বিতর্কের দুই মুখ। হরভজন ও হেয়ার।
হরভজন সিংহ বনাম ডারেল হেয়ার। রাউন্ড টু।
প্রথম রাউন্ড ছিল অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন আম্পায়ার ডারেল হেয়ারের। অস্ট্রেলিয়ার সংবাদপত্রে উপমহাদেশীয় স্পিনারদের নিয়ে সদ্য বোমা ফাটিয়েছেন হেয়ার। যেখানে তিনি হরভজন, সাকলিন, মুরলীধরনদের দিকে সরাসরি আঙুল তুলে বলেছেন, আইসিসি-র উচিত ছিল অনেক দিন আগেই এঁদের চাকিংয়ের জন্য শাস্তি দেওয়া। “আমি নব্বই দশকের শেষ দিকেই বলেছিলাম, এই ব্যাপারে যদি কিছু না করা হয়, তা হলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চাকার তৈরি হবে। আর ঠিক সেটাই এখন হচ্ছে। ওই সময়ের স্পিনাররা হরভজন, সাকলিন, মুরলীকে দেখে শেখার চেষ্টা করত। আর সেটাই বড় সমস্যা হয়ে গেল।”
হেয়ারের এই বক্তব্যের পরই ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন হরভজন। ভাজ্জির হুঙ্কার, “হেয়ার কি পাগল হয়ে গিয়েছে? ও কি নিজেকে আইসিসি-র চেয়ে বড় ভাবছে? ও যদি আমার গায়ে কালি ছেটানোর চেষ্টা করে আর একবার, আমাকে নিয়ে কোনও বিতর্কিত মন্তব্য করে, তা হলে আমি বিসিসিআইয়ের সঙ্গে কথা বলে হেয়ারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেব। ওকে ছাড়ব না।”
হরভজন বুঝে উঠতে পারছেন না, কেন হঠাত্ তাঁকে এই ভাবে আক্রমণ করা হল। “কয়েক জন আন্তর্জাতিক বোলার চাকিংয়ের দায়ে ধরা পড়েছে বলে হেয়ারকে কে অধিকার দিয়েছে সবাইকে এক সারিতে ফেলার? যাদের অ্যাকশন নিয়ে সমস্যা আছে, তারা সেটা শুধরে নেবে। আমি নিজেও পারথে বায়োমেকানিক পরীক্ষায় বসেছিলাম। ১৯৯৯ সালে ফ্রেড টিটমাসের কাছে অ্যাকশন নিয়ে ক্লাস করেছিলাম। সে সব রিপোর্ট আইসিসি-র কাছে আছে। কোনও প্রাক্তন আম্পায়ার যদি আমাকে অসম্মান করতে চায়, আমি ছাড়ব না। ১৪ বছরের পরিশ্রমের পর আমি এই জায়গায় পৌঁছেছি। একটা লোক সেটা নষ্ট করে দিতে পারে না।” বলেছেন টেস্টে ৪১৩ আর ওয়ান ডে-তে ২৫৯ উইকেট নেওয়া ভারতীয় অফ স্পিনার।
অস্ট্রেলিয়া বনাম হরভজন লড়াই আজকের নয়। ইডেনে স্টিভ ওয়ের অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিকের পর থেকে যে লড়াই মোটামুটি শুরু। এবং যা চূড়ান্ত রূপ নেয় অ্যান্ড্র সাইমন্ডসের ‘মাঙ্কি গেট’ কেলেঙ্কারির সময়। এ ছাড়া উপমহাদেশের স্পিনারদের সঙ্গে হেয়ারের ‘সম্পর্কে’র কথাও কারও অজানা নয়। মুরলীকে একবার চাকিংয়ের জন্য ‘নো বল’ ডেকেছিলেন হেয়ার। অফ স্পিনারদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হল দুসরা। যাঁকে অনেক বিশেষজ্ঞই বলে থাকেন, কনুই না ভেঙে করা সম্ভব নয়। হরভজন বলছেন, “সাকলিন মুস্তাক দুসরা আবিষ্কার করেছিল। আর আমি সেটা নিখুঁত করেছি। ঠিক মতো দুসরা করার জন্য আমি গর্বিত। কেউ যদি দুসরা করতে গিয়ে কনুই ভেঙে বসে, সেটা তার সমস্যা। আমার নয়।”
হেয়ারের জন্য একটা প্রশ্নও আছে হরভজনের। “আচ্চা মিস্টার হেয়ার আপনি তো এমন অনেক আন্তর্জাতিক ম্যাচে আম্পায়ারিং করেছেন, যেখানে আমি বল করেছি। আপনি কেন তখন আইসিসি-তে রিপোর্ট করেননি? তিন জন বোলার ধরা করল আর আপনি ঘুম ভেঙে উঠে একটা মন্তব্য করে বসলেন। আপনি আগে কিছু বলতে পারেননি, কারণ আপনি জানতেন আমি ভুল কিছু করছি না।” হরভজনদের ‘আইডল’ বানানোর ফলে এখনকার প্রজন্মের স্পিনাররা ভুগছে বলে হেয়ার যে মন্তব্য করেছেন, তাতেও চটেছেন ভাজ্জি। টার্বুনেটরের প্রশ্ন, “আমরা কি কাউকে বোলিং করতে শিখেয়েছি যে আমাদের নিয়ে এ রকম বলা হচ্ছে?”
সামনেই অস্ট্রেলিয়া সফর। আর সেখানেই ফের ভারতীয় দলে ফেরার লড়াই লড়ছেন হরভজন। সামনে দলীপ ট্রফির ম্যাচ। ঘরোয়া ক্রিকেটেই এখন নিজেকে প্রমাণ করতে চান হরভজন। বলে দিচ্ছেন, “আমার লড়াইটা চলছেই। ভারতীয় দলে আবার ফিরে আসতে চাই।” সেই লড়াইয়ের পাশাপাশি আবার একটা নতুন লড়াই হয়তো অপেক্ষা করে রয়েছে হরভজনের সামনে। যেখানে প্রতিপক্ষের নাম ডারেল হেয়ার।