লখনাভরম লেকের সেই ঝুলন্ত সেতু
নিজামাবাদ
নিজামাবাদের অন্যতম আকর্ষণ নিজামাবাদ ফোর্ট৷ দশম শতকে রাষ্ট্রকূটদের নির্মিত এই ফোর্ট বিভিন্ন শাসকের হাতে নানা রূপে পরিবর্তিত হয়েছে৷ ফোর্টের মধ্যে রয়েছে ছত্রপতি শিবাজি নির্মিত সুন্দর শ্রী রামুলাভারী মন্দির৷ নিজামাবাদ থেকে ৭৮ কিমি দূরে রয়েহে ডোমকোণ্ডা ফোর্ট৷ ফোর্টের দেওয়ালটি গ্রানাইটে তৈরি৷ দ্বিতল এই ফোর্টের প্রথম তলটিতে মুঘল স্থাপত্যের ছাপ পাওয়া যায়, কিন্তু দ্বিতীয় তলটি ইউরোপীয় স্থাপত্যর পরিচয় বহন করে৷ নিজামাবাদের ১৩ কিমি দূরে রয়েছে ৩৩ একর সবুজে মোড়া বাগান-সহ চমৎকার আলিসাগর লেক৷ ট্রি হাউস, ডিয়ার পার্ক ছাড়াও বোটিংয়ের সুন্দর বন্দোবস্ত রয়েছে৷ নিজামাবাদের ৮ কিমি দক্ষিণ-পূর্বে রয়েছে মল্লারাম জঙ্গল৷ জঙ্গলের মধ্যে মাশরুম আকৃতির পাথরটি ভূতাত্বিকদের মতে, কয়েক কোটি বছরের পুরনো৷ নিজামাবাদের ৩০ কিমি উত্তর-পশ্চিমে গোদাবরী নদীর তীরে বাসার৷ দেবী সরস্বতীর মন্দির রয়েছে এখানে৷ রাজা দ্বিতীয় সাতকর্ণী নির্মিত কণ্ঠেশ্বর মন্দির বাসারের আরও এক আকর্ষণ৷
নিজামাবাদের অন্যতম আকর্ষণ নিজামাবাদ ফোর্ট
কী ভাবে যাবেন: হায়দরাবাদ থেকে নিজামাবাদের দূরত্ব ১৭০ কিমি৷ দেবগিরি এক্সপ্রেস বা সড়কপথে যাওয়া যায়৷
কোথায় থাকবেন: তেলঙ্গানা পর্যটনের হোটেল হরিথা ইন্দুর ইন, ফোন: (০৮৪৬২)২২৪৪০৩, ভাড়া: ৯০০-১৭০০ টাকা৷
আরও পড়ুন: দু’হাত বাড়িয়ে ডাকছে হায়দরাবাদ
আলিসাগর লেক
আদিলাবাদ
আদিলাবাদ জেলার মুখ্য আকর্ষণ নানা জলপ্রপাত৷ তেলঙ্গানার নির্মল শহর থেকে ৪০ কিমি দূরে গভীর জঙ্গলের মধ্যে অনন্যসুন্দর কুন্তলা জলপ্রপাত৷ কদম জলাধারের জল ছাড়ার ওপর এই জলপ্রপাতের প্রবাহ নির্ভর করে। বর্ষা এবং তার পরবর্তী সময়ে এর রূপ হয় অসাধারণ। নির্মল শহর থেকে ৩৭ কিমি এবং আদিলাবাদ থেকে ৪৭ কিমি দূরে সবুজে মোড়া তেলঙ্গানার গভীরতম জলপ্রপাত পোচেরা৷ পাহাড়ি পথে জলরাশি এসে আছড়ে পড়ছে ৪০ ফুট নীচে গ্রানাইট পাথরের ওপর৷ কুন্তলা এবং পোচেরার খ্যাতিতে অনেকটাই আড়ালে চলে গেছে গায়ত্রী জলপ্রপাত৷ কদম নদীর উপর এই জলপ্রপাত নির্মল শহর থেকে ৩৬ কিমি দূরে মোকরাম গ্রামের কাছে৷ এখান থেকে ৫ কিমি হাঁটা পথে এই অপূর্ব জলপ্রপাত ভ্রমণপিপাসুদের কাছে এক অনবদ্য উপহার৷ কঙ্কাই বা কনকদুর্গা জলপ্রপাত আর এক আকর্ষণ৷ গিরনুর থেকে এক কিমি দূরে রয়েছে কনকদুর্গা মন্দির৷ মন্দির থেকে পায়ে হাঁটা পথে অপরূপ শোভা নিয়ে স্বাগত জানায় কনকদুর্গা জলপ্রপাত৷ চলার পথে গিরনুর থেকে গাইড নিয়ে চলাই বাঞ্ছনীয়৷ জুলাই থেকে জানুয়ারি এই জলপ্রপাতগুলি দেখার সঠিক সময়। জানুয়ারির পর খুব বেশি জল জলপ্রপাতগুলিতে থাকে না।
