ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর পর্তুগালের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের প্রথম লড়াইয়ে নামার আগে সাংবাদিক বৈঠকে এসে উচ্ছ্বসিত লুকাস পোডলস্কি! বলেন, “এক প্রিয় বন্ধুকে আজ অভিনন্দন জানাতে চাই। দুর্ভাগ্যবশত সে এখানে আসতে পারেনি। কিন্তু ফুটবল নিয়ে ঠিক আমাদের মতোই পাগল। নাম মিশায়েল শুমাখার। আমরা খেতাবটা জিতলে ওর থেকে বেশি খুশি আর কেউ হবে না।”
পোডলস্কি-সহ গোটা জার্মান দলের উচ্ছ্বাসের মূলে ফ্রান্সের গ্রেনোবল হাসপাতাল থেকে আসা খবরটা-- কোমা থেকে জেগে উঠেছেন শুমাখার।
ফর্মুলা ওয়ান কিংবদন্তির ম্যানেজার সাবাইন খেম এ দিন শুমাখারের কোমা থেকে জাগার কথা জানিয়ে বলেন, “মিশায়েল গ্রেনোবল থেকে চলে গিয়েছে। এ বার ওর পুনর্বাসনের লম্বা প্রক্রিয়া শুরু হবে।” এত দিন যাঁরা শুভেচ্ছা পাঠিয়েছেন, শুমাখারের পরিবার তাঁদের প্রত্যেককে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছে, “আপনাদের প্রার্থনা ওকে সাহায্য করল।” তবে মহাতারকার পুনর্বাসন নিয়ে গোপনীয়তা অবলম্বন করতে শুমাখারকে কোথায় সরানো হচ্ছে সেটা জানানো হয়নি। পরে সুইৎজারল্যান্ডে শুমাখারের বাড়ির কাছের লুসান ইউনিভার্সিটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, সাত বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন সেখানে আছেন। হাসপাতালের মুখপাত্র ডার্সি ক্রিশ্চিয়েন বলেন, “মিশায়েল এখানেই আছেন। উনি আজ সকালেই এসে পৌঁছেছেন।”
তবে কোমা থেকে জাগার পর শুমাখারের শারীরিক অবস্থা এখন কেমন, তা নিয়ে কোনও সূত্র থেকেই কোনও খবর পাওয়া যায়নি। নিউরোসার্জারি বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রায় ছ’মাস কোমায় থাকার পর রোগীর পুনর্বাসনে অনেক সময় তিন-চার বছরও লেগে যেতে পারে। ব্রিটেনের বিশিষ্ট নিউরোসার্জন টোনি বেলির কথায়, “শুমাখার এত লম্বা সময় কোমায় ছিলেন যে ওঁর ক্ষেত্রে পুনর্বাসনে সময় লাগাটাই স্বাভাবিক। সব নির্ভর করছে ও কতটা ফিট এবং পুনর্বাসনে কী ভাবে সাড়া দেন তার উপর। তবে রাস্তাটা কঠিন।” পুনর্বাসন সফল হলেও শুমাখার আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে উঠবেন কি না, তা নিয়ে অবশ্য বড় প্রশ্নচিহ্ন থাকছেই।
গত ২৯ ডিসেম্বর ফরাসি আলপসের মেরিবেল-এ স্কি করতে গিয়ে মস্তিষ্কে মারাত্মক আঘাত পান শুমাখার। তার পর থেকে চিকিৎসার কারণে তাঁকে ওষুধের সাহায্যে কোমায় রাখা হয়েছিল।
এ দিকে, শুমাখারের জেগে ওঠার খবরে সাড়া পড়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়। ফর্মুলা ওয়ানের দুনিয়া তো বটেই, বিশ্ব জুড়ে তাঁর অগণিত অনুরাগীর মুখে হাসি ফোটে। ফেরারি এবং মার্সিডিজ টিম টুইটারে খবরটা দিয়ে লেখে, “আশার আলো! সপ্তাহের শুরুটা দুর্দান্ত হল!” ফের্নান্দো আলোনসো টুইট করেন, “দারুণ খবর! মিশায়েল সুস্থ হয়ে ওঠার দিকে এগোচ্ছে জেনে ভীষণ খুশি!” লুইস হ্যামিল্টন লেখেন, “অ্যামেজিং! দিনের সেরা খবর।” মার্সিডিজের নিকো রোজবার্গের টুইট, “আরও এক পা এগোলে। লড়াই চালিয়ে যাও মিশায়েল।” প্রাক্তন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জেনসন বাটন, নিকো হুল্কেনবার্গ, ফোর্স ইন্ডিয়া, নারায়ণ কার্তিকেয়ন, করুণ চন্দোক, পল ডি রেস্টাদের পাশে অন্য খেলার বহু তারকাই টুইট করেন। যাতে সামিল রোহন বোপান্না থেকে দীনেশ কার্তিকরাও।
ব্রাজিলে বসে ফিফা প্রধান সেপ ব্লাটার লেখেন, “অসাধারণ খবর। এ বার পুনর্বাসনের জন্য অল দ্য বেস্ট!” কোমা থেকে জেগেই যেন বিশ্বকাপেও ঢুকে পড়েছেন শুমাখার!