কলকাতার একটি পর্যটন সংস্থা বিজ্ঞাপনটি প্রকাশ করে। —ফাইল চিত্র
পুরুলিয়া ভ্রমণ নিয়ে দেওয়া একটি সংস্থার বিজ্ঞাপন ঘিরে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক। সম্প্রতি সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয় একটি সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপনের অংশ। সেখানেই আদিবাসী সম্প্রদায়ের মহিলাদের নিয়ে অবমাননাকর কথা লেখা হয়েছে বলে অভিযোগ।
বিজ্ঞাপনটির শিরোনামে লেখা হয়েছে, “শীতে পুরুলিয়া আসুন, ৪ রাত্রি ৫ দিনের প্যাকেজ।” প্যাকেজ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যও দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞাপনে লেখা, “সত্যজিৎ রায়ের জয়চণ্ডী পাহাড়, গড়পঞ্চকোট রাজবাড়ির গা-ছমছমে ইতিহাস ঘেরা অলিন্দ, অযোধ্যা পাহাড়ে জলপ্রপাত-জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, বড়ন্তির সূর্যাস্ত”— এই পর্যন্ত আর ৫টি বিজ্ঞাপনের সঙ্গে বিশেষ কোনও প্রভেদ নেই। এর পরের একটি বাক্য নিয়েই যত বিতর্ক। লেখা হয়েছে, “সঙ্গে ছৌ-নাচ এবং সাঁওতাল রমণীর উদ্দাম যৌবনের ছোঁওয়া।”
ভাইরাল এই বিজ্ঞাপনটি ২০১৬ সালের। কলকাতার একটি পর্যটন সংস্থা বিজ্ঞাপনটি প্রকাশ করে। তখনও তুমুল বিতর্ক হয় বিষয়টি নিয়ে। ২৮ নভেম্বর এই বিজ্ঞাপনের প্রতিবাদে রাস্তায় নামে একাধিক আদিবাসী সংগঠন। পর্যটন সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিজ্ঞাপনটি নিয়ে একটা বিভ্রান্তি হয়েছে। প্যাকেজ ট্যুরে ওই সংস্থা যে নৃত্য দেখায়, বিজ্ঞাপনে তার কথাই বলা হয়েছিল। চটজলদি পর্যটক টানতে এ হেন বিজ্ঞাপন দেওয়া ভুল হয়েছে বলেও স্বীকার করে তারা।
বেশ কয়েক বছর আগের হলেও বিজ্ঞাপনে যে ভাবে নারীকে ভোগ্যপণ্য হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে, তা নিয়ে নিন্দা হচ্ছেই। পাশাপাশি অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন জঙ্গলমহলে গিয়ে আদিবাসী রমণীদের নৃত্য দেখানোর বন্দোবস্ত নিয়েও। এ প্রসঙ্গে অনেকেই মনে করিয়ে দিচ্ছেন দেশ-বিদেশের একাধিক পুরস্কারজয়ী আদিবাসী লেখক হাঁসদা সৌভেন্দ্র শেখরের ‘দ্য আদিবাসী উইল নট ডান্স’ বইটির কথা। লেখক নিজের বইতে স্পষ্ট করে লিখেছিলেন, রুজিরুটির জন্য দরিদ্র আদিবাসীদের এ ভাবে নাচ করানো অবমাননার শামিল। তাই আদিবাসীরা আর নাচবেন না। তৎকালীন ঝাড়খণ্ড সরকার সেই বই নিষিদ্ধ করে দেয়। কেড়ে নেওয়া হয় লেখকের চাকরিও। সেই নিষিদ্ধকরণ নিয়ে তৈরি হওয়া বিতর্কে উঠে এসেছিল একই ধরনের প্রশ্ন। অনেকেই বলছেন, কেউ যদি আপনার বাড়িতে এসে বলেন, আপনার বাড়ির মহিলাদের নাচ দেখতে চান, আপনি কি টাকার জন্য তা করতে রাজি হবেন? ভাইরাল হয়ে যাওয়া বিজ্ঞাপন থেকে ফের এক বার উঠে আসে সেই প্রশ্নই। উল্টো দিকে কেউ কেউ বলছেন, নিজেদের কলাকে কাজে লাগিয়ে যদি আদিবাসী সম্প্রদায়ের নারীরা অর্থ উপার্জন করেন, তবে তা নিয়ে কারও বলার কিছু থাকে না।