বিশ্বকাপ প্রস্তুতিতে অভিনব দৃশ্য। সাও পাওলোয় বসনিয়ার প্র্যাকটিস। ছবি: এএফপি
দেশের জনসংখ্যা সাকুল্যে চল্লিশ লক্ষ। বিশ্বকাপের অভিষেক ম্যাচেই অপেক্ষা করছে লিওনেল মেসি ও আর্জেন্তিনা। কিন্তু অসীম প্রতিকূলতার মধ্যেও ‘রূপকথার সফর’ তৈরি করতে কোমর বাঁধছে বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা।
যোগ্যতা অর্জন পর্বে বসনিয়ার থেকে বেশি আশা ছিল না। ব্রাজিল যাওয়ার স্বপ্নপূরণ করতে পারবে এমন একটা দুর্বল দল সেটা প্রায় খাতায় কলমে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সমালোচকদের বুড়ো আঙুল দেখিয়ে গোটা যোগ্যতা অর্জন পর্বে দশটা ম্যাচ জিতে গ্রুপ শীর্ষে শেষ করে বসনিয়া। তার পরেও অবশ্য কটাক্ষের অভাব নেই। অনেকে বলে বসেছেন দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের দেশটির বিশ্বকাপ যাওয়াটা ‘ফ্লুক’ ছাড়া কিছুই না।
প্রাক্ বিশ্বকাপ প্রস্তুতি ম্যাচের পর অবশ্য হাওয়া ঘুরেছে। যেখানে মেক্সিকো ও আইভরি কোস্টের মতো দলকে নাস্তানাবুদ করে বসনিয়া। যার পরই সমালোচকদের একেবারে উল্টো সুর। সাম্বার দেশে এখন বিশ্বকাপের ‘চমক’ ধরা হচ্ছে বসনিয়াকে। যাদের আক্রমণাত্মক ফুটবল যে কোনও দলের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে।
দলের কোচ স্তেফান সুসিচের কাছে বসনিয়ার জয়ের মেজাজে বিশ্বকাপ শুরু করার কারণ, প্রতিটা ফুটবলারের সংঘবদ্ধতা। যাঁরা দেখিয়ে দিয়েছেন, একজোট হয়ে খেলতে পারলে যে কোনও দলের জন্য সমস্যা তৈরি করতে পারবে বসনিয়া। “আমি কাউকে ছোট করে দেখি না। সবাই এক আমার কাছে। কেউ ক্রোট নয়। কেউ সার্ব নয়। সবাই বসনিয়ান,” বলেন সুসিচ। কিন্তু যোগ্যতা অর্জন পর্বে শুধু প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে নয়, দেশের রাজনৈতিক সমস্যার সঙ্গেও লড়তে হয়েছে দলকে। কিছু দিন আগে পর্যন্ত সাসপেন্ড ছিল বসনিয়ার ফুটবল ফেডারেশন। সুসিচ বলেন, “বসনিয়ায় তিনটে প্রেসিডেন্ট। একজন সার্ব। একজন ক্রোট ও একজন বসনিয়ান। তাই ফুটবল দলেও সবার রাজনৈতিক মতামত আলাদা। একে অপরের সঙ্গে যাতে দ্বন্দ্বে না জড়িয়ে পড়েন সেই পরিস্থিতি সামলাতে হয়েছে। কাজটা সহজ ছিল না। কিন্তু পেরেছি।”
বিশ্বকাপে দলের অস্ত্র কে হয়ে উঠতে পারেন? কোচের মতে ম্যাঞ্চেস্টার সিটির এরিন জেকো। তিনি বলেন, “আমার দলের ফরোয়ার্ড লাইন খুব শক্তিশালী। জেকোর মতো ভাল ফুটবলার আছে। সঙ্গে পিয়ানিচ, মেদুনজানিনের মতো ভাল সাপোর্ট আছে। গ্রুপ পর্বের বাধা পেরতো পারব সে ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।”
কোচের মতোই স্বপ্নের সফর শুরু করার আগে আত্মবিশ্বাসী জেকোও। তিনি বলে দেন, “বিশ্বকাপের জন্য আমরা তৈরি।” এখন দেখার বসনিয়ার এই রূপকথার গল্প কত দূর এগোয়।
বিশ্বকাপের আগেই বিতর্কে হ্যাজার্ড
নিজস্ব প্রতিবেদন
বিশ্বকাপে শুরুর আগেই বিতর্কে জড়িয়ে পড়লেন বেলজিয়ামের তরুণ তারকা এডেন হ্যাজার্ড। যার ফর্ম নিয়ে ইতিমধ্যেই সংশয় দেখা দিয়েছে দেশের ফুটবলমহলে। তারকায় ভরা বেলজিয়াম দলের অন্যতম অস্ত্র হ্যাজার্ড। চেলসির জার্সিতে পুরো মরসুম ভাল খেললেও আন্তর্জাতিক মঞ্চে ছবিটা উল্টো। সোমবার সুইডেনের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি ম্যাচে গোল পেলেও পুরো ম্যাচেই ছন্দহীন দেখায় হ্যাজার্ডকে। যার পর বিশ্বের সেরা মঞ্চে কতটা সফল হবেন হ্যাজার্ড সে নিয়ে আশঙ্কা দানা বাঁধতে থাকে। চেলসি তারকাকে তীব্র কটাক্ষ করে বেলজিয়ামের প্রাক্তন বিশ্বকাপার মার্ক ডেগ্রিস তো বলে দিয়েছেন, “হ্যাজার্ড গোল করলেও ভাল খেলেনি। আটলেটিকোর বিরুদ্ধে যেমন ম্যাচ থেকে হারিয়ে যাচ্ছিল, একই অবস্থা সুইডেন ম্যাচেও।” আক্রমণে সাহায্য করলেও, হ্যাজার্ডকে রক্ষণাত্মক দিকটা আরও উন্নতি করতে হবে বলে মনে করেন মার্ক। বলে দেন, “ও শট মারছে ঠিকই কিন্তু রক্ষণকেও সাহায্য করতে হবে। যদি ভাল না খেলতে পারে তা হলে উইলমোটস ওকে বসিয়ে দিক।” প্রাক্তন বিশ্বকাপারের সমালোচনার পরও অবশ্য হ্যাজার্ডের উপরে ভরসা রাখছেন বেলজিয়াম কোচ। তিনি বলেন, “আমি জানি না সবাই কেন হ্যাজার্ডকে কটাক্ষ করছে। ও খুব ভাল ফুটবলার। আমার পুরো ভরসা আছে ওর উপরে।” তবে সঙ্গে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন হ্যাজার্ড খারাপ খেললে তাঁকে বসিয়ে দিতেও দ্বিধাবোধ করবেন না। “হ্যাজার্ড খারাপ খেললে ওকে প্রথম দল থেকে ছাঁটাই করতেও কোনও অসুবিধা নেই।”