বিশ্বকাপ দলে যুবরাজ, মুরলী নেই কেন

ভাল বলা যেতে পারে। কিন্তু ফুল মার্কস দিতে পারব না ভারতের এই বিশ্বকাপ দলকে। দলটার বেশির ভাগ সদস্যই নিখঁুত বাছাই। তারা টিমের অটোমেটিক চয়েস। এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু মঙ্গলবার দল বাছতে বসে ছোটখাটো যে ভুলগুলো করে ফেললেন নির্বাচকরা, সেগুলোই না বিশ্বকাপে বড় সমস্যা হয়ে ওঠে।

Advertisement

অশোক মলহোত্র

শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:২৮
Share:

ভাল বলা যেতে পারে। কিন্তু ফুল মার্কস দিতে পারব না ভারতের এই বিশ্বকাপ দলকে।

Advertisement

দলটার বেশির ভাগ সদস্যই নিখুঁত বাছাই। তারা টিমের অটোমেটিক চয়েস। এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু মঙ্গলবার দল বাছতে বসে ছোটখাটো যে ভুলগুলো করে ফেললেন নির্বাচকরা, সেগুলোই না বিশ্বকাপে বড় সমস্যা হয়ে ওঠে।

Advertisement

তিন স্পিনার

দলে তিন স্পিনার দেখে প্রথমেই মনে হল, সন্দীপ পাটিলরা কি ভুলে গিয়েছেন যে বিশ্বকাপটা এ বার অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে? ভারতের মাটিতে বিশ্বকাপ হলে না-হয় এর যুক্তিটা বোঝা যেত। কিন্তু যেখানে একজনের বেশি বিশেষজ্ঞ স্পিনার খেলানোর মতো উইকেট নেই, সেখানে তিনটে স্পিনার নিয়ে যাওয়াটা বিলাসিতা। কোনও ম্যাচে যদি জাডেজা ছাড়াও অশ্বিন ও অক্ষরকে একসঙ্গে খেলতে দেখা যায়, তা হলে আমি বেশ অবাক হব। বরং দু’জন স্পিনার নিয়ে আর একজন বাড়তি পেসার বা বাড়তি ব্যাটসম্যান নিলে ভাল হত। প্রথম এগারো বাছাইয়ে আরও অপশন পেত ধোনি।

জাডেজা-ফাটকা

রবীন্দ্র জাডেজাকে নিয়ে বোধহয় ফাটকাই খেলে ফেলল ধোনি। আমার বিশ্বাস, জাডেজাকে ১৫ জনের দলে রাখা হয়েছে ক্যাপ্টেনের কথায়। শুনলাম, বোর্ড সচিব সঞ্জয় পটেল না কি বলেছেন, জাডেজার ম্যাচ ফিটনসে আসতে আরও দশ দিন লাগবে বলে তাঁরা আশা করছেন। এটাই দেখার যে জাডেজা ত্রিদেশীয় সিরিজে খেলতে পারে কি না। যদি ও খেলতে পারে, তা হলে ভাল। কিন্তু না পারলে ওকে সরাসরি বিশ্বকাপের ম্যাচে নামানোর ঝুঁকি নেবে ধোনি? মনে রাখবেন, ওর চোটটা কিন্তু কাঁধে। ইশান্ত শর্মা সম্পর্কেও একই কথা বলা যায়। সদ্য চোট পাওয়া দুই ক্রিকেটারকে রাখার ঝুঁকি নেওয়া হল কেন, কে জানে?

রহস্যের নাম বিনি

স্টুয়ার্ট বিনিকে কেন বিশ্বকাপে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, এটা আমার কাছে রহস্য। হয়তো অস্ট্রেলিয়ায় খেলা বলে ধোনি ও ফ্লেচার একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডার চেয়েছিল এবং স্টুয়ার্ট ছাড়া কেউ হাতের কাছে নেই বলেই স্টুয়ার্টের ভাগ্যেই শিকে ছিঁড়েছে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় স্টুয়ার্ট আদৌ ভাল কিছু করতে পারবে বলে আমার মনে হয় না। কন্ডিশনের সাহায্য ছাড়া ও ভাল বল করতে পারে না। ওকে মনে হচ্ছে গোটা বিশ্বকাপটা ড্রেসিংরুমে বসে বসেই কাটাতে হবে।

