১৯৬১ সাল পর্যন্ত ভারতের মানচিত্রে ছিল না এই রাজ্যের নাম। ছবি: সংগৃহীত।
ভারতের স্বাধীনতা এবং সংবিধান রচনা হয়ে যাওয়ার পরেও দেশের একটি রাজ্য বিদেশি শক্তির অধীনে ছিল। শুনতে অবাক লাগলেও ঘটনাটি সত্যি। সেই ছোট্ট রাজ্যটি কিন্তু এখন ভারতের অন্যতম সেরা পর্যটনকেন্দ্র। ভারতীয়দের কাছে ছুটি কাটানোর অন্যতম পছন্দের ঠিকানা, গোয়া।
সৈকতের সমান্তরালে পশ্চিমঘাট পর্বতমালা ও তার অসংখ্য শিরা-উপশিরা গোয়ার প্রকৃতিকে অকৃপণ ভাবে সাজিয়েছে। গোয়ার মনরোম পরিবেশ, সেখানকার পার্টির মেজাজ, রকমারি খানাপিনা— পর্যটকদের বছরের পর বছর ধরে আকৃষ্ট করছে।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের হাত থেকে ভারত স্বাধীন হলেও স্বাধীনতার প্রায় ১৪ বছর পরেও গোয়া পর্তুগালের দখলেই ছিল। ১৯৬১ সালে গোয়া ভারতের মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত হয়।
১৯৬১ সালের ডিসেম্বরে জওহরলাল নেহেরু গোয়ায় ভারতীয় সৈন্যদের জড়ো করতে শুরু করেন। উত্তর, পশ্চিম এবং দক্ষিণ ভারতের ১০০টিরও বেশি যাত্রিবাহী ট্রেনের যাত্রাপথ বদলে দেওয়া হয়েছিল বেলাগাভীতে সৈন্যদের পৌঁছে দিতে। পণ্যবাহী ট্রেন ব্যবহার করে সামরিক সরঞ্জাম পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল গোয়ায়। পর্তুগালও এর জবাবে একটি জাহাজ পাঠিয়েছিল। জাহাজটি বন্দরে পৌঁছনোর পর ১২ ডিসেম্বরের পর লিসবনের উদ্দেশে ফিরতি যাত্রা শুরু করে। পর্তুগাল সরকার ভেবেছিল যে, আমেরিকার কূটনৈতিক চেষ্টার মাধ্যমে ভারতের সামরিক অভিযান পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া সম্ভব হবে। তবে তাদের চেষ্টা সফল হয়নি। ভারতের সেনারা যখন গোয়ায় প্রবেশ করে, তখন নামমাত্র প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছিল। ওই বছর ১৮ই ডিসেম্বর উত্তর, দক্ষিণ এবং পূর্ব দিক থেকে গোয়ায় প্রবেশ করতে থাকে ভারতীয় সেনারা। ৩৬ ঘণ্টার যুদ্ধ চালানোর পর পর্তুগালের অনভিজ্ঞ সৈন্যেরা ভারত সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করে। এই অভিযানে ভারতের ২২ জন সেনা নিহত এবং ৫৪ জন সেনা আহত হন।
অতি অল্প সময়ের ভিতরে দেশের সেরা পর্যটনকেন্দ্রগুলির মধ্যে নাম লিখিয়ে ফেলেছিল গোয়া। ছবি: সংগৃহীত।
১৯৬১ সালে গোয়া ‘অপারেশন বিজয়’-এর মাধ্যমে দিয়ে পর্তুগিজ শাসন থেকে মুক্ত হয়ে ভারতভুক্ত হলে কী হবে, অতি অল্প সময়ের ভিতরে দেশের সেরা পর্যটনকেন্দ্রগুলির মধ্যে নাম লিখিয়ে ফেলেছিল । উত্তরে মহারাষ্ট্রের দিকে গোয়ার প্রথম জনপ্রিয় বিচ আরামবোল ও দক্ষিণে কর্নাটকের দিকে শেষ সুপরিচিত সৈকত পালোলেম। মাঝখানে অগণিত ছোট-বড় সৈকত, প্রত্যেকের সৌন্দর্যই আলাদা। শহরে যেমন থাকার ব্যবস্থা আছে, তেমনই সমুদ্রসৈকতে রাত কাটানোরও ঢালাও আয়োজন রয়েছে। তবে, শুধু সৈকত নয়, পুরনো দিনের মন্দির, পর্তুগিজ শাসনকালের সৌধ, পাহাড়, অরণ্য, জলপ্রপাত— সবই রয়েছে গোয়ার ঝুলিতে।