আদিলাবাদের গায়ত্রী জলপ্রপাত
কী ভাবে যাবেন: সড়কপথে হায়দরাবাদ থেকে দূরত্ব ২২০ কিমি। বাসে সময় লাগে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা।
কোথায় থাকবেন: আদিলাবাদ গেলে থাকতে হবে নির্মল শহরে। কিছু বেসরকারি হোটেল আছে এখানে। হোটেল শ্রীকৃষ্ণ রেসিডেন্সি। ফোন— ৯৭০৫৯৭২১০৩, ভাড়া: ৯৫০-১১০০ টাকা৷
করিমনগর
এই শহরের উপকণ্ঠে রয়েছে উল্লেখযোগ্য কিছু দুর্গ৷ তেলঙ্গানার ঐতিহ্য ও বহু সাম্রাজ্যের পদচিহ্নের সাক্ষী এলগান্ডাল ফোর্ট৷ মনায়ীর নদীর তীরে ভগ্নপ্রায় এই দুর্গের বুকে লেখা রয়েছে কাকাতীয়, বাহমনি, কুতুবশাহি, মোগল ও নিজামদের শাসনকালের ইতিহাস৷ করিমনগর থেকে ৫৫ কিমি দূরে জগিতাল শহরের কাছে তারার আকৃতির জগতিয়াল ফোর্ট৷ জ্যাক ও ট্যাল নামক দুই ইউরোপীয় স্থপতির অনবদ্য এই সৃষ্টির নামকরণও হয়েছে স্থপতিদের নামে৷ ভগ্নপ্রায় এই ফোর্টের স্থাপত্যশৈলী ইউরোপীয় ক্যাসল-এর অসামান্য অনুকরণ৷ করিমনগর থেকে ৬১ কিমি ও জগিতাল শহরের ১১ কিমি দূরে নাগুনুর ফোর্ট৷ গৌরবশালী কাকাতীয়দের শাসনকালের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই ফোর্টে পাওয়া বিভিন্ন লিপি মধ্যযুগীয় ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় গুরুত্বের সম্যক পরিচয় দেয়৷
তেলঙ্গানার ঐতিহ্য এলগান্ডাল ফোর্ট
কী ভাবে যাবেন: হায়দরাবাদ থেকে ঘণ্টাখানেক অন্তর বাস আছে করিমনগরের। সময় লাগে ঘণ্টা চারেক। দূরত্ব ১৭০ কিমি।
কোথায় থাকবেন: করিমনগর শহরে মৈত্রী রেসিডেন্সি, ফোন: (০৮৭৮) ২২৪১৬৬৬, ২২৪৩৬৬৬, ভাড়া: ২৩০০-৪০০০ টাকা, ইমেল-info@maitriresidency.com। হোটেল শ্বেতা, ফোন- (০৮৭৮) ২২৪৫৩৩৩, ২২৪৬৩৩৩, ভাড়া: ২২০০-৩৫০০ টাকা।
আরও পড়ুন: উত্তরবঙ্গের পাহাড়-জঙ্গলে হোমস্টের হদিশ
খাম্মাম
খাম্মামের অন্যতম আকর্ষণ স্তমভদ্রি পাহাড়ের উপর খাম্মাম ফোর্ট। তেলঙ্গানার বিভিন্ন শাসককূলের স্থাপত্যধারার মিলনে গড়ে উঠেছে এই ফোর্টটি৷ ফোর্ট থেকে ২০ কিমি. দূরে প্রায় ১০০ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত ঐতিহাসিক নেলাকোন্ডাপল্লি৷ এখানে বিস্তীর্ণ এলাকা খনন করে আবিষ্কৃত হয়েছে তৃতীয় ও চতুর্থ শতকের বৌদ্ধবিহার, মহাস্তূ্প, বুদ্ধমূর্তি প্রভৃতি৷ প্রতি বছর দশেরার সময় বহু মানুষের সমাগম হয় এখানে৷ খাম্মাম জেলার পালোঞ্চা শহর থেকে ২১ কিমি দূরে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ডালা নিয়ে উপস্থিত কিন্নরসানী অভয়ারণ্য৷ ৬৩৫.