যাদের দরকার ছিল

এই দলে দরকার ছিল যুবরাজ সিংহ ও মুরলী বিজয়কে। জাডেজার জায়গায় যুবরাজ থাকলে ও বাড়তি স্পিনারের জায়গায় মুরলী বিজয় এলে ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীরা অনেক নিশ্চিন্তে থাকতে পারতেন। চার বছর আগে যুবরাজ যে বিশ্বকাপের সেরা ক্রিকেটার হয়েছিল, সেটা না-হয় ছেড়েই দিলাম। সে তো চার বছর আগে ফাইনালে ভারতের হয়ে সবচেয়ে বেশি রান করেছিল গৌতম গম্ভীরও। কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেটে যুবির সাম্প্রতিক ফর্মের কথা অস্বীকার করব কী করে? তা ছাড়া অস্ট্রেলিয়ায় একটা ব্যাক-আপ ওপেনিং জুটি রাখা দরকার ছিল। রোহিত-ধবন যদি ক্লিক না করে, তখন রাহানে-মুরলীই হত সেই ব্যাক আপ। নতুন বলটা দারুণ সামলায় মুরলী। ওর এই বিশেষত্বকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল।

বাংলার ‘প্রাপ্তি’

সত্যি বলতে কী, মহম্মদ শামি ছাড়া যে বাংলা থেকে আর কেউ বিশ্বকাপ দলে থাকবে, এমন প্রত্যাশা করিনি। একজন বাড়তি উইকেটকিপার নিলে হয়তো ঋদ্ধির সম্ভাবনা ছিল। আর মনোজকে সম্প্রতি সিনিয়র ওয়ান ডে দলে রাখা হয়নি। বোঝাই যাচ্ছিল, ধোনিদের পরিকল্পনায় ও ছিলই না। রায়ডু ফর্মে না থাকলে হয়তো মনোজ ও ঋদ্ধির ডাক পড়ত। ও থাকায় বাংলার দু’জনই আটকে গেল।

বিশ্বকাপে ভারতের ১৫

ধোনি (অধিনায়ক ও উইকেটকিপার), কোহলি (সহ অধিনায়ক), রাহানে, ধবন, রোহিত, বিনি, রায়না, জাডেজা, রায়ডু, অক্ষর, অশ্বিন, ভুবনেশ্বর, শামি, উমেশ, ইশান্ত।

সভায় যা হল

যুবরাজ সিংহের নাম প্রস্তাব করার কথা ভেবেই মঙ্গলবার নির্বাচনী বৈঠকে এসেছিলেন নির্বাচকেরা। কিন্তু সভা শুরু হওয়ার পর টিম ম্যানেজমেন্টের তরফে টেলি কনফারেন্সে অপ্রত্যাশিত ভাবে হাজির করা হয় ভারতীয় দলের ফিজিও নীতিন পটেলকে। যেখানে নীতিন বলেন, রবীন্দ্র জাডেজা আগামী ১০ দিনের মধ্যে ফিট হয়ে যাবেন। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচকরা আর যুবরাজের নাম প্রস্তাব করার সুযোগই পাননি। টিম ম্যানেজমেন্টের কথাই মেনে নিতে হয়।

সৌরভ যা বলছেন

এই দলে যথেষ্ট ভারসাম্য আছে। অভিজ্ঞতার দিক থেকেও দলটা মোটেই পিছিয়ে নেই। এটা ঠিকই যে, সচিনের মতো অভিজ্ঞ কোনও ক্রিকেটার নেই। কিন্তু ধোনি, কোহলি, রায়না, ইশান্ত, অশ্বিনদের অভিজ্ঞতাও তো কম নয়। ধবন, রোহিতরাও ওয়ান ডে ক্রিকেটে বিপজ্জনক। মোটেই দুর্বল দল নয় ভারত। টেস্টে ভারতীয় বোলারদের দুর্বল দেখালেও এরা যখন ওয়ান ডে-তে মাত্র দশ ওভার বল করতে নামে, তখন এদের অন্য রকম দেখায়। যুবরাজের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরাটা কঠিন হয়ে গেল ঠিকই। তবে ক্রিকেটটা যেন ও বন্ধ না করে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement