’৮২-র সেই ভয়ঙ্কর ঘটনা। শুমাখারের ফ্লাইং কিক বাতিসঁকে।
বত্রিশ বছর পরও প্রতিশোধের আগুনটা জ্বলছে ম্যাক্সিম বসি-র মনে। এখনও ক্ষতটা দগদগে প্রাক্তন ফরাসি ফুটবলারের। ১৯৮২ বিশ্বকাপের সেই কলঙ্কিত দিনের ক্ষত। যে দিন জার্মানির বিরুদ্ধে পেনাল্টি শুটআউটে হারতে হয়েছিল ফরাসি দলকে। আর এক ফরাসি ফুটবলারকে এমন মারা হয়েছিল যার কাছে লুই সুয়ারেজের দাঁত বসানোর ঘটনা মনে হতে পারে নেহাতই ‘শিশু’।
ম্যাচের প্রথমার্ধেই জার্মান গোলকিপার হ্যারল্ড শুমাখার ফ্রান্সের প্যাট্রিক বাতিসঁকে এমন চার্জ করেছিলেন যে মাঠেই তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। প্রায় কোমাতেই চলে গিয়েছিলেন ফরাসি ডিফেন্ডার। বেশ কয়েকটা দাঁত উপড়ে গিয়েছিল। বুকের হাড় আর মেরুদণ্ডে গুরুতর চোট পেয়েছিলেন বাতিস।ঁ বিশ্বকাপের ইতিহাসে যা লেখা আছে অন্যতম কুখ্যাত দিন হিসেবে।
আধ ঘণ্টা লেগেছিল জ্ঞান ফিরতে বাতিসঁ-র। তবু রেফারি কোনও ফাউল দেননি। শুমাখারকে কার্ড দেখানো তো দূরঅস্ৎ। বলা হয়েছিল রেফারি নাকি ঘটনাটা দেখতেই পাননি। ফ্রান্সের সেই টিমের ক্যাপ্টেন মিশেল প্লাতিনি পরে বলেছিলেন, “আমি তো ভেবেছিলাম বাতিসঁ মারাই গিয়েছে। নাড়ির গতি বোঝা যাচ্ছিল না। ওর চেহারা পুরো ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছিল।”
সতীর্থকে এই অবস্থায় দেখে আতঙ্কটা চেপে বসেছিল হয়তো বসির। শুটআউটের ফল তখন ৪-৪। পাঁচ নম্বর শটটা নিতে গিয়েছিলেন বসি। ঠিক তখনই তাঁর শট আটকে দেন ম্যাচের ‘খলনায়ক’ শুমাখার। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে ফের মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ এলেও জার্মানিকে হারাতে পারেনি ফ্রান্স। তবে ব্রাজিল বিশ্বকাপে আর একটা সুযোগ নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে কোয়ার্টার ফাইনালের যুদ্ধে দিদিয়ের দেশঁ আর জোয়াকিম লো-র টিম মুখোমুখি হওয়ায়।
ফরাসি কোচের উদ্দেশে তাই বসি বলে দেন, “দেশঁকে আমি একটাই কথা বলব, ’৮২-র সেভিলের ম্যাচের বদলা চাই। বদলার কথা মাথায় রেখেই আমি কোয়ার্টার ফাইনালের যুদ্ধটা দেখতে বসব। যেটা চার বছর পরও আমরা মেক্সিকো বিশ্বকাপে নিতে পারিনি।” সঙ্গে আরও বলেন, “এই হারগুলো নিয়ে কম কথা হয়নি। প্রতিদিন শুনতে হত ব্যর্থতাগুলো নিয়ে। এটা ঠিক যে, সেই সময়ের সঙ্গে এখনকার সময়ের তুলনা করাটা হয়তো ঠিক হবে না। তবে আমি চাইব ফরাসি দল যেন এ বার বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে ওঠার পথে আমাদের সময়ের ওই ব্যর্থতাগুলোও মাথায় রাখে।”
তবে ৫৯ বছর বয়সি বসিসের সতীর্থ মারিউস ট্রেসর কিন্তু তাঁর সঙ্গে একমত নন। তিনি বলেন, “এটা ওদের সময়। আমাদের নয়। এই দলটায় যারা খেলছে অনেকেই সেই সময় জন্মায়নি। আমাদের বদলা নেওয়ার সুযোগটা এসেছিল ঠিক তার পরের বিশ্বকাপেই ১৯৮৬-তে। কিন্তু আমরা ব্যর্থ হই। তাই এখনকার ফরাসি দলের ফুটবলারদের অতীতের সেই ব্যর্থতার ভার নিয়ে ম্যাচে নামাটা ঠিক হবে না।”