৪ বর্গ কিমি বিস্তৃত এই অভয়ারণ্যে দেখা মেলে প্যান্থার, চিতল, হায়না, ভালুক ও নানা ধরনের পাখির৷ এর মধ্যেই রয়েছে কিন্নরসানী বাঁধ। সবুজে মোড়া এই বাঁধটি ভারী সুন্দর।
ঐতিহাসিক নেলাকোন্ডাপল্লি
কী ভাবে যাবেন: হায়দরাবাদ থেকে ১৯৫ কিমি দূরে অবস্থিত খাম্মাম রেল ও সড়কপথে হায়দরাবাদের সঙ্গে যুক্ত৷
কোথায় থাকবেন: হোটেল অতিথি রেসিডেন্সি। ভাড়া: ১০০০-২৫০০ টাকা। ফোন: (০৮৭৪২) ২২৪৬৬১। ইমেল- customercare@hoteladithi.com
ওয়ারাঙ্গল
কাকাতীয় রাজাদের রাজধানী ছিল ‘অরুগাল্লু’ বা ওয়ারাঙ্গল৷ রাজা গণপতির আমলে নির্মিত ওয়ারাঙ্গল ফোর্ট আজ ভগ্নপ্রায়৷ তবুও এর অসাধারণ কারুকার্য মুগ্ধ করে পর্যটকদের৷ ফোর্টের বিশালাকার চারটি পাথরের দরজা আজও বিস্ময় স্মৃষ্টি করে৷ শহরের প্রাণকেন্দ্রে সয়ম্ভু মন্দিরটি খুবই সুন্দর৷ এর কাছেই চতুর্দশ শতকে নির্মিত আর একটি শিবমন্দিরে আজও দেবতার পুজো হয়৷
ওয়ারাঙ্গল থেকে ৬ কিমি দূরে হানামকোন্ডাতে রয়েছে রাজা রুদ্রদেবের তৈরি ১০০০ পিলার সমেত তারকাকার রুদ্রেশ্বর শিবমন্দির৷ চালুক্য স্থাপত্য রীতির অসাধারণ পাথরের কাজ, খোদাই, অষ্ট দিকপাল মূর্তি মনোমুগ্ধকর৷ এর খানিক দূরেই একটিলায় রয়েছে সুন্দর কারুকার্যময় অষ্টভূজা দেবী ভদ্রকালী মন্দির৷
স্থাপত্যশৈলীর অনবদ্য নিদর্শন রামাপ্পা মন্দির
ওয়ারাঙ্গল থেকে ঘুরে নেওয়া যায় আরও কিছু জায়গা৷ কাকাতীয় রাজা গণপতির আমলে নির্মিত স্থাপত্যশৈলীর অনবদ্য নিদর্শন নিয়ে ওয়ারাঙ্গলের ৭০ কিমি দূরে রামলিঙ্গেশ্বর বা রামাপ্পা মন্দির৷ মুখ্য স্থপতি রামাপ্পার নামে নামাঙ্কিত এই মন্দির সম্ভবত ভারতের একমাত্র মন্দির যার নামকরণ হয়েছে স্থপতির নামে৷ কথিত আছে, নির্মাণে ব্যবহৃত ইটগুলি জলে ভাসে, যা এক অপূর্ব বিস্ময়৷ ওয়ারাঙ্গলের ৯০ কিমি দূরে মেদারাম গ্রামের সামাক্কা-সরলাম্মা মন্দির, সামাক্কা ও সরলাম্মা নামের দুই আদিবাসী রমণীর স্মৃতির উদ্দেশে নির্মিত৷ কোয়া উপজাতির উপর কর প্রচলনের প্রতিবাদ বিদ্রোহে শহিদ এই দুই রমণীর বীরগাঁথা এই মন্দিরের ছত্রে ছত্রে৷ প্রতি বছর বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ আদিবাসী উৎসব পালিত হয় এখানে। আগমন হয় প্রায় এক কোটি পুণ্যার্থীর৷ ওয়ারাঙ্গালের ৭০ কিমি দূরে অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ডালি নিয়ে উপস্থিত লখনাভরম লেক৷ লেকের মধ্যস্থিত দ্বীপের সংযোগকারী ঝুলন্ত সেতুটি এখানকার অন্যতম আকর্ষণ৷
