হাসি ফিরল মুম্বই ডাগআউটে। শনিবার। ছবি: পিটিআই
ঘরে ফেরা ও জয়ে ফেরা, দুটোই একসঙ্গে হল মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের। তাও অবিশ্বাস্য ভাবে। শেষ তিন ওভারে ৪১ তুলে কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের বিরুদ্ধে পাঁচ উইকেটে জয় পেল মুম্বই। মুম্বইয়ের যেমন এটা এ বারের আইপিএলে প্রথম জয়, তেমনই কিংসের প্রথম হার। বাংলার উইকেটকিপার ঋদ্ধিমান সাহা ৫৯ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে কিংসকে লড়াইয়ের জায়গায় নিয়ে এলেও ওয়াংখেড়েতে এ দিন শেষ তিন ওভারে ওঠা পোলার্ড-ঝড়ই তাঁর এই চেষ্টায় জল ঢেলে দিল।
ওয়াংখেড়েতে ফিরে মুম্বই খাতা খুললেও কোটলায় তা পারল না দিল্লি ডেয়ারডেভিলস। শনিবার রাতে তারা রাজস্থান রয়্যালসের কাছে হারল সাত উইকেটে। কর্নাটকের করুণ নায়ারের ৫০ বলে অপরাজিত ৭৩ রানের ইনিংসই রাজস্থানকে অনায়াস জয় এনে দেয়।
মরুশহরে পাঁচ ম্যাচে টানা হারের পর অবশেষে ঘরে ফিরে পাওয়া জয়ে মুম্বই সমর্থকদের সোশ্যাল নেটওয়ার্ক বিস্ফোরণ ছিল দেখার মতো। বলিউড অভিনেতা অভিষেক বচ্চন টুইট করেন, “অবশেষে!!! ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।” দলের অস্ট্রেলীয় ওপেনিং ব্যাটসম্যান বেন ডাঙ্ক খেলা শেষের পরই টুইটারে নিজের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে লেখেন, “মুম্বই ইন্ডিয়ান্স জার্সি গায়ে প্রথম জয় পেয়ে খুব খুশি!!! যাঁরা ম্যাচ দেখতে এসেছিলেন, তাঁদের অসংখ্য ধন্যবাদ। পরিবেশটা দুর্দান্ত ছিল আজ।”
মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের উদ্যোগে ১৮ হাজার পিছিয়ে পড়া শিশু এ দিন ওয়াংখেড়ের গ্যালারিতে এসেছিল রোহিত শর্মার দলের হয়ে গলা ফাটাতে। এদের প্রসঙ্গ টেনে এক সমর্থক টুইট করেন, “১৮ হাজার শিশু যখন কোনও দলের জয়ের জন্য একসঙ্গে প্রার্থনা করে, তাদের জন্য গলা ফাটায়, সেই দল আর কী করে হারবে?” ম্যাচের সেরা নিউজিল্যান্ডের মারকুটে ব্যাটসম্যান কোরি অ্যান্ডারসনও ওয়াংখেড়ের এই পরিবেশ দেখে মুগ্ধ। তিনিও টুইট করেন, “আমরা উড়তে শুরু করলাম। মুম্বইয়ের দর্শকরা গ্রেট। প্রচণ্ড চিৎকার করতে পারে। ওরা যে আমাদের দিকে, এটাই দারুণ ব্যাপার। এ বার পরের জয়টা আনার পালা।”
বেশির ভাগ সময় পিছিয়ে পড়া শিশুদের গ্যালারির সামনে দাঁড়িয়েই এ দিন দলের খেলা দেখেন সচিন। ডাগ আউটে তখন রিকি পন্টিং, অনিল কুম্বলে ও জন্টি রোডসদের মতো কিংবদন্তিরা। এমন তারকাসমৃদ্ধ সাপোর্ট স্টাফ আইপিএলের কোনও দলেই নেই বোধহয়। এঁরা থাকতেও কেন মুম্বইয়ের ক্রিকেটাররা জেতার রসদ পাচ্ছেন না, এটাই এত দিন ছিল বড় প্রশ্ন। ওয়াংখেড়ের বুকে নবম জয় পেতেও অবশ্য মুম্বইকে কম কাঠ-খড় পোড়াতে হয়নি। জয়ের জন্য ১৬৯-এর লক্ষ্য নিয়ে ব্যাট করতে নেমে মুম্বই যখন ডাঙ্ক (৫), রায়ডু (৮), সি এম গৌতম (৩৩), রোহিতের (৩৯) পর কোরির (৩৫) উইকেটও হারায়, তখন তারা ১৬.৪ ওভারে ১২৬-৫। জয়ের জন্য তখন তাদের কুড়ি বলে ৪৩ রান দরকার। এর পরই মুম্বইয়ের ছেলে আদিত্য তারেকে সঙ্গে নিয়ে ওয়াংখেড়েতে ঝড় তোলেন পোলার্ড। শেষ তিন ওভারে ৪১ রান তুলে অবিশ্বাস্য জয় অর্জন করেন তাঁরা। পোলার্ড দু’টি চার ও দু’টি ছয়সহ ১২ বলে ২৮ ও তারে ছ’বলে ১৬ রান করে শেষ রক্ষা করেন। বালাজির ওভারে তাঁরা নেন ১৬। তবে তার চেয়েও বিস্ময়কর মিচেল জনসনের শেষ ওভারে ২০ ওঠা। পোলার্ড জনসনকে দু’টো বাউন্ডারি ও একটি ওভার বাউন্ডারি মারেন। শেষ ওভারে সন্দীপ শর্মার প্রথম বল লং অফের উপর দিয়ে গ্যালারিতে আছড়ে ফেলে যখন জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যান, তখনও পাঁচ বল বাকি।
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ২৪ রানের মধ্যেই সহবাগ ও পূজারা ফিরে যাওয়ার পর বিধ্বংসী ম্যাক্সওয়েল (২৭ বলে ৪৫) দলের হাল ধরেন। সঙ্গতে বাংলার ঋদ্ধি। পাঁচটা চার ও দুটো ছয় মেরে ম্যাক্সওয়েল ফিরে যাওয়ার পর ঋদ্ধিই বেইলি ও মিলারদের সঙ্গে ক্রিজে টিকে থেকে ৪৭ বলে ৫৯ রান করেন। জাহির, হরভজন ও পোলার্ডের বল সোজা গ্যালারিতে পাঠান। মালিঙ্গা, জাহিরকে একবার করে ও পোলার্ডকে দু’বার বাউন্ডারির বাইরে পাঠান।
কোটলায় কুইন্টন ডি কক (৪২) ও জে পি দুমিনি (৩৯) ছাড়া দিল্লির ব্যাটসম্যানরা কেউ মাথা তুলতেই পারেননি। পিটারসেন একবার রান আউট হয়ে আম্পায়ার সঞ্জয় হাজারের বদান্যতায় বেঁচে গেলেও ১৪-র বেশি তুলতে পারেননি। আটেরও কম রানের গড়ে রান তোলার লক্ষ্য নিয়ে ব্যাট করতে নামা রাজস্থান রয়্যালস ন’বল বাকি থাকতেই রান তুলে নেয়। আটটি বাউন্ডারি ও দু’টি ওভার বাউন্ডারি মারেন করুণ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
কিংস ইলেভেন পঞ্জাব ১৬৮-৫ (২০ ওভার)
মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ১৭০-৫ (১৯.১ ওভার)
দিল্লি ডেয়ারডেভিলস ১৫২-৫ (২০ ওভার)
রাজস্থান রয়্যালস ১৫৬-৩ (১৮.৩ ওভার)।