রিওতে নেইমার-প্রেম।
ব্রাজিল জনতা সোমবার রাত থেকেই এমন নেইমার উচ্ছ্বাসে মাতোয়ারা যে স্থানীয়রাই অনেকে আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছেন। টিভিতে সারাক্ষণ নেইমারের ওপর আম জনতার বাইট নেওয়া চলছে। তাঁর ক্যামেরুন বধের ছবি একটু পর পর শপিং মল, এয়ারপোর্ট আর জনবহুল সব জায়গা জুড়ে। গত বছর তো কনফেডারেশনস কাপও ঘরের মাঠে জিতেছিল ব্রাজিল। নেইমার সেই দলেও বিলক্ষণ ছিলেন কিন্তু এই রকম উন্মাদনা তাঁকে ঘিরে ছিল না।
রিও থেকে খেলা দেখতে আসা এক ব্রাজিলীয় উৎসাহী কাল আফশোস করছিলেন, “প্লেয়ারের ইমেজ রাইটস-এর সমস্যার জন্য এখনও নেইমার মুখোশ পরে মাঠে আসতে পারছি না।” নইলে কেউ খ্যাতনামা আর বহুচর্চিত হয়ে গেলেই তাঁর মুখোশ বেরিয়ে যাওয়াটা নাকি ব্রাজিলে স্বতঃসিদ্ধ।
আরও গুছিয়ে বলতে গেলে, যাবতীয় কাপ বিরোধিতা যেন একার ডান পায়ের বুটেই ঘুচিয়ে দিয়েছেন নেইমার। তাঁর নিজের কেমন লাগছে গোটা দেশে এই সুগন্ধী ফুটবল-ঝড় বইয়ে দিতে? সোমবার খেলা শেষে মিডিয়ার সামনে ফিফা ম্যান অব দ্য ম্যাচ নিতে এসেছিলেন নেইমার।
তখন তাঁকে দেখে মনে হচ্ছিল, সত্যি ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ খেলাটা এমন উপভোগ করছেন যেন অচেনার আনন্দ। যেন অপু-দুর্গার প্রথম ট্রেন দেখার মতো এই মাত্র রেলগাড়ি কু-ঝিক-ঝিক করে বেরিয়ে গেল আর তিনি অপার বিস্ময়ে দাঁড়িয়ে থাকলেন!
সাংবাদিকদের সামনে তিনটে প্রশ্নের উত্তর দিয়েই চলে যেতে হল নেইমারকে। ম্যান অব দ্য ম্যাচের পূর্ণাঙ্গ সাংবাদিক বৈঠক করার রীতি নেই। যা বললেন ব্রাজিলের সোনার ছেলে তা মোটামুটি এই রকম :
প্রশ্ন: এই যে গোটা দেশকে আপনার ফুটবল জাদুতে সম্মোহিত করে দিয়েছেন। এ বার বাড়তি একটু চাপ এসে যাচ্ছে না নিজের ওপর?
নেইমার: কীসের চাপ! আমি এত বছর ধরে একটা স্বপ্ন দেখে এসেছি, দেশের হয়ে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ খেলব। ভাল খেলব। এখন যা ঘটছে সেগুলো সবই স্বপ্নের মিলে যাওয়া। আমি এখনও সেই ঘোরে। আর স্বপ্ন মিলে গেলে কেউ চাপে থাকে নাকি? সে-ই তো প্রথম সুখে থাকে।
প্র: ফ্রেড গোল পেলেন গোঁফ রেখে। তাই তো?
নেইমার: হ্যাঁ (এক গাল হাসি), আমি গোলের পর ওকে ছুটে গিয়ে সেটাই প্রথম বললাম— কী! গোঁফ রাখাটা কাজে দিল তো!
প্র: কী হবে শনিবার চিলির সঙ্গে? ওরা তো কঠিন টিম!
নেইমার: কঠিন কম-বেশি সব টিমই। খেলাগুলো তো দেখছেন, যে কোনও টিমকেই আজকালকার দিনে হারানো কঠিন হয়ে গিয়েছে। কেউ এতটুকু জায়গা ছাড়তে চায় না।
বেরিয়ে গেলেন নেইমার। ঘর ভর্তি সবাইকে কেমন একটা আবিষ্ট রেখে। সত্যি তো তিনি চোখের সামনে স্বপ্ন সত্যি হতে দেখছেন। তাঁর চাপ হতে যাবে কেন? ওই রকম প্যাশন যাঁর তাঁর আর একটা ‘পি’ তো ম্যানেজ হয়ে যাওয়ারই কথা— প্রেশার।