ওয়ারাঙ্গল ফোর্ট
কী ভাবে যাবেন: ইস্ট কোস্ট এক্সপ্রেস সকাল ৯.৫০-এ হায়দরাবাদ ডেকান স্টেশন ছেড়ে তিন ঘণ্টায় যাচ্ছে ওয়ারাঙ্গেল৷
কোথায় থাকবেন: তেলঙ্গানা পর্যটনের হোটেল হরিথা কাকাতীয়, ভাড়া: ১৮৫০-২৭৫০ টাকা। ফোন (০৮৭০)২৫৬২২৩৬৷ হোটেল গ্র্যান্ড গায়ত্রী, ভাড়া: ২০০০-৪০০০ টাকা। ফোন- (০৮৭০) ২৫০৫৯৯৯, ওয়েবসাইট www.hotelgrandgayathri.com।
আরও পড়ুন: লাচুং-ইয়ুমথাং-লাচেন-গুরুদোংমার
আলমপুর
আলমপুর রোড রেল স্টেশন থেকে ৯ কিমি দূরে আলমপুর৷ জগুলম্বা, নবব্রহ্মা এবং সঙ্গমেশ্বর মন্দিরের জন্য এই জায়গাটি বিখ্যাত। জগুলম্বা মন্দিরটি আঠারোটি মহা শক্তিপীঠের অন্যতম। চালুক্যরাজদের তৈরি ৭-৮ শতকের নবব্রহ্মা তথা শিবমন্দিরের জন্য আলমপুরের প্রশস্তি৷ তবে এখানকার মন্দিরগুলি বিভিন্ন কারণে সঠিক ভাবে সংরক্ষিত নয়। তুঙ্গভদ্রার তীরে অবস্থিত এই শহরটির অদূরেই মিলন ঘটেছে কৃষ্ণা ও তুঙ্গভদ্রা নদীর৷
কী ভাবে যাবেন: হায়দরাবাদ শহর থেকে ৫ কিমি দূরে কাচিগুডা স্টেশন থেকে সকাল ৯-৪০, দুপুর ১৪-৫৫-তে প্যাসেঞ্জার ট্রেন যাচ্ছে আলমপুর রোড রেল স্টেশন৷ বিকল্পে তুঙ্গভদ্রা এক্সপ্রেসে সেকেন্দরাবাদ থেকে কুর্নুল হয়ে সড়কপথে ৩০ কিমি দূরে আলমপুর আসা যায়৷
কোথায় থাকবেন: তেলঙ্গানা পর্যটনের হোটেল হরিথা আলমপুর, ভাড়া: ৬০০-৯৫০ টাকা, ফোন: (০৮৫০২) ২৪১০৪৪৷ কুর্নুল-এ হোটেল ডিভিআর ম্যানসন, ভাড়া: ১৭৫০-৪০০০ টাকা, ফোন: (০৮৫১৮) ২২১১১১-১৩, ইমেল: info@dvrmansion.com
তেলঙ্গানা পর্যটনের অফিস ৩-৫-৮৯১, ট্যুরিজম হাউস, হিমায়ত নগর, হায়দরাবাদ-৫০০০২৯৷ ফোন: (০৪০) ২৩২৬২১৫১-২৩২৬২১৫৪, (০৪০) ২৩২৬২১৫৭৷ কেন্দ্রীয় বুকিং অফিস: বশিরবাগ, ফোন: (০৪০) ২৯৮০১০৪০, ২৭৮৯৩১০০৷
তেলঙ্গানা পর্যটনের ওয়েবসাইট www.telanganatourism.gov.in।
তেলঙ্গানা স্টেট ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের অনলাইন বুকিং ওয়েবসাইট । কলকাতায় ডায়মন্ড ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস (ফোন-২২২৫ ৯৬৩৯) এবং ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম মেকার ইন্ডিয়া-র (২২৮৪ ৫০৬২) মতো কিছু সংস্থা এই ট্যুরগুলির ব্যবস্থা এবং পরিচালনা করে। প্রয়োজনে এদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা যেতে পারে।