ইশান্ত শর্মা: হাঁটু
শুক্রবার সকাল আন্দাজ ন’টা। ইশান্ত শর্মা হঠাৎই টিম ম্যানেজমেন্টের সামনে ঘোষণা করলেন, তিনি ম্যাচ খেলার অবস্থায় নেই! এই ম্যাচটার জন্য যেন তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
শুক্রবার সকাল আন্দাজ সওয়া দশটা। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, বিরাট কোহলিদের সঙ্গে মাঠে ওয়ার্ম আপ করতে নেমে পড়লেন ইশান্ত শর্মা!
শুক্রবার সকাল এগারোটা। টসের পর টিম ঘোষণা করার সময় ভারত অধিনায়ক জানালেন, আজ মোহিত শর্মা খেলছেন। ইশান্ত শর্মা নাকি নেটে বল করার সময় বাঁ হাঁটুতে ফের চোট পেয়েছেন!
দিল্লির পেসারকে নিয়ে এই নাটক দেখে নাকি রীতিমতো বিরক্ত ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের একটা বড় অংশ। এবং ধন্ধেও। পারথে ফোন করে শোনা গেল, তাঁরা বুঝে উঠতে পারছেন না, ইশান্তের চোট আদৌ সেরেছে কি না।
হাঁটুর চোটের জন্য টেস্ট সিরিজের শেষ ম্যাচ থেকে প্রায় এক মাস টানা মাঠের বাইরে ইশান্ত। এই এক মাস তিনি টিমের সঙ্গেই ঘুরছেন। রিহ্যাব চলছে পুরোদমে। ২৬ জানুয়ারি ওয়ান ডে টিমেও ছিলেন তিনি। যা দেখে নাকি ধরে নেওয়া হয়েছিল, ইশান্ত এখন সুস্থ। এ দিন টসের পরে ইশান্ত-প্রসঙ্গে ধোনির মন্তব্যে আবার নতুন করে ধোঁয়াশা তৈরি হয় ভারতীয় পেসারকে নিয়ে। প্রশ্ন ওঠে, ২৬ জানুয়ারি ম্যাচে ইশান্ত তো বল করেননি। ভারত ব্যাট করতে নামার ঘণ্টাদুয়েক পরেই বৃষ্টিতে ম্যাচ ভেস্তে গিয়েছিল। তার পরে টিমের সঙ্গে স্বাভাবিক ভাবেই ট্রেনিং করে গিয়েছেন ইশান্ত। নেটে বল করেছেন। সবচেয়ে তাৎপর্যের, এ দিন ম্যাচের আগেও ওয়ার্ম-আপ করেছেন তিনি। তা হলে তাঁর চোটটা লাগল কখন?
বলা হচ্ছে, শুক্রবার সৌভাগ্যবশত মোহিত ভাল বল করে দিয়েছেন। কিন্তু এই সিরিজটা তো বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হিসেবে ধরা হচ্ছিল। সেখানে তাঁকে একটা ম্যাচ খেলিয়ে টিমের কি আদৌ কোনও লাভ হল? তিনি তো বিশ্বকাপ স্কোয়াডেই নেই। দেশে ফিরে যাচ্ছেন ২ ফেব্রুয়ারি। বিকল্প বলতে হাতে ছিলেন ধবল কুলকার্নি। কিন্তু তিনিও বিশ্বকাপ স্কোয়াডে নেই, তাই তাঁকে খেলিয়ে একটা ম্যাচ বড়জোর বের করে নিলেও আসল যুদ্ধে কোনও প্রভাবই পড়ত না। ভারতীয় পেস আক্রমণের বর্তমান অবস্থা নাকি এখন যথেষ্ট শোচনীয়। সবচেয়ে অভিজ্ঞ পেসার ইশান্তের অবস্থা ঠিক কী, বুঝে ওঠা যাচ্ছে না। ভুবনেশ্বর কুমারকে নিয়ে কেউ কেউ বলছেন, তাঁকে মাসের পর মাস স্রেফ বয়ে বেড়ানো হচ্ছে। কবে যে তিনি ম্যাচ ফিট হবেন, সেই উত্তর কারও কাছেই নাকি নেই। উমেশ যাদব তিনিও একশো শতাংশ ফিট নন।
রবীন্দ্র জাডেজা নিয়েও ধোঁয়াশা বাড়ছে বই কমছে না। চলতি অস্ট্রেলিয়া সফরে বলতে গেলে তিনি ক্রিকেটের মধ্যেই নেই। এ দিন পারথে তাঁর ব্যাটিং দেখেও তাঁকে নিয়ে নাকি নিশ্চিত হতে পারছে না ম্যানেজমেন্ট। বিশেষ করে তাঁর আউট হওয়ার ধরন দেখে। এ দিন স্টুয়ার্ট ব্রডের বলে তাঁর আউট হওয়া দেখে অনেকেরই নাকি মনে হয়েছে, কাঁধ বাঁচাতে দায়সারা ভাবে শট মেরেছিলেন অলরাউন্ডার। যা থেকে পরিষ্কার, তাঁর চোট এখনও পুরোপুরি সারেনি। পাশাপাশি আশঙ্কা তৈরি হয়ে গিয়েছে যে, টিমের এক নম্বর অলরাউন্ডারের যদি বিশ্বকাপের দু’সপ্তাহ আগে এই অবস্থা হয়, তা হলে বিশ্বকাপে তিনি আদৌ খেলতে পারবেন তো?
টিম যেখানে চলমান হাসপাতালে পরিণত, স্বাভাবিক ভাবেই সেখানে টিম ফিজিও নীতিন পটেল নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। টিম ম্যানেজমেন্টের কেউ কেউ নাকি তাঁর কথার উপর আর আস্থা রাখতে পারছেন না।
অবস্থা যা, তাতে বিশ্বচ্যাম্পিয়নের মুকুট ধরে রাখা দূরের কথা। বিশ্বকাপে পুরো ফিট এগারো জনকে নামানো যাবে কি না, সেটাই আসল যুদ্ধ!