ভাসমান: থেক্কাডিতে ভেলায় পারাপার
ইকোটুরিজ়ম। এই একটা শব্দেই অনেকটা ক্লান্তি কেটে যেতে পারে। আর এই টুরিজ়মের উদ্দেশ্যও তাই। নগরজীবন থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রকৃতির রূপ-রস-স্বাদ-গন্ধে আষ্টেপৃষ্ঠে নিজেকে মুড়ে নিয়ে ফিরে আসা। একই সঙ্গে এই ভ্রমণে দায়িত্ব ও যত্নও প্রয়োজন। যেখানে এই ধরনের টুরিজ়ম প্রচলিত, সেখানকার পরিবেশ যাতে দূষিত না হয়, তার দায় কিন্তু পর্যটকের উপরেও বর্তায়। এমন ক’টি জায়গার কথা জেনে নেওয়া যাক।
• ইকোটুরিজ়মে কেরল সবচেয়ে এগিয়ে। ঘন সবুজে ঘেরা ব্যাকওয়াটারের বুকে হাউসবোটে ভেসে বা মুন্নারের চা-বাগানে হারিয়ে যেতে পারেন। এমনকি কেরলের লেগুনে থাকার ব্যবস্থাও অভিনব। সেখানে না আছে টেলিভিশন, না আছে গিজ়ার। কিন্তু মনোরঞ্জনের জন্য পাবেন গাছে ঝোলানো হ্যামক, লেগুনের ভিতরে নৌকাসফর, খেলার হরেক সরঞ্জাম। তবে সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে গরম জলের জোগানও থাকে সেখানে।
• এশিয়ার পরিচ্ছন্নতম গ্রাম হিসেবে পরিচিত মেঘালয়ের মওলিনংয়েও ক’টা দিন কাটিয়ে আসতে পারেন। তবে গ্রামে ঢোকার মুখেই সতর্ক হতে হবে ধূমপান ও প্লাস্টিক ব্যবহারের বিষয়ে। এ ছাড়াও খাসি পাহাড়ে নংব্লাই গ্রামেও থাকতে পারেন। ১৬টি লিভিং রুট ব্রিজ এই গ্রামের অন্যতম আকর্ষণ।
• লাদাখের সোমোরিরি ওয়েটল্যান্ড কনজ়ার্ভেশন রিজ়ার্ভও এর আওতায় পড়ে। তবে ঠান্ডার জায়গায় পরিবেশবান্ধব উপায়ে থাকা বেশ কঠিন ও কষ্টকর। তাই ভেবে পরিকল্পনা করবেন। গরম জল, খাবারের জোগানও সীমিত।
পরিবেশবান্ধব: ইকোহাটে থাকা-খাওয়া
• হিমাচল প্রদেশের পিন ভ্যালি ন্যাশনাল পার্ক, চন্দ্রতালেও যেতে পারেন। তবে তা ট্রেকরুট। ফলে বেশ খানিকটা রাস্তা পদযুগলই ভরসা। থাকতে পারেন কুলু গ্রাম বা স্পিতি ভ্যালির হোমস্টেগুলিতে।
• গঢ়বাল কুমায়ুন মণ্ডল বিকাশ নিগমের উদ্যোগে উত্তরাখণ্ডেও ইকোটুরিজ়মের ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে ভ্যালি অব ফ্লাওয়ারস অন্যতম আকর্ষণ। স্টেট বার্ড স্প্রিং ফেস্টিভ্যালের সময়েও যেতে পারেন আউলি, ঘংগারিয়া, জয়ালগড়ে থাকার জন্য ক্যাম্প ও ইকোলজ পাবেন।
এ ছাড়াও দলমা পাহাড়ের বুকে, কর্নাটকের নাগরহোল, কাবিনি, সিকিম, উত্তরবঙ্গেও অনেক ইকোভিলেজ আছে। সেখানেও খবর নিতে পারেন। কিছু জায়গায় আবার সুযোগ পাবেন নিজের হাতে বীজ পোঁতার, অর্গ্যানিক ফার্মিংয়ের।
মনে রাখবেন
• প্লাস্টিকের বদলে কাগজ রাখুন। দরকারে ব্যবহার করতে পারবেন।
• যেহেতু এই ধরনের গ্রামে বিদ্যুৎ খুব সুলভ নয়, তাই ইমার্জেন্সি লাইট এবং পাওয়ার ব্যাঙ্ক সঙ্গে রাখুন।
• জোরে গান চালিয়ে প্রাকৃতিক শান্তি নষ্ট করবেন না।
• ইকোভিলেজের নিয়মাবলি অবশ্যই মেনে চলুন।
• এই ধরনের জায়গায় নেটওয়র্ক প্রায় পাওয়াই যায় না।
• প্রয়োজনীয় ওষুধ ও ফাস্ট-এড সঙ্গে রাখুন।
প্রকৃতিই এই পর্যটনের কেন্দ্রবিন্দু। তাই প্রকৃতিকে ভালবাসলেই ইকোটুরিজ়ম বেছে নিন। কারণ শহুরে সুযোগসুবিধে এই ভ্রমণে আপনার সহায় হবে না। সেখানে সম্বল শুধু প্রকৃতিই।