লাটাগুড়ির এমন সৌন্দর্য্যেই শুরু হবে উৎসব। —ফাইল চিত্র।
প্রচারের আলো থেকে বরাবরই বঞ্চিত ডুয়ার্স। এই আক্ষেপ দূর করতে ডিসেম্বর অথবা জানুয়ারিতে সরকারি উদ্যোগে ডুয়ার্স উৎসবের আয়োজন করে গরুমারা লাগোয়া এলাকায় পর্যটনে জোয়ার আনার আশ্বাস দিলেন এনবিএসটিসি-র চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তী।
রবিবার লাটাগুড়িতে পর্যটন উন্নয়ন বিষয়ক এক সেমিনারে জলপাইগুড়ি কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান সৌরভ বলেন, ‘‘দিঘার মতো পর্যটন কেন্দ্রে কার্নিভালের আয়োজন করে বাড়তি সুফল মিলেছে। সেই ঢঙেই লাটাগুড়িতেও উৎসব করা হবে।’’ তার আগে সেপ্টেম্বরে কলকাতার ধর্মতলায় রাজ্য সরকারের তরফে ডুয়ার্স বিষয়ক আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে বলে জানান তিনি।
ডুয়ার্সের গরুমারা জাতীয় উদ্যান লাগোয়া লাটাগুড়ির একটি বেসরকারি রিসর্টে আয়োজিত ওই সেমিনারে সৌরভ চক্রবর্তী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মালবাজারের মহকুমাশাসক জ্যোতির্ময় তাঁতি, বন্যপ্রাণী গরুমারা বিভাগের এডিএফও বাদল দেবনাথ, মালবাজারের এসডিপিও নিমা নরবু ভুটিয়া, লাটাগুড়ি এলাকার পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যা মহুয়া গোপ প্রমুখেরা। রাজ্যের বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মনেরও সেমিনারে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। তবে তিনি উপস্থিত থাকতে পারেননি।
সেমিনারের শুরুতে লাটাগুড়ির সম্ভাবনা ও সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন লাটাগুড়ি রিসর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তা কমল ভৌমিক। তাঁর অনুযোগ, ‘‘জঙ্গল, পাহাড় প্রকৃতি দিনভর উপভোগ করলেও লাটাগুড়িতে সন্ধ্যার পর আর কোনও বিনোদনের সুযোগ পান না পর্যটকেরা। কার্যত রিসর্ট-বন্দি হয়েই থাকতে হয় পর্যটকদের।’’ সরকারি উদ্যোগে বন ও বন্যপ্রাণ বিষয়ক তথ্যচিত্র দেখানো বা দীর্ঘ দুই দশক ধরে অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে থাকা বন দফতরের সংগ্রহশালা সম্পূর্ণ করে তা পর্যটকদের জন্যে খুলে দেওয়ার দাবি জানান তিনি। সেই সঙ্গে ডুয়ার্স এবং ডুয়ার্স লাগোয়া ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলোকে সামনে রেখে ভ্রমণের ব্যবস্থা করলে পর্যটকদের বেশি দিন আটকে রাখা যাবে বলে পরামর্শ দেন।
সেমিনারে পর্যটন ব্যবসায়ীরা মূলত দুই ধরনের সমস্যার কথা উল্লেখ করেন। প্রথমত এখানে বছরে ৩৬৫ দিনের মধ্যে পর্যটকদের ভিড় হচ্ছে মেরেকেটে ৮০ থেকে ১০০ দিন। দ্বিতীয়ত, এই অল্প সময়ে যে পর্যটকেরা আসছেন, তাঁরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এক রাতের বেশি ডুয়ার্সে থাকছেন না। এই সীমাবদ্ধতা দূর করতে লাটাগুড়ি লাগোয়া তারঘেরা, কাঠামবাড়ির জঙ্গলে সাফারি চালু করা, গজলডোবায় পক্ষী-পর্যটন, লাটাগুড়ির কালীপুরে বোটিং শুরু করার দাবি জানান পর্যটন ব্যবসায়ীরা। লাটাগুড়ি রিসর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক দিব্যেন্দু দেব আবার অভিযোগ করেন, ‘‘ভারতের সমস্ত জাতীয় উদ্যানে যেখানে বেসরকারি রিসর্টে থেকেও হাতি-সাফারির সুযোগ রয়েছে সেখানে গরুমারায় কেবলমাত্র বন দফতরের বনবাংলোগুলোতে রাত্রিবাস করলেই হাতি-সাফারির সুযোগ মেলে। এটা পর্যটন উন্নয়নের পরিপন্থী। বহু পর্যটকই এর ফলে লাটাগুড়িতে এসেও হাতি সাফারি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।’’ সৌরভ চক্রবর্তী এই বিষয়ে বন দফতরের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানান।
পাশাপাশি সৌরভ জানান জলপাইগুড়ি জেলায় দেবী চৌধুরানি মন্দির, জটিলেশ্বর শিব মন্দির এবং পেটকাটি মন্দিরের আমূল সংস্কার করে তা পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হবে। পর্যটন ব্যবসায়ীদের দাবি মেনে এনজেপি থেকে মালবাজার হয়ে লাটাগুড়ি পর্যন্ত এনবিএসটিসি-র বাস চলবে বলে সৌরভ প্রতিশ্রুতি দেন। রাজ্য সমবায় দফতরের উদ্যোগে ডুয়ার্সে পুজোর মুখেই বেশ কিছু হোম-স্টে চালু করে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। সহজ ঋণে হোম-স্টে-র ব্যবস্থা করতে জলপাইগুড়ি কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক থেকেও ঋণ মিলবে। লাটাগুড়িতে এনবিএসটিসি-র শেড তৈরি করার কথা বলে সৌরভ জানান, পরবর্তীতে পর্যটনের সুবিধার জন্যে বাগডোগরা থেকে সরাসরি লাটাগুড়ি পর্যন্ত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসও চালানো হবে।