হাতছানি: কাঞ্চনজঙ্ঘা যেন নাগালের মধ্যেই
বাড়ির চার দেওয়ালে বন্দি জীবনে মনটা শুধুই পাহাড়-পাহাড় করছে? ঘুরে আসতে পারেন দার্জিলিং, কালিম্পং থেকে। নিউ নর্মাল টুরিজ়মের কথা মাথায় রেখে সেখানকার হোটেলও অনেক নিয়মকানুন মেনে চলছে। পর্যটকদের সুরক্ষার জন্য হোটেলগুলি কী নিয়ম মেনে চলছে, সে বিষয়ে জেনে নিন...
বুকিং থেকে চেক ইন
• ওয়েস্টবেঙ্গল টুরিজ়ম সেন্টারের (কলকাতা) ইন-চার্জ সোনালি সিংহ বললেন যে, ‘‘আমাদের বুকিং শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে এক মাস আগে বুক করতে হবে। সব লজ ও হোটেলে সরকারি গাইডলাইন মেনে সুরক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। নিয়মিত স্যানিটাইজ়েশনও করা হচ্ছে।’’ ওয়েস্টবেঙ্গল টুরিজ়মের হোটেল বা লজে থাকতে চাইলে অনলাইনে টাকা দিয়ে বুকিং করতে পারেন। চেক-ইনের সময়ে থার্মাল স্ক্রিনিং হচ্ছে।
• দার্জিলিং ও কালিম্পংয়ের বেসরকারি হোটেল বুক করতে চাইলে সে সব অনলাইনে বা হোটেলে পৌঁছে বুকিং পাওয়া যাচ্ছে। কিছু হোটেলে পুজোর বুকিংও শুরু হয়ে গিয়েছে।
• দার্জিলিংয়ের এক হোটেলের ম্যানেজার বললেন, ‘‘পুজোর বুকিং শুরু হয়েছে। এখনও পর্যটক আসছেন। তবে খুব কম। দিনে একটা-দুটো পরিবারই আসছে। তাঁদের সুরক্ষার জন্য অনেক নিয়ম মেনে চলছি। নিয়মিত হোটেল স্যানিটাইজ় করছি। একটা ঘর বাদ দিয়ে বুকিং দিচ্ছি। ডাইনিং হলেও ৩০-৫০ শতাংশ পর্যটককে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। খাবার রুম সার্ভিসও করা হচ্ছে। চেক আউট করা মাত্র বিছানার চাদর, বালিশের কভার, কম্বলের কভার কেচে শুকানো হচ্ছে। স্থানীয় দোকানপাট খুলেছে। তবে কিছু হোটেল এখনও বন্ধ। কারণ কর্মীদের বেতন দিতে না পারার জন্য এখনও খুলতে পারছে না। তার সঙ্গে বেড়েছে স্যানিটাইজ়েশনের খরচ।’’
ঝমাঝম: টয় ট্রেন মানেই নস্ট্যালজিয়া
• তবে পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য দেওয়া হচ্ছে ডিসকাউন্ট। দার্জিলিং ও কালিম্পংয়ের স্থানীয় হোটেলে কথা বলে জানা গেল যে, বেশির ভাগ হোটেলেই ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। বেশি দিনের বুকিং থাকলে কিছু হোটেলে ৩০-৪০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়ও দেওয়া হচ্ছে।
• বেশ কয়েকটি হোটেল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, লকডাউন পিরিয়ডে কর্মীদের ‘নিউ নর্মাল’ নিয়ম শিখিয়ে ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে। গেস্টকে রুম দেওয়ার চব্বিশ ঘণ্টা আগে রুম পরিষ্কার করে স্যানিটাইজ় করা হচ্ছে। দার্জিলিং ও কালিম্পংয়ের এক পাঁচতারা হোটেলের ভাইস-প্রেসিডেন্ট বললেন, ‘‘মাস্ক ও স্যানিটাইজ়ারের ব্যবহার ছাড়াও কিছু নিয়ম করা হয়েছে। বুফে কাউন্টার বন্ধ রেখে লাইভ ফুড কাউন্টার খোলা হয়েছে, যাতে গেস্টের সামনেই খাবার তৈরি করা যায়। প্রত্যেক রুমের বেডকভার আলাদা করে সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট দিয়ে পরিষ্কার করা হচ্ছে। হোটেলে চেক ইন করার সময়ে গেস্টের কোভিড-১৯ রিপোর্ট েদখা হচ্ছে। রিপোর্ট নেগেটিভ থাকলে বুকিং দিচ্ছি। কারও টেস্ট করা না থাকলেও সমস্যা নেই। হোটেলে ডাক্তার থাকছেন, গেস্ট আসামাত্র র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করানো হচ্ছে। টেস্ট রিপোর্ট আসা অবধি একদিন গেস্টকে কোয়রান্টিনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হচ্ছে।’’
• কিছু হোটেলে ডাইনিং হলে বসার ব্যবস্থা পাল্টানো হয়েছে, যাতে প্রত্যেক টেবলের মধ্যে দূরত্ব বজায় রাখা যায়। ই-মেনু, অনলাইন পেমেন্টের সার্ভিসও রয়েছে।
• তবে বেশির ভাগ হোটেল কর্তৃপক্ষ সহমত যে, টুরিস্টদেরও কিছু দায়িত্ব নিতে হবে। যেহেতু উপসর্গহীন কোভিড রোগী দেখা যাচ্ছে, তাই সচেতন থাকতে হবে পর্যটককেও। শারীরিক সমস্যা থাকলে অর্থাৎ ডায়াবিটিস বা অন্যান্য অসুখ থাকলে এক্ষুনি না বেরোনোই ভাল।
• কালিম্পংয়ের এক হোটেলের ম্যানেজার জানালেন, গেস্টের গাড়ি স্যানিটাইজ় করে দেওয়া হচ্ছে। তবে পর্যটকদের সুরক্ষার কথা ভেবে আপাতত সুইমিং পুল, স্পা ফেসিলিটি ও ফিটনেস সেন্টার বন্ধ রাখা হয়েছে।
যাওয়ার জন্য ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হওয়া পর্যন্ত চার চাকাই আপাতত ভরসা। হোটেলের ‘নিউ নর্মাল’ গাইডলাইন মেনেই চলার চেষ্টা করবেন। পর্যটকদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত পাহাড়। কিন্তু বেড়ানোর সময়ে পাহাড়কে ভাল রাখার দায়িত্ব পর্যটককেও নিতে হবে।