কাল আবার বাংলা বনাম রামন

‘শামি আর আমি একসঙ্গে মানে তামিলনাড়ু চাপে’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৪ ০৫:২৯
Share:

Advertisement

রবিবাসরীয় সন্ধেয় ক্লাবহাউসে ঢুকে দোতলায় আর যাওয়া হয়নি ডব্লিউ ভি রামনের। বাস্তবিক ভাবে ছবিটা দেখার কোনও কথাও ছিল না। ইডেনে যে সপ্তাহব্যাপী টুর্নামেন্ট চলবে সোমবার থেকে, সেই টুর্নামেন্টে বাংলার জার্সিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মুহূর্ত। বিজয় হাজারে ট্রফি (রঞ্জি একদিনের টুর্নামেন্ট) জিতে ভারতসেরা হওয়ার মুহূর্ত।

তিনটে বছরে কত কিছু পাল্টে যায়!

Advertisement

সে দিনের বাংলার চাণক্য আজ প্রতিপক্ষের দ্রোণাচার্য। পরিবর্তনের নিয়ম মেনে সেটা তিনি হতেই পারেন। কিন্তু গ্রহণযোগ্যতা? যতই রামন টিম তামিলনাড়ু নিয়ে ইডেনে ঢোকার সময় মহম্মদ শামির সঙ্গে দাঁড়িয়ে আড্ডা মারুন, যতই অশোক দিন্দাকে জিজ্ঞেস করুন কী, ম্যারেড লাইফ কেমন চলছে, ঘটনা হল, গত রঞ্জি ট্রফিতে চেন্নাইয়ে লক্ষ্মীরতন শুক্লর বাংলার জন্য তাঁর ‘খোঁয়াড়’ তৈরি করা আপাত-দৃষ্টিতে ইতিহাস হলেও বাংলার কাছে এখনও বোধহয় ভীষণ ভাবে বর্তমান।

প্রাক্তন কোচের সঙ্গে দূরত্বটা কখনও প্রকাশ্য। কখনও ঠারেঠোরে।

বাংলা টিম ম্যানেজমেন্টের এক জন পরিষ্কার বলে গেলেন, রামনকে প্র্যাকটিসে দেখেছেন। কথা বলেননি। বলবেনও না। ম্যাচ শেষ হলে ভাবা যাবে।

সিএবি-র দুই উচ্চপদস্থ কর্তা বাংলা সহ বরোদার প্র্যাকটিসও দেখে এলেন (একসঙ্গে তিনটে টিমের প্রাকটিস চলছিল)। কিন্তু রামনের দিকে এগোলেন না।

ফের দেখা। পুরোনো বন্ধু ইরফান পাঠানের সঙ্গে দিন্দা। যুদ্ধের আগে। প্রাক্তন বাংলা কোচ রামনের সঙ্গে শামি।

রবিবাসরীয় ইডেনের ছবি শঙ্কর নাগ দাসের।

পুরনো কোচের প্রসঙ্গ উঠতে হাসতে দেখা গেল অশোক দিন্দাকে। বলে দিলেন, “রঞ্জিতে কী হয়েছিল আর ভাবছি না। কিন্তু এটাও ঠিক যে, বাইশ গজে উনি নামবেন না। যতই ড্রেসিংরুমে বসে স্ট্র্যাটেজি করুন। মাঠে ওঁর কিছু করার আছে?”

খারাপ লাগছে? কেন করতে গেলেন ও রকম উইকেট? পুরনো টিমের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি দেখে এখন আক্ষেপ হয়?

“আরে সেটা তো এক মাস আগের কথা। আর সেটা করেছিলাম স্ট্র্যাটেজি বুঝে, আমাদের শক্তি বুঝে। তা ছাড়া ওটা আলাদা ফর্ম্যাট ছিল, এটা আলাদা। একটা রঞ্জি ট্রফি। একটা বিজয় হাজারে। কবে কী হয়েছে, ভেবে লাভ নেই। এখনকার পরিস্থিতিতে সে সব ভাবা উচিতও নয়,” টিমের প্র্যাকটিস চালানোর ফাঁকেই উত্তর দিয়ে দেন রামন। বরং কিছুটা যেন ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামেন। অশোক মলহোত্রর বাংলাকে বলে দেন দুর্ধর্ষ টিম। বলে দেন, “বাংলার যা প্রতিভা আছে, তাতে রঞ্জিতে এ রকম একটা পারফরম্যান্স ওদের দরকার ছিল। অশোক টিমটাকে নিয়ে দুর্দান্ত কাজ করেছে। আর বাংলার ক্রিকেটারদের সঙ্গে ঝামেলার কথা বলছেন। রঞ্জি চলার সময় আমি তো ফাঁকে ফাঁকে ওদের ফোন করেছি। কথা বলেছি।” শামি-দিন্দা নিয়ে গঠিত বাংলার পেস আক্রমণকে যথাযোগ্য সম্মান দেখান। টিমে দীনেশ কার্তিক, মুরলী বিজয়, সুব্রহ্মণ্যম বদ্রিনাথের মতো ব্যাটসম্যান থাকা সত্ত্বেও বলে ফেললেন, “আমি তো আমার ছেলেদের বলেছি, তোমরা সুযোগ পাচ্ছ একটা সেরা পেস আক্রমণ খেলার। তোমরা কতটা ভাল, সেটা এ বার প্রমাণ হবে।”

কিন্তু আবেগ তার কী হবে? তামিলনাড়ু ও বাংলা, দু’টো টিমের ক্রিকেটাররাই তাঁর ছাত্র। বিজয়-অশ্বিন (যিনি সোমবার ঢুকছেন) বর্তমান, লক্ষ্মীরতন শুক্ল-অশোক দিন্দারা তাঁর পুরনো যোদ্ধা। বাংলার পূর্বতন কোচ এ বার হেসে ফেলেন। “বাংলা ক্রিকেটারদের দেখলে প্রবল আবেগ আসা স্বাভাবিক। আসেও। কিন্তু আমি তো পেশাদার। আমাকে আমার কাজটা করতে হবে।”

বাংলাও নিজেদের কাজটা করতে চাইছে। দু’রকম টিমের ভাবনা আছে টিম ম্যানেজমেন্টের। পিচে ঘাস ছাড়া থাকলে শামি-দিন্দা-বীরপ্রতাপ-লক্ষ্মী-সায়ন মিলে পাঁচ পেসার। ঘাস কম থাকলে, পিচ ব্যাটসম্যান-ঘেঁষা হলে হয়তো বীরপ্রতাপকে বসিয়ে ইরেশ সাক্সেনা। দিন্দা বলছিলেন, “আমাদের টিমটা দেখুন। মনোজ-ঋদ্ধি ভাল ফর্মে। ইডেন লক্ষ্মীর পয়া মাঠ। ও যদি রান করতে শুরু করে দেয়, তা হলে আমরা মারাত্মক হয়ে যাব।” দিন্দা চান ইডেনে জাতীয় নির্বাচকদের সামনে নিজেকে প্রমাণ করে ছাড়তে। আশায়, ঘরোয়া ক্রিকেটে এই মরসুমে প্রথম বার শামি-দিন্দা জুটি ইডেনে আগুন ছোটাবে। বলেও দিলেন, “শামি আর আমি থাকা মানে প্রতিপক্ষ ভাববে আমাদের নিয়ে। ভাববে, বাংলা পেস অ্যাটাকে কারা কারা আছে। প্রতিপক্ষের জন্য আমরা একসঙ্গে থাকা মানেই বাড়তি চাপ।”

প্রতিপক্ষ বলতে কে, বোঝা যায়। শামি-দিন্দা একসঙ্গে একটা প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধেই নামছেন। তার পর শামি চলে যাবেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। দিন্দা দায়িত্ব সামলাবেন বাংলার।

প্রতিপক্ষের নাম তামিলনাড়ু। শুধু তাই নয়, বেঙ্গল এক্সপ্রেসের আরও একটা কথা যথেষ্ট ইঙ্গিতবাহী।

দিন্দা বারবার বলে গেলেন, ম্যাচটা এ বার ইডেনে। এ বার বাংলার ঘরের মাঠে!

সোমবার বিজয় হাজারে প্রি কোয়ার্টারে-- সার্ভিসেস : বিদর্ভ, রেলওয়েজ : বরোদা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement