রবিন ও নারিন: নাইট অধিনায়কের দুই অস্ত্র। বুধবার।
শাহরুখ খান আজ রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারবেন!
ঐতিহাসিক ভাবে মুম্বই ম্যাচ মানে কিং খানের কাছে বরাবরের মর্যাদা-যুদ্ধ। ‘অভব্য আচরণের’ অভিযোগে বছর দু’য়েক ধরে ওয়াংখেড়ে তাঁকে আর মাঠে ঢুকতে দেয় না, বিতর্ক আজও বিদ্যমান। শুধু তাই? আইপিএল ভূমিষ্ঠ হওয়ার বছরে নাইটদের কাছে কিং খানের বার্তা তো আইপিএলে লোকগাথার পর্যায়ে চলে গিয়েছে। সে বার কিং খান টিমকে অনুরোধ করেছিলেন, তোমাদের কাছে কখনও কিছু চাইনি। তোমরা আমাকে এই ম্যাচটা শুধু জিতিয়ে দাও। মুম্বইয়ে আমাকে সবাই বাদশা বলে জানে। সে বার কেকেআর পারেনি। পরেও তেমন না। কিন্তু বুধবারের পর আইপিএল সেভেনে স্কোরলাইন বলছে কেকেআর ২: মুম্বই ইন্ডিয়ান্স-০!
শাহরুখ খান আজ রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারবেন।
তাঁর এই টিমে হালফিলে সবচেয়ে বেশি বিদ্রূপের পাত্র কে, উত্তরের জন্য কোনও আইপিএল অ্যাওয়ার্ড নেই। সিনিয়র পাঠানের মিসফিল্ডে হাসাহাসি চলেছে এত দিন, ব্যাট করতে নামলে আর একচোট। আর আজ? ওই একই ইউসুফ পাঠান ‘কিপ কাম’ পুরস্কার নিয়ে গেলেন! রবিন উথাপ্পা যখন আউট হয়ে ফিরে গেলেন, জেতার জন্য তখন বাকি চার ওভারে নাইটদের চাই ২৬। রাজস্থান ম্যাচের মতো এ বারও যে নাইট ব্যাটিং তাসের ঘরের মতো ধসে পড়ল না, তার পিছনে অন্যতম অবদান ইউসুফের ১৩ বলে ২০। ওয়াইড লং অনে কোরি অ্যান্ডারসনের ক্যাচটা মিস করার পর নাইট-ভক্তদের মধ্যে তাঁকে নিয়ে যে ব্যঙ্গটা শুরু হয়েছিল, সেটা রাতের বরাবাটিতে কোথায়? বরং সঞ্চালকের প্রশ্নের উত্তরে হেসে গড়িয়ে পড়ছেন ইউসুফ, আর সিনিয়র পাঠানের উৎফুল্ল মেজাজ দেখে উল্লাসে ফেটে পড়ছে সোনালি-বেগুনি সমর্থককুল।
শাহরুখ খান আজ রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারবেন।
নিলামের সময় তো কম সমালোচনা হয়নি কর্নাটকীকে নিয়ে। বলা হত, বিগ ম্যাচ পারফর্মার নয়, বিগ ম্যাচে ডোবানোর এক্সপার্ট। আজ পর্যন্ত চারটে ফ্র্যাঞ্চাইজির জার্সি গায়ে মাঠে নেমেছেন উথাপ্পা, কিন্তু এই ফর্মটা কখনও নিয়ে নামেননি। সেই উথাপ্পা আর আজকের উথাপ্পার মধ্যে ততটাই মিল যতটা বিজেপি আর কংগ্রেসে!
