সাও পাওলো স্টেডিয়ামে ১২ জুন রেফারির বাঁশি বাজার আগেই কিন্তু লড়াই শুরু হয়ে গেল লুই ফেলিপে স্কোলারির।
মাঠের বাইরে ব্রাজিল কোচের প্রতিদ্বন্দ্বীর নাম— পেলে!
স্কোলারি তাঁর বিশ্বকাপ টিম জানানোর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পেলে বলে দিলেন, এই দলে তিনি আরও অভিজ্ঞতা দেখার আশা করেছিলেন। বিশ্বকাপ দলে তিনি চেয়েছিলেন কাকা-রবিনহোর মতো ফুটবলারকে।
ফুটবল কিংবদন্তির মতে, ব্রাজিল দলে তারুণ্যের সঙ্গে প্রয়োজন ছিল অভিজ্ঞতার। যে কারণেই রবিনহো বা কাকার মতো ফুটবলারকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তে তীব্র চটেছেন পেলে। স্কোলারির দলকে কটাক্ষ করে পেলে বলেন, “খুব বেশি চমক নেই বিশ্বকাপ দলে। যারা থাকবে আশা করেছিলাম, তারাই আছে। কিন্তু এও ভেবেছিলাম রবিনহো, কাকার মতো অভিজ্ঞ ফুটবলারদের ডাকা হবে দলে। ওরা দলের সঙ্গে থাকলে ব্রাজিলেরই লাভ হত।”
পাশাপাশি পেলে এও পরিষ্কার করে দিয়েছেন, ব্রাজিলের অধিনায়ক হিসেবে নেইমারকে একদমই পছন্দ নয় তাঁর। পেলের হুঁশিয়ারি, “কখনওই ভাবা উচিত নয় নেইমার এই দলের অধিনায়ক হতে পারবে। আমার মতে থিয়াগো সিলভা বা ফ্রেডের অধিনায়ক হওয়া উচিত।”
পেলে যখন তাঁর বক্তব্য সাফ বলে দিচ্ছেন, তখন স্কোলারিও তাঁর দল বাছা নিয়ে পাল্টা যুক্তি দিয়েছেন। ব্রাজিল কোচ বলেছেন, “নিজেদের অভিজ্ঞতা দিয়ে আমি তাতাব এই ফুটবলারদের। দলের অনেক ফুটবলারের বিশ্বকাপে বেশি খেলার অভিজ্ঞতা না থাকলেও কোনও সমস্যা হবে না।”
তবে বিশ্বকাপে সে রকম না খেললেও ব্রাজিলের বর্তমান দলের অনেক ফুটবলারই ইউরোপের সেরা ক্লাবগুলোয় খেলছেন। যেমন বার্সেলোনায় নেইমার, প্যারিস সাঁ জাঁয় সিলভা বা চেলসিতে অস্কার। কোচের মতে, ইউরোপে খেলার এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে বিশ্বকাপে। স্কোলারি বলছেন, “আমার দলের অধিকাংশ ফুটবলারই ইউরোপের ক্লাবে খেলছে। অনেক বড় বড় ম্যাচে খেলেছে ওরা। এই কারণে আমার পুরো ভরসা আছে ওদের উপরে।”
পেলের চিন্তা যদি দলে অভিজ্ঞতার অভাব হয় তবে ১৯৭০-এর ব্রাজিলের বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য রিভেলিনোর শঙ্কা অন্য জায়গায়। তিনি মনে করছেন, ব্রাজিলের এ বারের ফরোর্য়াড লাইন সে রকম শক্তিশালী নয়। তার চেয়ে ডিফেন্সকে অনেক মজবুত দেখাচ্ছে। “প্রায় প্রতিটা বিশ্বকাপেই ব্রাজিল দলে অনেক নামী আক্রমণাত্মক ফুটবলার খেলেছে। যেমন পেলে, ভাভা, রিভাল্ডো বা রোনাল্ডো, যারা যে কোনও মুহূর্তে ম্যাচের রং পাল্টাতে পারত। এই দলে ফ্রেড একমাত্র ভাল স্ট্রাইকার,” বলেন রিভেলিনো।
পেলে ও রিভেলিনোর ভাবনায় যদি ব্রাজিল দল থাকে, তবে জিকোর চিন্তা ৬৪ বছর আগের বিপর্যয়। ‘সাদা পেলের’ একমাত্র প্রার্থনা, আবার ঘরের মাঠে সেই ‘মারাকানাজো’ দুঃস্বপ্ন যেন না হানা দেয়। ১৯৫০ বিশ্বকাপের ফাইনালে উরুগুয়ের কাছে চমকপ্রদ ভাবে হারতে হয়েছিল ব্রাজিলকে। যা আজও বিশ্বফুটবলে পরিচিত ঐতিহাসিক বিপর্যয় হিসাবে। জিকো মনে করছেন, কোনও ভাবে উরুগুয়ের মুখে পড়ে গেলে ব্রাজিলীয় ফুটবলারররা মানসিক ভাবে চাপে পড়ে যাবেন। এই কারণেই উরুগুয়ের বিরুদ্ধে যাতে কোনও ম্যাচ না খেলতে হয়, সেই প্রার্থনাই করছেন জিকো। “আর্জেন্তিনা পড়ুক তাও ভাল। উরুগুয়ে যেন আমাদের সামনে না পড়ে। ওরা একমাত্র দল যারা মানসিক ভাবে ব্রাজিলকে সমস্যায় ফেলতে পারবে,” বলছেন জিকো।