সিডনির সাংবাদিক বৈঠকে কিছু কিছু ঠিক ঘটে

সিডনির ক্রিকেট মাঠের আধুনিক নানা সংস্কারের মধ্যে সেই ঐতিহাসিক প্রেস কনফারেন্স রুমটাও ভেঙে ফেলা হয়েছে। যেখানে বছর আটেক আগে সদ্য মাঙ্কিগেট টেস্ট ম্যাচ হেরে উঠে অনিল কুম্বলে বলেছিলেন, “মাঠে দুটো টিম ছিল। অথচ একটাই নিয়ম মেনে খেলেছে।”

Advertisement

গৌতম ভট্টাচার্য

সিডনি শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৫ ০৩:২৮
Share:

সিডনির ক্রিকেট মাঠের আধুনিক নানা সংস্কারের মধ্যে সেই ঐতিহাসিক প্রেস কনফারেন্স রুমটাও ভেঙে ফেলা হয়েছে। যেখানে বছর আটেক আগে সদ্য মাঙ্কিগেট টেস্ট ম্যাচ হেরে উঠে অনিল কুম্বলে বলেছিলেন, “মাঠে দুটো টিম ছিল। অথচ একটাই নিয়ম মেনে খেলেছে।”

Advertisement

ক্রিকেটবিশ্বব্যাপী হুলুস্থুল পড়ে গেছিল কুম্বলের সেই মন্তব্যে। বডিলাইন সিরিজের সময় উত্তেজিত অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক কথাটা প্রথম বলেছিলেন। সেটা যে বুমেরাংয়ের মতো ছিয়াত্তর বছর বাদে ফেরত আসবে পন্টিংয়ের তখনকার অস্ট্রেলিয়া স্বপ্নেও ভাবেনি। বিশ্বকাপের জন্য নানান সংস্কার করতে গিয়ে সিডনি ক্রিকেট মাঠ ঘরটা বিসর্জন দিয়েছে কিন্তু আশপাশটা আজও বোধহয় মন্ত্রপুতঃ। ক্রিকেটারদের এখানে প্রেস কনফারেন্স করতে হলে বোধহয় আজও কিছু হয়! হিন্দি দৈনিক হলে লিখত, কুছ কুছ হোতা হ্যায়!

নইলে শ্রীলঙ্কার হয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করতে এসে সচিত্র সেনানায়কে কেন বলবেন, “সঙ্গা আর মাহেলাকে কাপটা দিতে হলে আমাদের অনেক ভাল ক্রিকেট খেলতে হবে।” শুনে গত বিশ্বকাপে ভারতীয় দলের কথা মনে পড়ে গেল— সচিনের জন্য কাপ জিততে চাই।

Advertisement

সেনানায়কে যে খুব গুছিয়ে কথা বলতে পারেন, এমন নয়। শুকনো সিডনি উইকেটে বোলিংটাও মোটেও গুছিয়ে করতে পারেননি। কিন্তু প্রতিজ্ঞার সুরে বললেন, “এখনও তো আসল টুর্নামেন্ট শুরুই হয়নি। আসল খেলা কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে। তত দিনে টিমের সবাই ফিট হয়ে যাবে। সঙ্গাদের হাতে কাপ ধরানোর জন্য আমরা জান লড়িয়ে দেব।” শুনে অবাক লাগল। এত কঠিন ম্যাচ হেরে ওঠার খানিকক্ষণের মধ্যেই কী করে নতুন প্রতিজ্ঞা জন্ম নেয়? নাকি আগে থেকেই রয়েছে? এত দিন সঙ্গাদের কাপ দেওয়ার মোটিভেশনটা কেউ ফাঁস করেননি?

আর একটা জিজ্ঞাসা অমীমাংসিত থেকে গেল। মাইকেল ক্লার্ক এ দিন যা দাবি করলেন সেটা তাঁর মনের কথা?

এবিপি তাঁকে প্রশ্ন করেছিল, এই যে ম্যাচ সেরে উঠলেন, এটা তো একই সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত জয়? কাগজেপত্রে তাঁর সম্পর্কে যা সব লেখা হচ্ছিল! যা বলা হচ্ছিল চ্যানেলে চ্যানেলে তা যে কোনও জীবিত মানুষকে চাপে রাখার পক্ষে যথেষ্ট। তার ওপর ব্যাটিং হল এক বলের খেলা।

ক্লার্ক বললেন, “না, পরীক্ষা এখন হবে কেন? পরীক্ষা ছিল এক মাস আগে। যখন চোটের পর ফিরে এসে প্রথম ক্লাব ক্রিকেট খেলছিলাম। তখন সত্যি আমার মনে সংশয় ছিল, আমি পারব কি না? সেই সীমান্ত পার করে ফেলার পর আর নিজের কাছে লড়াই কীসের?”

কিন্তু এই যে সবাই সন্দেহ প্রকাশ করছিল আপনার ফিটনেস নিয়ে। সেটাই তো সাংঘাতিক নেতিমূলক একটা প্রতিক্রিয়া যে, আপনি ফিট প্লেয়ারের জায়গা আঁকড়ে খেলছেন! ক্লার্ক এ বার ঘুরলেন একশো আশি ডিগ্রি। বললেন, “একটা সময় মিডিয়ার লেখালিখিতে আমি প্রচণ্ড প্রভাবিত হতাম। এই ঘরে অনেকে বসে আছে যারা আমার ধরনটা জানে। ভুলভাল লিখলে আমি সোজা সেই জার্নালিস্টকে পাকড়াও করতাম— এই যে লিখেছ মিথ্যে সব কথা, আমায় বলো কোথা থেকে পেলে! এই ঘরে বসে থাকা অনেকেই সেই হ্যাবিটটা জানে। কিন্তু এখন আর সেটাও করি না।”

তা হলে কী করেন?

“হাসি বা স্রেফ তাচ্ছিল্য করি। এই জীবনে আমি অভ্যস্ত হয়ে গেছি। আমি জানি ওদের কাগজ বিক্রি করাতে হবে আর চ্যানেলওয়ালাদের কম্পিটিশনে জিততে হবে। তো ওরা নিজেদের স্বার্থ মেনেই বেপরোয়া। আমি সেটা নিয়ে ভেবে কী করব? আমার নিজের মনে হয়েছে আজ সেঞ্চুরিটা ফসকে গেল। সব অভিজ্ঞতা দিয়ে ওটা করার চেষ্টা করছিলাম। আজকের মতো হল না।”

ক্লার্ক দৃশ্যতই যেটা অনুচ্চারিত রাখলেন সেই উহ্য রাখা কথাটা সবাই সহজেই বুঝল। পরের দিন সেঞ্চুরি করে তোদের মুখে চূড়ান্ত ঝামাটা ঘষে দিতে চাই রে অস্ট্রেলিয়ান মিডিয়া!

বললাম না, প্রেস কনফারেন্স সংশ্লিষ্ট এলাকাটায় একটা কিছু আছে। কুছ কুছ হোতা হ্যায়। সরি, এটা তো বাংলা দৈনিক— এই জায়গাটায় কিছু কিছু ঘটে!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement