দুই অধিনায়ক ও অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী।
গোটা ভারতীয় টিম চায়ের নিমন্ত্রণে উপস্থিত। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, তিনি কোথায়?
মহেন্দ্র সিংহ ধোনি টি পার্টিতে নেই। যাননি।
নিমন্ত্রণ যিনি করেছিলেন, তিনি যে সে নন। স্বয়ং অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবট। সেখানে পুরো ভারতীয় টেস্ট টিম গেল। বিরাট কোহলি এবং স্টিভ স্মিথ পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ছবি তুললেন। কিন্তু এমএসডিকে কোথাও দেখা গেল না। অথচ টিমের সঙ্গে তিনিও এখন সিডনিতে। যার পর প্রশ্ন উঠে পড়ল, টেস্ট টিমের আর অংশ নন বলেই কি অ্যাবটের নিমন্ত্রণরক্ষা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলেন ধোনি?
ধোনির অনুপস্থিতির খবর যদি শিরোনামোচিত হয়, তা হলে অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রীও খুব কম গেলেন না। চলতি সফরে বিরাট কোহলির সঙ্গে মাঝেমধ্যেই লাগছে অস্ট্রেলীয়দের। মিচেল জনসনের সঙ্গে বিরাটের স্লেজিং-যুদ্ধ ইতিমধ্যে চরমে উঠেছে। অস্ট্রেলীয় কোচ ডারেন লেম্যান আবার বিরাটকে তির্যক খোঁচা দিয়ে রেখেছেন। এ সবের মধ্যে আবার অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী চায়ের পার্টিতে মজা করে বলে রাখলেন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির হয়ে খেলার সময় তিনি না পারতেন ব্যাটিং, না বোলিং, না ফিল্ডিং। শুধু স্লেজিংটা খুব ভাল পারতেন!
“আমার তো মনে হয়, স্লেজিংয়ের জন্যই টিমে আমি জায়গা পেতাম,” এ দিন চায়ের আসরে ভারতীয় টিমের সঙ্গে কথোপকথনের সময় বলে ফেলেন অ্যাবট। এবং টি পার্টি নিয়েও রসিকতা করতে ছাড়েননি। তিনি নাকি বিভিন্ন লোকজনকে টি পার্টির কথা জানাতে গেলে তাঁকে পাল্টা প্রশ্ন করা হয় যে, মেলবোর্ন টেস্টে অস্ট্রেলিার ডিক্লেয়ারেশন নিয়ে তাঁর কী মতামত? এমসিজি টেস্টের শেষ দিন সকালে স্টিভ স্মিথের দেরি করে ডিক্লেয়ার করার সিদ্ধান্ত মোটেও ভাল লাগেনি অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটমহলের। অ্যাবট যদিও স্মিথকে সমর্থনই করেছেন। “প্রথমে ভেবেছিলাম, এ সবে ঢুকবই না। তার পর ভেবে দেখলাম, স্মিথ তো নিজের কাজটাই করেছে। ওর কাজটা ছিল অস্ট্রেলিয়ার রানকে যত পারা যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে যাওয়া। কারণ ভারত ক্রমাগত বোঝাচ্ছে যে, ওদের হালকা ভাবে নিলে খুব ভুল হবে।”
অ্যাবটের মতো সম্প্রীতির সুর আচমকা অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারদের কেউ কেউও দেখাতে শুরু করেছেন। প্রাক্তন যেমন, বর্তমানও তেমন। স্টিভ স্মিথের টিমের উইকেটকিপার ব্র্যাড হাডিন এ দিন বলে দিয়েছেন, ধোনির মতো ভদ্রলোক তিনি খুব দেখেছেন। আর ভারত যেখানে ছিল সেখান থেকে টিমকে অন্য একটা উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন ধোনি। “আমি তো অবাকই হয়ে গিয়েছিলাম ওর অবসরের সিদ্ধান্তে। ও ভারতীয় ক্রিকেটকে দারুণ জায়গায় নিয়ে এসেছে। ওর বিরুদ্ধে খেলা সব সময় আমি পছন্দ করেছি। ধোনির মতো ভদ্রলোকও খুব কম আছে।” ঘটনা হল, ধোনি নিয়ে প্রশংসার কারণ পাওয়া যাবে। মাঠের মধ্যে মাথা গরম করা, বা স্লেজিং তাঁর স্বভাববিরুদ্ধ ছিল। কিন্তু তাই বলে বিরাট কোহলিকে কুর্নিশ? অবাক করা হলেও, ঘটছে। প্রাক্তন অস্ট্রেলীয় পেসার ড্যামিয়েন ফ্লেমিং করছেন। “বিরাট খুবই আগ্রাসী ক্রিকেটার। প্রতিপক্ষকে একেবারে পিষে ফেলতে পারলে খুশি হয়। আর ওকে কেউ কিছু বললে, পাল্টা দেওয়ার ব্যাপারে দু’বার ভাবে না। সবচেয়ে বড় কথা, বিরাট বেশ আনন্দ পায় ওকে কেউ স্লেজ করলে,” বলে দিয়েছেন ফ্লেমিং। এমনকী তিনি বল করলে কোহলিকে নাকি কখনও স্লেজই করতেন না! ফ্লেমিংয়ের যুক্তি, “ও তো ওটাকে অস্ত্র করে তোমার উপরেই ব্যবহার করবে। তেন্ডুলকর বা গিলক্রিস্টের মতো ও নয় যে, মুখ দেখে কিছু বোঝা যাবে না। সচিনকে কেউ স্লেজ করলে ও হয়তো ভেতরে ভেতরে রেগে যাবে। কিন্তু বাইরে কিছু বোঝাবে না। কোহলির সে সব নেই। আমার মনে হয় কোহলির মতো কিছু ব্যক্তিত্ব থাকলে তাতে ক্রিকেটেরই ভাল হবে।”
(তথ্য সহায়তা: সিডনি থেকে চেতন নারুলা)