সড়কপথে কলকাতার আশপাশে ভ্রমণ। ছবি: সংগৃহীত।
সপ্তাহে ছুটি বলতে কারও এক দিন, আবার কারও দু’দিন। এক-দু’দিনের ছুটিতে কলকাতার আশপাশে কোথায় যাওয়া যায়, তা নিয়ে ভাবনার শেষ নেই। অনেকেই চান, চারচাকা বা দু’চাকায় ভর করে চটজলদি কোনও জায়গা থেকে ঘুরে আসতে। কিন্তু কোথায়?
ফরাসিদের প্রাচীন উপনিবেশ চন্দননগরের আনাচকানাচে ছড়িয়ে রয়েছে ইতিহাস। ছবি: সংগৃহীত।
চন্দননগর:
ফরাসডাঙা বলে পরিচিত গঙ্গাতীরের এই প্রাচীন শহরের জগদ্ধাত্রী পুজোর কথা সকলেই জানেন। ফরাসিদের প্রাচীন উপনিবেশ এই শহরের আনাচকানাচে ছড়িয়ে রয়েছে ইতিহাস। চন্দননগরের নাম শুনলেও যাঁদের এখনও ঘোরা হয়নি, তাঁরা এক দিনেই ঘুরে দেখে নিতে পারেন এই শহরের দ্রষ্টব্য জায়গাগুলি।
চন্দননগরের কথা উঠলে প্রথমেই মাথায় আসবে স্ট্র্যান্ড। স্ট্র্যান্ডের বেঞ্চে বসে গঙ্গার বুকে সূর্যাস্ত না দেখলে কিন্তু ঘোরাটাই বৃথা। স্ট্র্যান্ডের এক পাশে পুরনো মিউজ়িয়াম, সেক্রেড হার্ট চার্চ, পাতালবাড়ি, নন্দদুলাল মন্দির ঘুরে নিতে পারেন। আর চন্দনগরের বিখ্যাত মিষ্টির স্বাদ ছাড়া কিন্তু বেড়ানো অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।
কলকাতা থেকে চন্দননগরের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার। দিল্লি রোড ধরে গেলে দেড় ঘণ্টার মধ্যেই গাড়িতে পৌঁছনো সম্ভব।
এই শহরে বেড়ানোর উপযুক্ত সময় সেপ্টেম্বর থেকে এপ্রিল। প্রচণ্ড গরম ছাড়া যে কোনও সময়ই যাওয়া যেতে পারে।
কৈখালি:
কলকাতা থেকে নদী, ম্যানগ্রোভের জঙ্গল যাওয়াও কিন্তু খুব একটা ঝক্কির নয়। ঘুরে আসতে পারেন ‘সুন্দরবনের প্রবেশদ্বার’ বলে পরিচিত কৈখালি থেকে। ঘুরে নিতে পারেন নিমপীঠও। কৈখালিতে মাতলা নদীর ধারে প্রবল হাওয়া আর তার বিশালত্বে মনে হতেই পারে, এটা যেন কোনও সমুদ্র। আর যদি পূর্ণিমার রাতে যাওয়া যায়, মাতলা নদীর সেই রূপ অনির্বচনীয়। চারপাশে ম্যানগ্রোভের জঙ্গল। মাতলার বুকে নৌকো নিয়ে ভেসে পড়লেই হল। কৈখালি থেকে বেড়িয়ে আসা যায় ঝড়খালির ব্যাঘ্র পুনবার্সন কেন্দ্রও। কৈখালিতে মাতলার পাশেই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের যুব আবাস রয়েছে থাকার জন্য।
কলকাতা থেকে কৈখালির দূরত্ব মোটামুটি ৫০ কিলোমিটার। গাড়ি বা বাইকে সহজেই যাওয়া যায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার কৈখালিতে।
যাওয়ার উপযুক্ত সময় সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ।
পুরনো মন্দির, টেরাকোটার কাজ দেখতে চলুন বাঁকুড়ার বিষ্ণপুরে। ছবি: সংগৃহীত।
বিষ্ণুপুর:
পুরনো মন্দির, টেরাকোটার কাজ দেখতে চলুন বাঁকুড়ার বিষ্ণপুরে। এই শহরের আনাচকানাচে রয়েছে একাধিক মন্দির। অধিকাংশই এখানকার মল্ল রাজাদের তৈরি। রাসমঞ্চ, জোড়বাংলা মন্দর, মদনমোহন মন্দির ঘুরে দেখে নিতে পারেন। এখান থেকে বেড়িয়ে আসা যায় শুশুনিয়া পাহাড় ও ঝিলিমিলিও। যদি কলকাতা থেকে আরামবাগ থেকে বিষ্ণুপুর আসার পথে পড়বে জয়পুরের জঙ্গল। শাল-সেগুনের জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে চলে গিয়েছে কালো পিচের মসৃণ রাস্তা। তার সৌন্দর্যই আলাদা।
কলকাতা থেকে দূরত্ব ১৪০ কিলোমিটার। সময় লাগবে সাড়ে চার থেকে ৫ ঘণ্টা।
যাওয়ার উপযুক্ত সময় অগস্ট থেকে মার্চ।
রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত জনপদ শান্তিনিকেতন। ছবি: সংগৃহীত।
শান্তিনিকেতন:
রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত এই জনপদে বিশ্বভারতী, মিউজ়িয়াম, কলাভবন, ছাতিমতলা, সোনাঝুরির হাট ছাড়াও সতীপীঠ কঙ্কালীতলা-সহ অনেক কিছুই দেখার আছে।
কলকাতা থেকে দূরত্ব ১৬৩ কিলোমিটার। সময় লাগবে সাড়ে ৪ ঘণ্টা।
যাওয়ার উপযুক্ত সময় সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ।
সুবর্ণরেখা ও খড়কাই নদীর সংযোগস্থলে জামশেদপুর খুব সুন্দর একটি শহর। ছবি: সংগৃহীত।
জামশেদপুর:
সুবর্ণরেখা ও খড়কাই নদীর সংযোগস্থলে জামশেদপুর খুব সুন্দর একটি শহর। এখানে মন্দির, জলাধার, পার্ক, জঙ্গল সবই রয়েছে। চান্ডিল, পালনা, ছোটাবাঁকি-সহ একাধিক জলাধারও আছে। আছে জুবিলি পার্ক এবং দলমা ওয়াইল্ড লাইফ স্যাঞ্চুয়ারি। এখান থেকে কেউ ঘাটশিলাও বেড়িয়ে আসতে পারেন।
কলকাতা থেকে দূরত্ব মোটামুটি ২৭০ কিলোমিটার। সময় লাগবে ৫-৬ ঘণ্টা।