বজ্রবিদ্যুৎ-সহ কলম্বো ফাইনালের বদলা নিলেন মালিঙ্গারা

বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল পরবর্তী মুহূর্তের ক্রিকেট প্রেসবক্স মানে অনিবার্য ভাবে অসীম তাড়াহুড়োয় ভরা অসংলগ্ন এক নগরী! যেখানে কেউ শেষ মিনিটের কপি পাঠানোয় উসখুশে। কেউ ফাইনাল স্কোরকার্ড হাতড়াচ্ছে। কেউ ব্যাগ গুছিয়ে দ্রুত দৌড়োচ্ছে ক্যাপ্টেনদের প্রেস কনফারেন্সের জন্য।

Advertisement

গৌতম ভট্টাচার্য

ঢাকা শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:৫০
Share:

শিলাবৃষ্টিতে লন্ডভন্ড। ওয়েস্ট ইন্ডিজ-শ্রীলঙ্কা সেমিফাইনালের পরিণতি। শুক্রবার ঢাকায়। ছবি: এএফপি।

বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল পরবর্তী মুহূর্তের ক্রিকেট প্রেসবক্স মানে অনিবার্য ভাবে অসীম তাড়াহুড়োয় ভরা অসংলগ্ন এক নগরী! যেখানে কেউ শেষ মিনিটের কপি পাঠানোয় উসখুশে। কেউ ফাইনাল স্কোরকার্ড হাতড়াচ্ছে। কেউ ব্যাগ গুছিয়ে দ্রুত দৌড়োচ্ছে ক্যাপ্টেনদের প্রেস কনফারেন্সের জন্য।

Advertisement

বৃহস্পতিবার রাতে শিলাবৃষ্টি-আহত মিরপুর প্রেসবক্স ছিল সাকিব আল হাসানের ইন্টারভিউটার মতোই মহাব্যতিক্রমী। যেখানে একটুও তাড়াহুড়ো না করে সাংবাদিককুলের সবার ল্যাপটপে মোটামুটি বিবিসি খোলা। সবাই শুক্রবার রাতের সম্ভাব্য আবহাওয়ার রিপোর্ট চেক করছে। যেখানকার পূর্বাভাস; আবার ঝড়-বিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি!

ডাকওয়ার্থ-লুইস মানে গড়পরতা দিনে একপক্ষের কপাল চাপড়ানো আর ভাগ্যকে দুষবার জানালা খোলা থেকেই যায়। আর এ দিনের ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেই জানালা ব্যবহারের কোনও সুযোগ নেই। ঝড় নেমে আসার সময় চোদ্দো ওভারের খেলা চলছিল এবং তখন টার্গেট থেকে তারা ২৭ রানে পিছিয়ে। যতই ডারেন স্যামি আর মার্লন স্যামুয়েলস নট আউট থাকুন, খেলা ততক্ষণে একপেশে করে দিয়েছেন মালিঙ্গারা।

Advertisement

গতবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের কাছেই কলম্বো ফাইনালে দু’বছর আগে তাঁরা হেরে গিয়েছিলেন। তা শ্রীলঙ্কানদের তো আর গ্যাংনাম নাচের ব্যাপার নেই। প্রকৃতিই তাদের ম্যাচ জয়ের আবহ হিসেবে বিদ্যুৎ আর অবিরাম শিলাবৃষ্টির সঙ্গতের ব্যবস্থা রেখেছিল। বদলাটা হল তারই মধ্যে।

অনুমান করতে পারি, সোনারগাঁও হোটেলের চারতলায় ধোনির ঘরে বসে টিমের বেশির ভাগ প্লেয়ার বৃষ্টি পরিত্যক্ত সেমিফাইনাল দেখলেন। সাধারণত বড় ম্যাচে এটাই টিম ইন্ডিয়া-র অলিখিত রুটিন। সবাই ধোনির ঘরে জড়ো হও।

বিশ্ব ক্রিকেটে সবচেয়ে ঠান্ডা মাথার অধিনায়কও কিন্তু প্রথম সেমি দেখে ধন্ধে পড়তে বাধ্য। টস জিতলে শুক্রবার কী করবেন?

