সমর্থকদের তাণ্ডব। মারাকানায় স্পেন-চিলি ম্যাচের আগে। ছবি: এএফপি।
ব্রাজিল বিশ্বকাপে কী অনুপস্থিত? যা অন্য বার কাপ-যুদ্ধে খুব পরিচিত দৃশ্য! না, পেলের দেশে এখনও দেখা নেই জঙ্গি জার্মান আর ইংল্যান্ড সমর্থকদের। ফুটবলদুনিয়ায় যাঁরা ‘জার্মান হুলিগানস্’ এবং ‘ব্রিটিশ এক্সট্রিমিস্ট’ নামে কুখ্যাত। হয়তো ইউরোপ থেকে লাতিন আমেরিকার দুরত্ব বিরাট বলে মধ্যবিত্ত জার্মান বা ইংরেজরা এ বার সে ভাবে ব্রাজিলমুখী হননি।
তা সত্ত্বেও ব্রাজিল বিশ্বকাপে সমর্থক-তাণ্ডব উপস্থিত। এতটাই যে, তার বিরুদ্ধে ফিফাকে তদন্ত কমিটি বসাতে হল। ব্রাজিল পুলিশকে ধরপাকড় চালাতে হল। বাহাত্তর ঘণ্টার ডেডলাইন দিতে হল কোনও নির্দিষ্ট দেশের সমর্থকদের উদ্দেশ্যে ব্রাজিল ছেড়েই চলে যাওয়ার জন্য। তিনটের কোনওটারই পূর্ব নিদর্শন নেই চুরাশি বছরের বিশ্বকাপ ইতিহাসে!
সৌজন্যে চিলি আর সংগঠক দেশ ব্রাজিলেরই জঙ্গি সমর্থক দল। যাদের কিনা এ বার থেকে ফুটবল বিশ্বে ‘চিলিয়ান হুলিগানস্’ কিংবা ‘ব্রাজিলিয়ান এক্সট্রিমিস্ট’ নামে অভিহিত করা হতে পারে। খানিকটা মেক্সিকো সমর্থকেরাও কাঠগড়ায়। সোজা কথায়, বিশ্বকাপে সমর্থক-তাণ্ডব আছে নিজস্ব ভঙ্গিতেই।
বুধবারই স্পেনের বিরুদ্ধে স্বদেশের খেলা দেখতে রিওর মাঠের মিডিয়া সেন্টারে গায়ের জোরে ঢুকে পড়েছিলেন কয়েকশো চিলি সমর্থক। এমনকী প্রেস সেন্টারের অস্থায়ী কাঠের দেওয়াল তাঁদের প্রচণ্ড দাপাদাপিতে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে মাটিতে। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই অবশ্য এই ফুটবল-গুণ্ডামির বিরুদ্ধে ব্রাজিল পুলিশ আর ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থা ফিফা ব্যবস্থা নিতে নেমে পড়েছে। আশি জন চিলি সমর্থককে ধরে জেলে পুরেছে পুলিশ। তাঁদের বিরুদ্ধে ভাঙচুর আর গুণ্ডামির অভিযোগে মামলা দায়ের করাও হয়েছে। আর বাকিদের ফিফা বাহাত্তর ঘণ্টা সময় দিয়েছে, ব্রাজিল ছেড়েই চলে যাওয়ার জন্য। ঘটনায় জড়িত চিলি সমর্থকদের বিশ্বকাপে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ফিফা। এঁদের কেউ আর চলতি বিশ্বকাপে মাঠে ঢুকতে পারবেন না।
দু’দিন আগের ব্রাজিল-মেক্সিকো ম্যাচের সমর্থক-কেলেঙ্কারি আরও ভয়ঙ্কর। সেখানে ঘরের মাঠেই ব্রাজিল সমর্থকদের বিরুদ্ধে বর্ণবিদ্বেষমূলক মন্তব্যের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
ঘটনা কী? মেক্সিকোর সঙ্গে নেইমারদের অপ্রত্যাশিত ড্র ম্যাচ দেখে ক্ষিপ্ত বেশ কিছু সমর্থক বিপক্ষের ফুটবলার, বিশেষ করে দুর্ভেদ্য হয়ে ওঠা মেক্সিকান গোলকিপার ওচোয়াকে উদ্দেশ্য করে ‘পুরুষ বেশ্যা’ বলে টিটকিরি দেন। যে অশ্লীল মন্তব্যকে বর্ণবিদ্বেষমূলক মন্তব্য হিসাবে দেখছে ফিফা।
যদিও ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশন (সিবিএফ) থেকে পাল্টা অভিযোগ করা হয়েছে যে, একই গালাগাল মেক্সিকো সমর্থকেরাও ব্রাজিল দলকে দিয়েছেন। এমনকী সিবিএফের অভিযোগ, ক্যামেরুনের বিরুদ্ধে ম্যাচের সময়ও মেক্সিকো দলের সমর্থকেরা একই বর্ণবিদ্বেষমূলক মন্তব্য করেছেন গ্যালারি থেকে। কিন্তু ফুটবল ওয়াকিবহাল মহলে খবর, তাদের সমর্থকদের এই জাতীয় বর্ণবিদ্বেষমূলক মন্তব্যের জেরে ব্রাজিল ফুটবল সংস্থা ফিফার শাস্তির কোপে পড়তে পারে।
আপাতত ফিফা গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। তবে ব্রাজিলের পাশাপাশি মেক্সিকোর সমর্থকদের বিরুদ্ধেও তদন্ত হবে বলে জানিয়েছে ফিফা। সে ক্ষেত্রে ব্রাজিলের পাশাপাশি মেক্সিকো ফুটবল সংস্থাও বিপদে পড়তে পারে। তবে নিজেদের দেশে বিশ্বকাপে ব্রাজিল ফুটবল সংস্থা শাস্তি পেলে সেটা বিরলতম ঘটনা হবে। এমনিতেই স্টেডিয়াম তৈরি নিয়ে সিবিএফের ঘাড়ে পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।