জেন্টলম্যানস গেম হিসেবে যাঁরা ক্রিকেটকে এখনও বিশ্বাস করেন, রবিবারের বিরাট কোহলিকে তাঁদের খুব একটা পছন্দ হবে না। তাঁদের মনে হতে পারে, তুমি সেঞ্চুরি করেছ, মিচেল জনসনকে কচুকাটাও করেছ, কিন্তু মেজাজ কেন এমন গরম করলে?
ঘটনা হল, ক্রিকেট বিশ্বে এক জাতের ব্যাটসম্যান আছে যারা চায় স্লেজিংটা হোক! বোলার যদি না কিছু না বলে, সে নিজে গিয়ে কিছু বাঁধিয়ে বসবে। কারণ তাতে তার খেলতে সুবিধে হয়! এরা নিজেরা ভেতরে ভেতরে শান্ত থেকে বোলারকে খেপিয়ে দেয়, আর দিনের শেষে দেখা যায় বোলার ধ্বংস। এবং স্লেজিং করে ব্যাটসম্যান দিব্যি ম্যাচটা নিজের দিকে নিয়ে নিয়েছে!
বিরাটকে দেখে আজ জাভেদ মিয়াঁদাদকে খুব মনে পড়ছিল। মিয়াঁদাদ ঠিক এ রকমই করত। বোলারের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে শুরু করে তার বারোটা বাজাত। ব্রায়ান লারাও তাই। আমার নিজের খেলা একটা ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের কথা বলছি। টিম থেকে বলা হয়েছিল, লারা নামলে কেউ ওর সঙ্গে কথা বলবে না। দেখলাম, লারা এসে আমার সঙ্গে কথা বলতে শুরু করল! পাশ থেকে রাহুল দ্রাবিড় তখন আমাকে আটকায়। কথা বন্ধ করতে বলে। লারা কিছুক্ষণের মধ্যে বিরক্ত হয়ে আউট হয়ে গেল।
তাই বিরাটের মেলবোর্নে জনসনকে চুমু ছোড়া দেখে অবাক হইনি। সামান্য একটা ঘটনা থেকে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়াতেও হইনি।
কারণ বিরাট এটা ঘটিয়েছে। এই ভারতীয় টিমের বাকিদের সঙ্গে বিরাটের তফাতটা হল, ও স্ট্রিট ফাইটার। কিছু একটা ঘটলে ও সোজা সেখানে ঢুকে পড়বে। এ দিন জনসনের ফলো থ্রু থেকে করা যে থ্রো নিয়ে এত ঝামেলা, তার পর জনসন গিয়ে বিরাটকে সরি বলেছিল। বলেছিল, ইচ্ছে করে ওর দিকে বলটা ছোড়েনি। বিরাট সুযোগটা নিয়েছে।
ঠিক করেছে।
অস্ট্রেলিয়াতে গেলে স্কিলের সঙ্গে মানসিক যুদ্ধ জেতাটাও বড় হয়ে দাঁড়ায়। বিরাট যা করেছে, সেটা ওর স্ট্র্যাটেজিক মুভ। নিজে শান্ত থেকে বোলারকে কথা শুনিয়ে যাওয়া। আর বিরাট জনসনকে এটা করেছে। জনসনকে বুঝিয়েছে যে তুমি বিশ্বের অন্যতম সেরা পেসার হতে পারো। আমিও কিন্তু বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যান। আর শেষে দেখুন, বিরাট ১৬৯। জনসন সেখানে গোটা দিনে খেল ১৩৩ রান, পেল একটা উইকেট।
আসলে অনেক সময় ব্যাটসম্যানের যদি মনঃসংযোগে সমস্যা হতে থাকে, সে চায় উত্তেজক কিছু ঘটুক। যাতে একঘেয়েমি কাটে। অস্ট্রেলিয়া কিন্তু এ দিন বিরাটের ফাঁদেই পা দিয়েছে, ওকে শুরু থেকে স্লেজ করে।
তবে এটা ঠিক, এতটা সাহসের সঙ্গে কোনও ব্যাটসম্যানকে টানা পাল্টা স্লেজ করতে খুব কম দেখেছি। অস্ট্রেলিয়াকে আগেও স্লেজ করেছে ভারত। ২০০৩-এ আমাদের সফরে মনে আছে পার্থিব পটেলকে ‘কিড’ বলার পর ও সাইমন্ডসকে বলেছিল, ব্যাট দিয়ে মেরে তোমার হাঁটু খুলে নেব! কিন্তু শুধু মেজাজে ম্যাচ জেতা যায় না। স্কিলও লাগে। ২০০৩-এর টিমে সেটা ছিল, এই টিমেও আছে।
চলতি অস্ট্রেলিয়া সফরে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের ভাল করার কারণ টিমে ভাল ব্যাকফুট প্লেয়ার আছে। অস্ট্রেলিয়ায় সাফল্য পেতে হলে পেস আর বাড়তি বাউন্সটা সামলাতে হয়। রাহানে বা বিরাট যেটা খুব ভাল পারে। রাহানের রবিবারের আপারকাট বা বিরাটের জনসনকে পরপর পুলে মারা বাউন্ডারি সবই উইকেটের পেস-বাউন্স কব্জা করে অস্ট্রেলিয়াকে হঠিয়ে দেওয়া। তাই বিরাটের ১৬৯ মতোই রাহানের ১৪৭-ও অমর ইনিংস হিসেবে থাকা উচিত। ওরা আজ বাঁচার লড়াই করেনি। অস্ট্রেলিয়াকে ওদের দেশে নির্মম শাসন করেছে। ২৬২ রানের জুটিতে।
এ দিন দেখলাম, নাথন লিয়ঁর বল বেশ ভাল টার্ন করছে। অশ্বিন যদি কাল ও রকম টার্ন করাতে পারে, তা হলে শেষ দিন জমবে। কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, শেষ দিনে ভারতকে সাড়ে তিনশো তুলতে হলে কী হবে? প্রশ্নটা দাদিও (সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়) করল বিরাটকে। উত্তরটাও দুর্দান্ত এল তাড়া করব!
প্রশ্ন হচ্ছে, যা চলল এ দিন তার পর অস্ট্রেলিয়া ও রকম একটা চ্যালেঞ্জিং টার্গেট ভারতকে দেওয়ার সাহস পাবে তো?