গ্রুপ লিগে দস্তুর ছিল, টস জিতলে মানে চোখ বুজে পরে ব্যাট করো। যাতে তোমার বোলারকে শিশিরে শয্যা না নিতে হয়! ভারত প্রথম তিনটে ম্যাচ এই স্ট্র্যাটেজি আঁকড়েই জিতেছে। কিন্তু পাকিস্তান-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচ থেকেই দেখা যাচ্ছে একে তো শিশির পরের দিকে পড়ছে না। তার পর কোনও টিম যদি প্রথম ব্যাট করে ১৬০ প্লাস করে দেয়, তাদের দুর্ভেদ্য মনে হচ্ছে। আজ শ্রীলঙ্কাও তো সে ভাবেই জিতল। আরও একটা ফ্যাক্টর। একই পিচে দ্বিতীয় সেমিফাইনাল হচ্ছে। তার মানে টস জিতে পরে ব্যাট করলে কার্যত চতুর্থ ইনিংস খেলতে হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে সেই সময় বল শুধু বেশি ঘুরছেই না, নিচুও হচ্ছে। ধোনির তাই শুক্রবারের টস উভয়-সঙ্কট হয়ে রইল। অ্যাদ্দিনের জয়ী-মডেল বিসর্জন দেবেন? নাকি ওটাই আঁকড়ে থাকবেন?

ওয়েস্ট ইন্ডিজ শুরু করেছিল দুর্দান্ত ভাবে। ম্যাচের প্রথম পনেরো মিনিটের মধ্যে মনে হল আজকের রিপোর্টের হেডিং হতে যাচ্ছে—বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা ফের বিশ্বকাপ ফাইনালে। একটা সময়ে পাশে বসা দুই বাংলাদেশি সাংবাদিক জোর আলোচনা করছিলেন যে, সঙ্গকারা-জয়বর্ধনের মিলিত আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরির সংখ্যা ১০৩। জীবনের শেষ টি-টোয়েন্টি ইনিংসে দু’জনের রান যোগ ফল সেখানে হল কিনা ১। মাহেলা একটাও বল না খেলে রান আউট। আর সঙ্গকারা মাত্র পাঁচ বল। শ্রীলঙ্কাকে তখন এত অগোছালো আর টেনশন-ধ্বস্ত দেখাচ্ছিল যে, ভাবা যায়নি সঙ্গকারারা টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নেওয়ার জন্য বিশ্বকাপ ফাইনাল ম্যাচটা রোববার পেতে পারেন। দু’টো উইকেট পড়তেই স্যামি নিয়ে আসেন সুনীল নারিনকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ যতই দেশে ফিরে যাক, নারিন টুর্নামেন্টের স্কোরবোর্ডে থেকে গেলেন কৃপণতম বোলার হিসেবে। আজ শ্রীলঙ্কা মিডল অর্ডারের পাওয়ার প্লে-র ছক্কা মারার স্পেলেও তাঁর ইকনমি রেট পাঁচ।

মহম্মদ শামির যেখানে দশ। এই প্রতিযোগিতা স্পিনারদের একচেটিয়া জমিদারি হয়েও সেরা পেসাররা ঠিক ফুলকির মতো ভেসে উঠছেন। কোনও এক ডেল স্টেইন! কোনও এক লাসিথ মালিঙ্গা! এ দিন তো মালিঙ্গা ছাড়া শ্রীলঙ্কা জিতত না। তিনি অধিনায়কত্বের অপ্রত্যাশিত দায়িত্ব সামলানো ছাড়াও দুই ওপেনারকেই আগুন ঝরিয়ে বল করেছেন। শামি এ যাবত টুর্নামেন্টে ব্যর্থ। দ্বিতীয় সেমি-তে চার স্পিনার সমন্বিত আক্রমণে তিনি নিছকই ক্যারেক্টার আর্টিস্ট। কিন্তু একটা ভাল স্পেল তাঁকে সেই বদলার খোঁজ দিতে পারে যা কেপটাউনে তিনি পাননি। ডারবানেও না। সৌরভ বলছিলেন, “ওরে শামি, তোকে আরও দশ বছর ইন্ডিয়া খেলতে হবে। তেমন হলে ডিসেম্বরে তোর আবির্ভাব সিরিজের ক্লিপিংস টিভিতে দ্যাখ। সেই সময় কেমন তুই বল সুইং করাতিস।”

বলা হয়নি, ১৬০-এর জবাবে গেইল-ঝড় হওয়ার কথা ছিল মিরপুরে। হল শিলাপতন-সহ প্রাকৃতিক ঝড়। ম্যাচ এবং দেশের হয়ে ক্রিস গেইলের টি-টোয়েন্টি রেকর্ড দু’টোকেই উড়িয়ে দিয়ে! নাকি দেশের রেকর্ডটা ওড়াল না? টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আর তিনি ক’বারই বা জিতিয়েছেন?

সংক্ষিপ্ত স্কোর

শ্রীলঙ্কা ১৬০-৬ (থিরিমান্নি ৪৪, সান্তোকি ২-৪৬)

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৩.৫ ওভারে ৮০-৪ (ব্র্যাভো ৩০, মালিঙ্গা ২-৫)।

বৃষ্টিতে ম্যাচ পরিত্যক্ত। ডাকওয়ার্থ লুইস নিয়মে ২৭ রানে জয়ী শ্রীলঙ্কা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement