বিশ্বকাপ মঞ্চে কি উড়বে ব্রাজিলের পতাকা? সুন্দরীর চোখে যেন সেই প্রশ্ন। সোমবার কোপাকাবানা সমুদ্র সৈকতে। ছবি: উৎপল সরকার।
ব্রাজিল সরকারের মতোই অতীব বিড়ম্বনার মুখে এখন ফিফা প্রধান সেপ ব্লাটার। সোমবার থেকে দু’দিনের ফিফা কংগ্রেস শুরু হল সাও পাওলোতে। সারা পৃথিবীর ফুটবল কর্তারা সেই উপলক্ষ্যে এখানেই। ব্লাটার গতকাল এগজিকিউটিভ বোর্ডের বৈঠকে বাকিদের সঙ্গে নিয়ে ব্রাজিল ফুটবল সংস্থার পাশে দাঁড়িয়েছেন। বলেছেন, “বিশ্বকাপ ওরা ঠিক সামলে নেবে।” ইতিমধ্যে যদিও গোটা দুনিয়া বুঝে গিয়েছে, ব্রাজিলকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হঠকারী হয়েছে। আর একটু ভেবে দেখা উচিত ছিল।
কিন্তু ব্রাজিল থেকে যদি বা রক্ষা পান, কাতারকে ২০২২ বিশ্বকাপ দেওয়া নিয়ে শুনছি ফিফা কংগ্রেসে ঝড় উঠবে। ওই বিশ্বকাপ করার দাবিদার ছিল অস্ট্রেলিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং কোরিয়া। শুধু দেওয়া নয়, যে পদ্ধতিতে উৎকোচের বিনিময়ে দেওয়া হয়েছে, উত্তেজনা তা নিয়েই। অথচ মাস কয়েক আগে অক্সফোর্ড ইউনিয়নে ছাত্রদের সামনে বক্তৃতা করতে গিয়ে ব্লাটার বলে এসেছিলেন, “ফিফাকে লোকে ভাবে বুঝি সেই লোকগাথার নটিংহ্যামের শেরিফ। যেখানে বাস্তবে আমরা রবিনহুড জাতীয় কাজই করে থাকি।” কথাটা কাতারকে কাপ দেওয়া নিয়েই বলা।
সেই ব্লাটারই এখন সাও পাওলোতে বসে স্বীকার করছেন, সিদ্ধান্তের পদ্ধতি আরও স্বচ্ছ হওয়া উচিত ছিল। পশ্চিমী মিডিয়া অবশ্য ছিঁড়ে খাচ্ছে এখনও এই সিদ্ধান্তকে। নরওয়ের এক দৈনিক লিখেছিল, তিনটে স্টেডিয়াম নিয়ে একটা দেশ ওয়ার্ল্ড কাপ করবে? তাও এমন তার হালচাল যে সমর্থক রাস্তায় বিয়ার খেলে তাকে বেত মারার ব্যবস্থা থাকে। ব্রিটিশ দৈনিকগুলো তো তথ্য সহযোগে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে যে বিভিন্ন ভোটার দেশকে মোট ৩৫০ কোটি টাকা উৎকোচ দিয়ে কাতারের আমির এই কাজটা করিয়েছিলেন। শোনা যাচ্ছে, এশিয়ার কিছু দেশও টেবিলের তলা দিয়ে সেই সময় পেমেন্ট পেয়েছে। নাম উঠেছে পাকিস্তান এমনকি বাংলাদেশেরও।
বাংলাদেশ আপাতত ফিফা ক্রমপর্যায়ে ১৬৫ নম্বরে। ফিফা কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার জন্য তাঁরা চার সদস্যের প্রতিনিধি দল এনেছে। বাংলাদেশ ফুটবল সংস্থার প্রেসিডেন্ট এখন কাজি মহম্মদ সালাউদ্দিন। সত্তর দশকের বিখ্যাত ফুটবলার। মুক্তিযুদ্ধের পর জাকারিয়া পিন্টুর নেতৃত্বে মোহনবাগান মাঠে খেলতেও এসেছিলেন। রোববার সাও পাওলো বিমানবন্দরে দেখা হতেই জিজ্ঞেস করলেন, “চুনী গোস্বামীর কী খবর?” কিন্তু কাতার নিয়ে প্রশ্ন হলেই আপাতত স্বদেশি সাংবাদিকদেরও এড়িয়ে যাচ্ছেন সালাউদ্দিন।
ভারত থেকে এসেছেন এআইএফএফ কোষাধ্যক্ষ হরদেব জাডেজা আর প্রভাবশালী সদস্য গুয়াহাটির অঙ্কুর দত্ত। অঙ্কুরবাবুদের কথা শুনে মনে হল, কাতার নিয়ে বিচলিত না থেকে তাঁদের লক্ষ্য হবে, ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপ ভারতে করার জন্য লবিং আরও মজবুত করা। এমনকী ২০২০-তে অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ আনানো যায় কি না তার ছক তৈরি।
প্রেসিডেন্ট প্রফুল্ল পটেল আসেননি। ফাইনালের আগে যদি বা আসেন। গতবারের বিশ্বকাপে নাকি যানইনি। কলকাতা ময়দান এমনকী মিডিয়া মহলেরও জনপ্রিয় ধারণা হল যে প্রিয়রঞ্জনের ফুটবল উত্তরাধিকার হিসেবে প্রফুল্ল সম্পূর্ণ অদক্ষ। তাঁর ফিফায় প্রিয়বাবুর মতো জানাশোনা নেই। না আছে ব্যক্তিগত ফুটবল মহলে জনপ্রিয়তা।
ভারতীয় ফুটবল মহলের অনেকেই কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন মত পোষণকারী। তাঁদের মনে হয় প্রফুল্ল অনেক বেশি কার্যকরী। যিনি ফিফায় ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তার তাঁবু না খাটাতে চেয়ে দেশে বিশ্ব পর্যায়ের টুর্নামেন্ট আনার চেষ্টা করছেন। যাতে ভারত বিশ্ব ফুটবল ম্যাপে গেঁড়ে বসে। সে তাঁর টিম যতই ১৫৪ নম্বরে থাক। অত্যন্ত উচ্চাকাঙ্খী পরিকল্পনা প্রফুল্লের যে ২০১৭ থেকে নিরন্তর টুর্নামেন্ট করে যেতে চান তিনি।
২০১৭—অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ ইতিমধ্যে চলে এসেছে।
২০১৮-২০১৯—বিশ্ব ক্লাব কাপ। যার বিডিং ভারত জমা দেবে এই অগস্টে। এক রকম যা কথা হয়ে রয়েছে, তাতে এই টুর্নামেন্ট ভারতের পাওয়ার মতোই পরিস্থিতি। আর তা হলে সেই সময়কার মেসি-রোনাল্ডোদেরও খেলতে আসাটা এক রকম অনিবার্য।
২০২০—অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ। এটা সংগঠনের তোড়জোড় শুরু হবে সাও পাওলো থেকে।
এক ভারতীয় কর্তা বললেন, “প্রফুল্ল ভিড়ে না এসে ফাঁকায় সুইৎজারল্যান্ড চলে যাওয়াই পছন্দ করেন। যেখানে ব্লাটারকে একান্তে পাওয়ার সম্ভব অনেক বেশি। আর এই বৈঠকগুলো কার্যকর হচ্ছে বলেই ভারত এই সব অপ্রত্যাশিত ম্যাচ আয়োজনের দাবিদার হচ্ছে।” গোটা ফুটবল পৃথিবী তাই যখন কাতার নিয়ে আলোড়িত, ফিফা কংগ্রেসে ভারতীয় অংশগ্রহণকারীরা তখন পাখির চোখ করছেন বিশ্ব ক্লাব কাপকে। অগস্ট যে আর মাত্র দু’মাস দূরে!