দুরন্ত হেরাথ
লেখার শুরুতেই সোজাসাপ্টা বলছি, সেমিফাইনালে সামনে শ্রীলঙ্কা না পড়ায় ভারতের ভাল হল! তার জায়গায় যতই ডেল স্টেইন খেলতে হোক, এবি ডে’ভিলিয়ার্স সামাল দিতে হোক দক্ষিণ আফ্রিকাকে অন্তত উপমহাদেশের উইকেটে খেলা ভারতের কাছে বিগ ম্যাচেও অপেক্ষাকৃত ভাল, আমার মনে হয়।
সোমবারের শ্রীলঙ্কাই ধরুন। নিজেরা ১১৯-এ অল আউট হয়েও নিউজিল্যান্ডকে নিয়ে ছেলেখেলা করে ৫৯ রানে জিতে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমিফাইনালে পাকিস্তান-ওয়েস্ট ইন্ডিজ দু’দলের একটার অপেক্ষায় থাকল। এবং যদিও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করাটা মূর্খামি, তবু সাহস দেখিয়ে বলছি এই শ্রীলঙ্কা মনে হয় ফাইনাল খেলবে। এবং সেখানে সামনে ভারত থাকলে ধোনিরা সে দিনই এ বারের বিশ্বকাপে আসল চ্যালেঞ্জের সামনে পড়বে। সে কথায় পরে আসছি।
তার আগে ভারতের শুক্রবারের দক্ষিণ আফ্রিকা-চ্যালেঞ্জ কতটা ক্ষুরধার হতে পারে সেটা দেখা যাক। শ্রীলঙ্কার মালিঙ্গার মতোই দক্ষিণ আফ্রিকার স্টেইন আছে। টুর্নামেন্টে এখনও পর্যন্ত প্রথম চার সফল বোলারের মধ্যে দু’জনই দক্ষিণ আফ্রিকার। লেগ স্পিনার ইমরান তাহির ১১ উইকেট, স্টেইন ৯। তাহির ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের কাছে কতটা মারাত্মক হবে সেটা অবশ্যই প্রশ্ন। তবে ও কিন্তু কোয়ালিটি স্পিনার। প্রস্তুতি ম্যাচ থেকে এই বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকা চট্টগ্রামে পড়ে থেকে সটান সেমিফাইনালের মতো বড় লড়াইয়ে মিরপুরের উইকেটে এসে পড়ছে বলে ওদের ব্যাটসম্যানদের যেমন সমস্যা হতে পারে, তেমনটা কিন্তু তাহিরের হবে না। বরং মিরপুরে স্পিন সহায়ক উইকেটে বল করতে ও আরও খুশি হবে। তা সত্ত্বেও বলব, তাহিরকেই যদি ভারতীয় ব্যাটিং ভাল ভাবে খেলতে না পারে তা হলে আর কাপ জেতার স্বপ্ন দেখবে কী করে? তা ছাড়া বিপক্ষে শ্রীলঙ্কা থাকলে যেমন অনেক জনকে নিয়ে ভারতের চিন্তা থাকত, ততটা দক্ষিণ আফ্রিকার বেলায় হওয়া উচিত নয় বলে আমার ধারণা। ওই স্টেইন আর ব্যাটে ডে’ভিলিয়ার্স আর ডেভিড মিলার। আসলে আমলা, দু’প্লেসি, দুমিনিওদের ভাল-ভাল ব্যাটসম্যান আরও থাকলেও কুড়ি ওভারের ফর্ম্যাটে সত্যিকারের ভয়ঙ্কর কিংবা ফিনিশার বলতে ডে’ভিলিয়ার্স আর মিলার-ই। আর ম্যাচটা ওয়ান্ডারার্স কিংবা ডারবানে হলে দক্ষিণ আফ্রিকার যতটা মারাত্মক হয়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকত, উপমহাদেশের উইকেটে ঠিক ততটাই হেভিওয়েট হয়ে ওঠার সম্ভাবনা ধোনির ভারতের।
কোহলি-রোহিত-যুবরাজ-রায়না, ধোনি নিজে ভারতের একটার পর একটা ম্যাচ উইনার। যার মধ্যে দু’জন ক্রিজে দাঁড়িয়ে গেলেই ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারে। বোলিংয়ে তিন স্পিনারই দারুণ ফর্মে আছে। পেস আক্রমণে মনে হচ্ছে শামি সেমিফাইনালে দলে ফিরবে। কারণ, ভুবি আর মোহিত অনেকটা একই ধরনের বোলার। শামি দলে থাকা মানে ফর্মে থাকা বোলার যেমন থাকল, পেস বোলিংয়ে বৈচিত্রও বাড়ল। বরং শিখর ধবন ফিরবেই বলে আমি সিওর নই। অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের মতো রাহানে ফের ওপেন করতে পারে। শিখর কেমন যেন সব বলে প্রচণ্ড জোরে শট খেলতে চাইছে। যেন বাউন্ডারি লাইনের বিলবোর্ডগুলো বলের ধাক্কায় ফুটো করে দেবে! ওর ব্যাটিং মানসিকতাটা ঠিক নেই এই মুহূর্তে।
শ্রীলঙ্কা নিউজিল্যান্ডকে মাত্র ৬০ রানে শেষ করেই দেয়নি, রঙ্গনা হেরাথ নামে একটা নতুন শক্তি নিজেদের টিমে বাড়িয়ে নিল। টুর্নামেন্টে প্রথম নেমেই বাঁ-হাতি স্পিনার হেরাথ (৩ রানে ৫ উইকেট) এ বারের বিশ্বকাপে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির ইতিহাসেই দ্বিতীয় সেরা পারফরম্যান্স করল। মালিঙ্গার পেস আর মেন্ডিস/সেনানায়কে-হেরাথের স্পিন জুটি মিলে শ্রীলঙ্কা বোলিং টুর্নামেন্টে এখন সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। ব্যাকআপ বোলার হিসেবে ম্যাথেউজ, কুলশেখরা, পেরেরা শ্রীলঙ্কার বোলিংয়ে কোয়ালিটি-বিকল্পও প্রচুর। আর ব্যাটিংয়ে তো আট নম্বর থিসারা পেরেরা অবধি ফিনিশার। তা ছাড়া ভারতীয় ড্রেসিংরুমে সচিন থাকা মানে টিম ইন্ডিয়ার কাছে যেমন বাড়তি মোটিভেশন ছিল, জয়বর্ধনে-সঙ্গকারা তেমনই শ্রীলঙ্কা দলের কাছে। তা ছাড়া এই বিশ্বকাপ দু’জনেরই শেষ টি-টোয়েন্টি বলে আরও তেতে থাকবে নক আউটে!
তাই মনে হচ্ছে, ভারত ফাইনালে উঠলেই আসল চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে ধোনিদের জন্য।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
শ্রীলঙ্কা ১৯.২ ওভারে ১১৯ (জয়বর্ধনে ২৫, বোল্ট ৩-২০)
নিউজিল্যান্ড ১৫.৩ ওভারে ৬০ (হেরাথ ৫-৩)।
টি-টোয়েন্টির সুপারম্যান
যুবরাজ সিংহ
২০০৭ ডারবানে ১৯ তম ওভারে ইংল্যান্ডের স্টুয়ার্ট ব্রডকে ছয় ছক্কা
রঙ্গনা হেরাথ
২০১৪ চট্টগ্রামে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৩.৩ ওভার ২ মেডেন ৩ রান ৫ উইকেট
অ্যারন ফিঞ্চ
২০১৩ সাউদাম্পটনে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৬৩ বলে ১৫৬, ১১ বাউন্ডারি, ১৪ ওভার বাউন্ডারি
অজন্তা মেন্ডিস
২০১২ হাম্বানটোটায় জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে ৪-২-৮-৬ (টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিকের সেরা)
রিচার্ড লেভি
২০১১ হ্যামিল্টনে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৪৫ বলে সেঞ্চুরি (টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিকের দ্রুততম)