মুরলীর স্পিন ক্লাসে মনোযোগী ছাত্র সৌরাশিস।
মুথাইয়া মুরলীধরন চলে গেলে সৌরাশিস লাহিড়ী, আমির গনির সাপ্তাহিক নির্ঘণ্ট পাঁচ দিন সকালে দু’ঘণ্টা জিম। পুল সেশন। বিকেলে দু’ঘণ্টা নেট।
ওয়াকার ইউনিস চলে গেলে অশোক দিন্দাদের সাপ্তাহিক নির্ঘণ্টচার দিন সকালে দু’ঘণ্টার নেট। বিকেলে দু’ঘণ্টার জিম, পুল সেশন।
মঙ্গলবারের পর ওয়াকার-মুরলীরা শহরে আর সশরীরের থাকছেন না। কিন্তু মঙ্গলবারের পর ওয়াকার-মুরলীর ‘অদৃশ্য’ উপস্থিতি থেকে যাচ্ছে।
থাকবে এক সফটওয়্যারের মাধ্যমে। যে সফটওয়্যার ব্যবহৃত হয় মহেন্দ্র সিংহ ধোনিদের ক্ষেত্রে। যা খুব তাড়াতাড়ি আমদানি করতে চলেছে সিএবি।
সোমবার সকালে সল্টলেক যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ক্রিকেটারদের নিয়ে প্রায় ছ’ঘণ্টার সেশনের পর বিকেলে সিএবি কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হয় ওয়াকারদের। বলা হয়, যে সমস্ত উঠতি প্রতিভাদের নির্বাচন করা হয়েছে তাদের সর্বাগ্রে দরকার ফিটনেস ঠিক করা। একজন উঠতি বোলারের সাপ্তাহিক রুটিন কী হওয়া উচিত, পরিষ্কার করে বলে দেওয়া হয়। প্রতিভাবান উঠতিদের ডায়েট চার্ট কী হবে, সেটাও ঠিক করে দেবেন উপমহাদেশের দুই কিংবদন্তি বোলার। ওয়াকাররা চলে গেলে ক্রিকেটাররা যাতে ঢিলেঢালা না হয়ে পড়ে, তার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। বাছাই ক্রিকেটারদের কী করতে বলা হয়েছে, আর তাঁরা কে কী করছেনসশরীরে না থেকেও জানতে পারবেন ওয়াকার-মুরলী। জানতে পারবেন, এক সফটওয়্যারের মাধ্যমে। মুরলী কলম্বোয় বসে জেনে যাবেন, আমির গনির কতটা উন্নতি হয়েছে। ইরেশ সাক্সেনা তাঁর ‘প্রেসক্রিপশন’ মানছেন কি না। ওয়াকার আবার কলকাতায় না থেকেও জেনে যাবেন, দিন্দা রিভার্স সুইংটা ঠিকঠাক তুলতে পারলেন কি না!
দিন্দার বোলিংয়ের উপর কড়া নজর ওয়াকারের।
যা এ দিন ওয়াকার হাতে ধরে শিখিয়ে গেলেন দিন্দাকে। মুরলী আবার পড়লেন দুসরা নিয়ে। ছাত্র সৌরাশিস-গনি।
এ দিন গনি-সৌরাশিসদের নেটে বল করিয়ে লাইন-লেংথ, অ্যাকুরেসি, কে কতটা টার্ন করাতে পারেন তা দেখছিলেন মুরলী। ইরেশের বোলিং অ্যাকশন দেখে মুরলীর দাওয়াই ডেলিভারির আগে সেকেন্ডের ভগ্নাংশের জন্য থামো। তার পর বলটা করো। হাতের কাছে ‘দুসরা’-কে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া বোলারকে দেখে বাংলার এক নম্বর স্পিনার সৌরাশিস শিল্পটা জানতে চেয়েছিলেন। মুরলী কায়দাটা প্রথমে দেখিয়ে তার পর বলেন, “চুরানব্বইয়ে সাকলিন মুস্তাককে এ রকম ডেলিভারি করতে দেখে কথা বলেছিলাম ওর সঙ্গে। কিন্তু আমরা দু’জন আলাদা ঘরানার স্পিনার। নেটে নিজের মতো করে দুসরা আয়ত্তে এনেছিলাম।” সৌরাশিসকে মুরলী আরও বলেনম্যাচে তোমাকে আশি শংতাশ ক্ষেত্রে অফস্পিন করতে হবে। আর কুড়ি শতাংশ ক্ষেত্রে তুমি ব্যাটসম্যানকে বোকা বানাবে। কিন্তু তার জন্য নিয়ন্ত্রণ দরকার। ভ্যারিয়েশন এক দিনে আসবে না। চুরানব্বইয়ে দুসরা শিখে সেটা দিয়েছিলাম সাত বছর বাদে। নেটে ওটা নিয়ে পড়ে থাকতাম। ধৈর্য ধরে প্র্যাকটিস করো। পরের রঞ্জিতে দেবে! পরে স্পিনের জাদুকর বলেও গেলেন, “দু-তিন দিনের মধ্যেই ম্যাজিক দেখানো যাবে না। তিন মাস পর যখন ফের আসব তখন উন্নতি আশা করতেই পারি।”
প্রায় একই কথা বললেন ওয়াকারও, “প্রতিভার অভাব নেই। বেসিকগুলো ঠিকঠাক শুধরে দিতে হবে। তার পর ধৈর্য ধরে সেগুলো অনুশীলন করলে ভাল না হওয়ার কোনও কারণ নেই।” অশোক দিন্দা আবার ওয়াকারের কাছে জানতে চেয়েছিলেন আউট সুইং আর একদা ইমরানের পাকিস্তানের ব্রহ্মাস্ত্র রিভার্স সুইংয়ের ব্যাপারে। বাঙালি ‘স্পিডস্টার’ ধরতে পারলেন ব্যপারটা? এ বার ওয়াকারের উত্তর, “বোলিংয়ের সময় সিমের ব্যবহার আর কবজিটাকে কোথায় রাখতে হবে তা বলেছি।” আর দিন্দা বললেন, “দুটো জিনিস বলেছে। সেটা রপ্ত করে উইকেট পেলে তখন বলব।”
সিএবি অবশ্য একটা জিনিস এখনই বলে দিচ্ছে। বলে দিচ্ছে, হাতের কাছে ওয়াকার থাকতে পেস-পাঠ নেওয়ার জন্য বাংলার বাইরে কোনও ক্রিকেটারের আর যাওয়ার দরকার নেই। তরুণ পেসার কনিষ্ক শেঠ ডাক পেয়েছিলেন গ্লেন ম্যাকগ্রার এমআরএফ পেস ফাউন্ডেশনে। কিন্তু সিএবি তাঁকে যেতে দিচ্ছে না। বরং ওয়াকারের ট্রেনিং ও মনিটরিংয়ে রাখা হবে তাঁকে।
সোমবার সল্টলেক যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।