শুরুতেই মুম্বইকে ধাক্কা দিলেন মর্কেল। বুধবার কটকে নাইটদের উচ্ছ্বাস।
রবিন এখন রবিনহুড। যিনি আইপিএল সেভেনে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ রানের মালিক। সব মিলিয়ে তিন নম্বরে। যিনি তাঁর পছন্দের ওপেনিংয়ে নিয়মিত সুযোগ পাচ্ছেন এবং প্রায় প্রতিটা ম্যাচে সেটাকে কাজে লাগাচ্ছেন। যিনি ক্যাপ্টেনের পরিপূরক, ক্যাপ্টেনের একান্ত ভরসার জায়গা। যিনি হাফসেঞ্চুরি করলে তাই সবার আগে হাততালিটা আসে তাঁর ক্যাপ্টেনের কাছ থেকে। সদা হাস্যময়, ভীষণ বিনয়ী কর্নাটকী ব্যাটসম্যানের এ দিনের ৫২ বলে ৮০ প্রমাণ করে দিল, কেকেআর শিবির পিচটাকে কত ভাল ব্যবহার করতে পেরেছে। এই পিচে অযথা বড় শটের ঝুঁকি না নিয়ে সিঙ্গলস নেওয়া দরকার ছিল। আর উথাপ্পারা ঠিক সেটাই করে গিয়েছেন। লুজ বল পেলে মারো, না হলে স্ট্রাইক রোটেট করো— খুব সহজ ছিল নাইটদের স্ট্র্যাটেজি। অযথা প্যানিক বাটনে চাপ না দিয়ে। সবচেয়ে বড় কথা, দুর্লভ কিছু ওপেনিং পার্টনারশিপ টিমকে দিয়ে যাচ্ছেন উথাপ্পা। সদ্য ফর্মে ফেরা অধিনায়ককে চাপমুক্ত রেখে। কোনও দিন গম্ভীরের সঙ্গে সেঞ্চুরি পার্টনারশিপ হচ্ছে, হাফসেঞ্চুরিও আসছে প্রায় রোজ। গম্ভীর আজ ১৪ রানে আউট হয়ে গেলেন। কিন্তু উথাপ্পা সেটা এক বারও বুঝতে দিলেন কি?
শাহরুখ খান আজ রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারবেন।
তাঁর টিমের বোলিং এ বারের আইপিএলে সবচেয়ে শক্তিশালী বললে ভুল বলা হবে না। সুনীল নারিন তো আছেনই। সঙ্গে পীযূষ চাওলা, মর্নি মর্কেল, সাকিব আল হাসান, জাক কালিস, উমেশ যাদব। যে বোলিং লাইন-আপ নিয়ে উচ্ছ্বসিত টিমের মেন্টর ওয়াসিম আক্রম। যে বোলিং এতটাই অপ্রতিরোধ্য যে, বিনয় কুমারের মতো নাম ম্যাচের পর ম্যাচ বসে আছেন রিজার্ভ বেঞ্চে! যে বিনয় কুমার অন্য যে কোনও টিমে খেললে নিয়মিত প্রথম টিমে থাকতেন। আর শুধু বোলিং শক্তি নয়, বোলারদের ব্যবহারেও যেন চাণক্য-সম গম্ভীর। নারিনকে প্রথমে একটা বা বড়জোর দুটো ওভার করাচ্ছেন। বাকি ওভারগুলো বাঁচিয়ে রাখছেন ডেথের জন্য। যেখানে এসে ম্যাচের পর ম্যাচ ব্যাটসম্যানদের টুঁটি চেপে ধরছেন ক্যারিবিয়ান রহস্য। প্রতিপক্ষের দেড়শো তুলতেই কালঘাম বেরিয়ে যাচ্ছে। এ দিনও তো শেষ ওভারে রোহিতের উইকেটটা তুলে নিলেন নারিন, মাত্র চার রান খরচ করে।
মুম্বই এ দিন পারল না দু’টো কারণে। প্রথমত, হরভজন সিংহ ছাড়া এমন কোনও স্পিনার তাদের ছিল না, যে এমন অসমান বাউন্সের উইকেট থেকে ফায়দা তুলবে। প্রজ্ঞান ওঝা ছিলেন, কিন্তু তাঁর বলে টার্ন কম, আসেও অনেক আস্তে। দ্বিতীয়ত, লাসিথ মালিঙ্গার ব্যর্থতা। ম্যাচ শুরুর আগে দেখা গিয়েছিল, আক্রমের সঙ্গে ক্লাসে ব্যস্ত শ্রীলঙ্কান পেসার। কী শিখলেন কে জানে, লাইন নিয়ে ভুগলেন। লেংথ নিয়ে ভুগলেন। পরের পর ওয়াইড হল, উইকেট এল না। মুম্বইও তলিয়ে গেল। অলৌকিক কিছু না হলে আইপিএল সেভেন প্লে অফে বোধহয় দেখা যাবে না মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে।
শাহরুখ খান আজ রাতে তাই নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারবেন।
হায়দরাবাদ হারছে। মুম্বই হারছে। আরসিবি হারছে। একমাত্র তাঁর কেকেআর জিততে জিততে প্লে-অফের খুব কাছাকাছি চলে এসেছে। ১০ ম্যাচে পাঁচ জয়, পয়েন্ট ১০। প্লে অফের টিকিট প্রায় কনফার্মড।
কেকেআর ছাড়া কেকেআরকে আর এখান থেকে হারাবে কে?
সংক্ষিপ্ত স্কোর
মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ১৪১-৫ (রোহিত ৫১, মর্কেল ২-৩৫)
নাইট রাইডার্স ১৮.৪ ওভারে ১৪২-৪ (উথাপ্পা ৮০, হরভজন ২-২২)
ছবি: বিসিআই।