ব্রাজিল টিম বাসের সামনে বিক্ষোভকারীদের সামলাচ্ছে পুলিশ। ছবি: রয়টার্স।
মাঠে বল গড়ানোর আগেই মাঠের বাইরে গোল খেয়ে বসলেন ব্রাজিল বিশ্বকাপের আয়োজকরা। আড়াই সপ্তাহ পরেই ফুটবলের বিশ্বযুদ্ধ যেখানে শুরু হওয়ার কথা, সেখানে সোমবার আর এক যুদ্ধের ইঙ্গিত দিয়ে রাখল। তাও আবার খোদ সে দেশের ফুটবলারদের বিরুদ্ধেই!
এ দিনই বিশ্বকাপের প্র্যাকটিস শুরু করল ব্রাজিল। আর তার গোড়াতেই বিপত্তি! রিও ডি জেনেইরোর হোটেল থেকে টিম বাসে বেরোনোর মুখেই প্রবল বিক্ষোভের মুখে পড়তে হল নেইমারদের। যা নিয়ে রীতিমতো অস্বস্তিতে ব্রাজিলের ক্ষমতাসীন দিলমা রুসেফ সরকার।
নেইমারদের যাওয়ার কথা ছিল ৯০ কিমি দূরের শহর তেরেসোপোলিসে। সেখানেই বিশ্বকাপের প্রস্তুতি শিবির ব্রাজিলের। কিন্তু থিয়াগো সিলভা, দানি আলভেজদের নিয়ে নীল রঙের টিম বাস হোটেল থেকে এ দিন সকালে রওনা হওয়ার মুখেই প্রবল বিক্ষোভের মুখে পড়ে। ঘটনায় প্রথমে কিছুটা হকচকিয়ে যান প্লেয়াররা। নিরাপত্তা কর্মীরা দ্রুত পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেও বিক্ষোভকারীদের আটকানো যায়নি। রাস্তা আটকে ব্রাজিলের টিম বাসে বিক্ষোভকারীরা সেঁটে দেয় বিশ্বকাপ বিরোধী স্টিকার। কয়েক জন বিক্ষোভকারী টিম বাসের সামনে রাস্তায় শুয়ে পড়ে নেইমারদের আটকানোর চেষ্টাও করেন। ব্যানার, পোস্টার-সহ প্রতিবাদ চলে বেশ কিছুক্ষণ। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিলেন স্থানীয় শিক্ষক-শিক্ষিকা। যাঁরা উন্নত শিক্ষাব্যবস্থার দাবি জানিয়ে স্লোগান দিচ্ছিলেন, ‘‘এত অর্থ ব্যয় করে বিশ্বকাপ চাই না। ভাল শিক্ষা, ভাল চিকিৎসা পরিকাঠামো চাই।”
গত বছর কনফেডারেশন কাপ চলার সময়ও সরকার বিরোধী বিক্ষোভে কেঁপে উঠেছিল ব্রাজিল। বিশ্বকাপে সেটা আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে এই আশঙ্কাটা তখন থেকেই ছিল। যে রকম উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে এ দিন নেইমারদের পড়তে হল তাতে চিন্তায় খোদ ব্রাজিলের প্লেয়াররাই। বাসের মধ্যে কয়েকজন প্লেয়ারকে বিক্ষোভের ছবি আর ভিডিও তুলতেও দেখা যায়। গোলকিপার জুলিও সিজারের মন্তব্য, “বিক্ষোভের ব্যপারটা সত্যিই চিন্তায় রাখল।”
শিবিরে নেইমার-স্কোলারি। সোমবার রিওর
কাছে তেরেসোপোলিসে। ছবি: এএফপি।
শেষ পর্যন্ত অবশ্য পুলিশ আর নিরাপত্তারক্ষীদের তৎপরতায় বিক্ষোভ খুব বড় আকার ধারণ করেনি। নেইমারদের টিম বাস নিরাপদেই গন্তব্যে পৌঁছায়। কিন্তু এই ঘটনার পর প্রশ্ন উঠছে, বিক্ষোভের আঁচ যে ভাবে প্রতিদিন বাড়ছে তাতে বিশ্বকাপের সময় তা সামাল দিতে পারবে তো ব্রাজিল প্রশাসন? ইতিমধ্যেই বিশ্বকাপে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এক লক্ষ সাতান্ন হাজার পুলিশ ও সেনা নামানোর কথা জানিয়েছে ব্রাজিল সরকার। কিন্তু বিশ্বকাপের সময় পেলের দেশে আগত তিন লক্ষ ফুটবলপ্রেমী-সহ দেশ-বিদেশের প্লেয়ার আর কমকর্তাদের নিরাপত্তার জন্য সেটাও যথেষ্ট তো? প্রশ্ন কিন্তু থাকছেই।
নেইমারদের অবশ্য অত শত চিন্তা এখন মাথায় নেই। ষষ্ঠ বিশ্বকাপ ঘরে আনার প্রস্তুতি নিয়েই আপাতত ব্যস্ত সেলেকাও ব্রিগেড। তেরেসোপোলিসে কড়া নিরাপত্তায় দু’দিন ফিটনেস পরীক্ষা চলবে টিমের। বুধবার থেকে শুরু হবে আসল প্র্যাকটিস। ১২ জুন সাও পাওলোয় ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে উদ্বোধনী ম্যাচে নামার আগে মোট ১৭ দিন প্রস্তুতির সময় পাচ্ছেন নেইমাররা। তার মধ্যে এক সপ্তাহ প্র্যাকটিসের পর পানামার বিরুদ্ধে ২ জুন প্রস্তুতি ম্যাচে নামবেন জুলিও সিজাররা। নেইমারদের দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচ সার্বিয়ার বিরুদ্ধে ৬ জুন। এ দিন প্রস্তুতি শিবিরে অন্যরা যোগ দিলেও ছিলেন না মার্সেলো। রিয়াল মাদ্রিদের লেফট ব্যাককে শনিবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতার উৎসব করতে এ দিন ছাড় দেওয়া হয়।
স্কোলারি জানিয়েছেন, প্র্যাকটিসে প্রথম কয়েকটা দিন খুব গুরুত্বপূর্ণ। কেন না ডাক্তারি পরীক্ষার পর প্লেয়ারদের ফিটনেস নিয়ে একটা ধারণা পাওয়া যাবে। তবে সোমবারের ঘটনার পর একটা বিষয় স্পষ্ট, পরীক্ষা শুধু নেইমারদেরই নয়, ব্রাজিল প্রশাসনেরও।