েকটি বিষয় যেমন মাথায় রাখা দরকার, তেমনই জরুরি জিনিস নিয়ে যেতে ভুললে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হতে পারে।
ভ্রমণের স্থান
বর্ষায় পাহাড়, নদী, জলপ্রপাতের সৌন্দর্যই টানে বেশি। তবে যাওয়ার আগে সেই জায়গা নিয়ে খোঁজ নেওয়া দরকার। যেমন পাহাড়ের বুকে নদী ঘেরা কোনও জায়গা বেছে নিলে সতর্ক হতে হবে। রাতভর বৃষ্টিতে কিন্তু পাহাড়ি নদী ফুঁসে কোনও জায়গার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। তাই খুব ‘অফবিট’ জায়গা নির্বাচন করার আগে এক বার সব দিক ভেবে নেওয়া দরকার।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস
ইদানীং আবহাওয়ার পূর্বাভাস বেশ কিছুদিন আগেই পাওয়া যায়। ১০০ শতাংশ না মিললেও আঁচ পাওয়া যায় মেঘলা দিন, না কি বৃষ্টি হতে পারে। তবে নিম্নচাপ বা ঝড়ের সতর্কতা থাকলে সে ব্যাপারে সতর্ক হয়ে যাওয়া উচিত। যদি বেড়াতে গিয়ে রাতভর বৃষ্টিতে নদী ফুঁসে উঠেছে, বৃষ্টি থামার লক্ষণ নেই তাহলে চেষ্টা করতে হবে ভ্রমণের কর্মসূচি বদল করে সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করাই ভাল। বিশেষত যে রাস্তায় ধস নামতে পারে সেই স্থান থেকে নীচে নেমে এলে ঝুঁকি থাকবে না। তবে শুধু পাহাড় নয় সমতলের কোনও জায়গাতেই প্রবল বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হতে পারে।
জরুরি জিনিস
বর্ষা মানে বৃষ্টি হবেই। জামাকাপড় কিংবা গ্যাজেট যাতে ভিজে না যায়, তাই ব্যাগটা ওয়াটার প্রুফ হওয়া জরুরি। সঙ্গে বর্ষার উপযোগী পোশাক নির্বাচন করতে হবে, যা ভিজলেও দ্রুত শুকিয়ে যাবে। জুতো ভিজলে চলা মুশকিল। তাই হয় ওয়াটার প্রুফ জুতো, নয়তো জুতোর উপর ওয়াটার প্রুফ কভারের ব্যবস্থা করতে হবে। সঙ্গে রেনকোট বা ছাতা কিন্তু ভুললে হয়ে যাবে ভীষণ মুশকিল।
ওষুধ
বর্ষা হোক বা অন্য মরসুম বেড়াতে গেলে ওষুধ সঙ্গে রাখা খুব জরুরি। অনেকেই বলেন, ‘‘আমার শরীর খারাপ হবে না। হলেও ওখানে দোকান তো থাকবে।’’ প্রবল বৃষ্টি হোক বা আচমকা বন্ধ, দোকান কিন্তু না-ও খুলতে পারে। বিশেষত পাহাড়ি নির্জন জায়গায় হাতে গোনা দোকান থাকে। তাই প্রয়োজনীয় সব ওষুধ গুছিয়ে নেওয়া দরকার। বিশেষত বর্ষাকালে পেট খারাপের ওষুধ সঙ্গে রাখতেই হবে।
খাবার ও পানীয় জল
বর্ষাকাল ফলে আচমকা এমন বৃষ্টি হতে পারে যে হোটেল থেকে বেরোনো গেল না। টানা বৃষ্টি হলে ধস নামা বা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকেই। সে ক্ষেত্রে পাহাড়ি এলাকায় হোম স্টে-র রসদও ফুরিয়ে যেতে পারে। তাই সঙ্গে অন্তত দু’দিনের মতো শুকনো ও পুষ্টিকর খাবার রাখা জরুরি। খুদে সদস্য থাকলে তাদের খাবার বেশি পরিমাণে নিয়ে যান। পানীয় জলও কয়েক বোতল সব সময়ে সঙ্গে রেখে দিন।
বিপদ ঘটলে
আচকমকা ধস নামা বা রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটলে স্থানীয়দের কাছে থেকেই কিন্তু সাহায্য চাইতে হবে। যত ক্ষণ না প্রশাসনিক সাহায্য এসে পৌঁছচ্ছে, তত ক্ষণ প্রতিকূল পরিস্থিতিতে থাকতে হতে পারে। সেই আশঙ্কার কথা মাথায় রেখে জরুরি সব জিনিস ব্যাগে রাখুন। ওষুধ, খাবার ও পানীয় জল সঙ্গে থাকলে কয়েকটা দিন কষ্ট হলেও কোথাও থেকে যাওয়া সম্ভব হবে।