শিল্ড নয়, কর্তাদের অফিসে তালা ঝোলানো উচিত

পাড়ার চায়ের দোকান হোক কিংবা অফিসের আড্ডা। অনুষ্ঠান বাড়ি, ক্লাব এমনকী সংবর্ধনা সভাও! ইদানীং যেখানেই যাচ্ছি, প্রসঙ্গটা এড়াতে পারছি না। উল্টে আলোচনা যত এগোচ্ছে, উত্তেজনা বেড়ে যাচ্ছে। তবু কিছুতেই মানতে পারছি না বাংলা ফুটবল সূর্যাস্তের পথে! মানবই বা কেন? অনেকে বলতে পারেন, গত ১০ বছর আই লিগ এখানে আসছে না।

Advertisement

সুব্রত ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৪ ১৮:৪০
Share:

পাড়ার চায়ের দোকান হোক কিংবা অফিসের আড্ডা। অনুষ্ঠান বাড়ি, ক্লাব এমনকী সংবর্ধনা সভাও!

Advertisement

ইদানীং যেখানেই যাচ্ছি, প্রসঙ্গটা এড়াতে পারছি না। উল্টে আলোচনা যত এগোচ্ছে, উত্তেজনা বেড়ে যাচ্ছে। তবু কিছুতেই মানতে পারছি না বাংলা ফুটবল সূর্যাস্তের পথে!

মানবই বা কেন? অনেকে বলতে পারেন, গত ১০ বছর আই লিগ এখানে আসছে না। আমার প্রশ্ন, আই লিগ কি ভারতীয় ফুটবলে শ্রেষ্ঠত্বের একমাত্র পরিচয়? শেষ চার বছরে ইস্টবেঙ্গল তিন বার ফেড কাপ জিতেছে। বাংলা দু’বার সন্তোষ চ্যাম্পিয়ন। এ বারের ডুরান্ড জিতেছে মহমেডান। বরদলৈ ভবানীপুর। ইস্টবেঙ্গল এএফসি কাপ সেমিফাইনাল খেলে ইতিহাস গড়ল। আন্তর্জাতিক আর সর্বভারতীয় টুর্নামেন্টে ক্লাবের পারফরম্যান্স দেশ এবং রাজ্যের ফুটবলকে সমৃদ্ধ করে। সে ক্ষেত্রে বাংলা ফুটবল এখনও গর্বিত করে চলেছে। একটা বছর এখানকার কোনও ক্লাব ফেড কাপ জেতেনি বলে বাংলা ফুটবলে অন্ধকার, বলতে পারছি না।

Advertisement

বাংলা বনাম গোয়া ফুটবল নিয়ে একটা তুলনার ঢেউও বইছে সর্বত্র। প্রথমেই পরিষ্কার করে দিতে চাই, ভারতীয় ফুটবলে বাংলার যা অবদান, তার ধারেকাছে আসার যোগ্যতা নেই গোয়ার। পাঁচবার আই লিগ আর দু’তিনবার ফেড কাপ জিতলেই ‘ফুটবল-সাম্রাজ্য’ তৈরি হয়ে যায় না। কেননা ফুটবল মানে শুধুই ট্রফি নয়, মানুষকে আনন্দ দেওয়াও অতি জরুরি। আর মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলকে বাদ দিয়ে ভারতীয় ফুটবলে সেই আনন্দ কোনও দিন উপভোগ করা যাবে না। এই তো গোয়ারই দু’টো ক্লাব চার্চিল-স্পোর্টিং ক্লুবের ফেড কাপ ফাইনাল হল। ক’টা লোক এসেছিল স্টেডিয়ামে?

বাংলা ফুটবলের তবে সমস্যা নেই তা-ও নয়। সে রকম নতুন মুখ কোথায়? মেহতাব, নবি, সৌমিকদের দিকেই এখনও তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে। কয়েক দিন আগেই দেখলাম আনন্দবাজারে হাবিবদা বলেছে, “যোগ্য ফুটবলার সুযোগ পাচ্ছে না। যারা সুযোগ পাচ্ছে, তারা আবার যোগ্য নয়।” কথাটা ভুল নয়। কেননা শুধু কলকাতা থেকে তো আর ফুটবলার উঠবে না। প্রতিভার সন্ধানে জেলায় জেলায় ঘুরতে হবে। আমাদের এখানে জেলা থেকে ফুটবলার তুলে আনার সঠিক পরিকল্পনাই নেই। না আইএফএ-র কোনও উদ্যোগ আছে, না তিন প্রধানের। আইএফএ-র উচিত, আঠারো জেলাতেই বাংলার একজন করে প্রাক্তন ফুটবলার নিযুক্ত করে ক্যাম্প করা। আঠারো জেলা থেকে সেরা আঠারো ফুটবলার বেছে ‘জেলা একাদশ’ দল গড়া। যারা আইএফএ-র প্রথম ডিভিশনে খেলবে। যদি সেটা সম্ভব না হয়, তা হলে আঠারো জেলা থেকে ফুটবলার তোলার দায়িত্বটা তিন প্রধানের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হোক। প্রত্যেক প্রধানকে ছ’টা করে জেলার দায়িত্ব দিয়ে। তিন প্রধানই না হয় বিভিন্ন জেলায় ক্যাম্প করে ফুটবলার তুলে নিয়ে আসুক। এবং প্রয়োজনে বেচাকেনা করে ক্লাবের কোষাগারও ভরে তুলুক। ঠিক যেমন লিভারপুল কখনও হংকংয়ে ক্যাম্প করছে, ম্যান ইউ করছে দক্ষিণ কোরিয়ায়।

আমাদের আরেকটা সমস্যা হল প্রশাসনিক ব্যর্থতা। শুধু কর্মকর্তাদের দোষ দিতে চাই না। আমাদের মতো প্রাক্তনদেরও দায়িত্ব নিতে হবে। ক্লাবের বিদেশি ফুটবলার নির্বাচনে আরও পেশাদারি মনোভাব তৈরি করতে হবে। তবে প্রশাসনিক ব্যর্থতার সবচেয়ে বড় উদাহরণ হল, আইএফএ শিল্ড। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একটা বহু পুরনো ফুটবল টুর্নামেন্টকে অযোগ্য পরিচালনার খেসারত দিতে হচ্ছে। ভাবুন তো, এ বারের শিল্ডে কলকাতা বাদে দেশের অন্য কোনও জায়গার একটাও আই লিগ টিম নেই! ইউনাইটেড সিকিমের মতো টিমও মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে। ভাল বিদেশি টিমের তো পাত্তাই নেই। যাদের ধরেবেঁধে নিয়ে আসা হয়েছে, তারা স্রেফ নিম্নমানের। এর পর অনেকেই হয়তো বলে দেবেন, শিল্ড বন্ধই করে দেওয়া উচিত। গুরুত্বহীন টুর্নামেন্ট করে বা তাতে খেলে কী লাভ? উল্টে আই লিগের মাঝপথে চোট-আঘাত লেগে যাওয়ার আশঙ্কা। কিন্তু সেটা কোনও বাস্তব চিন্তা হতে পারে না। তা হলে তো এফএ কাপ আর কার্লিং কাপও বন্ধ করে দিতে হয়। শুধুই ইপিএল চালাতে হয়।

শিল্ডে তালা না মেরে উচিত আইএফএ-র এই কর্তাদের অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement