আটলেটিকোর লাল-সাদা রং কি দেখা যাবে কলকাতার জার্সিতে?
নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারীর ফুটবলে প্রথম লাথি মারার দিনের মতোই কলকাতার ফুটবল ইতিহাসে ৬ মে, ২০১৪ কি বিশেষ ইঙ্গিতবাহী দিন হতে যাচ্ছে?
কলকাতা কি সত্যিই এ দিন আন্তর্জাতিক ফুটবল সংস্কৃতির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক গাঁটছড়া বাঁধা সম্পন্ন করে ফেলবে? নাকি এর প্রতিক্রিয়া কোনও দীর্ঘমেয়াদি পর্যায়ে আদৌ পৌঁছবে না?
বাংলার ফুটবলমহল সপ্তাহের প্রথম দিনে এই ব্যতিক্রমী আলোচনায় ব্যস্ত থাকল। ব্যতিক্রম এই জন্য যে, মঙ্গলবার শহরে মাদ্রিদ থেকে যে ফুটবল প্রতিনিধিদল এসে পৌঁছোচ্ছে, তাতে কোনও দিয়েগো কোস্তা নেই। নেই কোনও দাভিদ ভিয়া। নেই কোচ দিয়েগো সিমিওনে। আছেন স্রেফ কর্মকর্তারা। অথচ তাঁদের দেড় দিনের কলকাতা সফর ঘিরে পর্যাপ্ত চাঞ্চল্য।
এই সফরের উদ্যোক্তা চার জন। ‘আটলেটিকো দি কলকাতা’ টিমের চার মালিক। যাঁদের টিম কি না খেলবে ফুটবলের আইপিএলে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। হর্ষবর্ধন নেওটিয়া। উৎসব পারেখ। এবং সঞ্জীব গোয়েন্কা। টেকনিক্যালি সামান্য ভুল লেখা হল। উদ্যোক্তা পাঁচ জন। যার মধ্যে আটলেটিকো মাদ্রিদও রয়েছে।
শোনা যাচ্ছে তাদের শেয়ার পঁচিশ শতাংশ। হর্ষের কুড়ি শতাংশ। পারেখের দশ শতাংশ। সৌরভ পাঁচ শতাংশ। সঞ্জীব গোয়েন্কা অবশিষ্ট চল্লিশ শতাংশ। তিনিই প্রকল্পে বৃহত্তর লগ্নিকারী। যদিও পূর্ণাঙ্গ চুক্তি আর সই-সাবুদ সব হবে মঙ্গলবার মুখোমুখি বসে।
কলকাতার ফুটবল টিমের ওপর কারা কত লগ্নি করছেন, তার পূর্ণাঙ্গ হিসেব সরকারি ভাবে দিতে নারাজ সঞ্জীব। তবে সোমবার দুপুরে অফিসে বসে বলছিলেন, “ভেতরে ভেতরে দারুণ উত্তেজিত লাগছে। আটলেটিকো মাদ্রিদের সঙ্গে গাঁটছড়ায় যদি কলকাতা থেকে আন্তর্জাতিক তারকা তুলে আনা যায়, তা হলে আমাদের স্বপ্ন চূড়ান্ত সফল।” পঞ্চাশের সামান্য বেশি বয়সি আর পি সঞ্জীব গোয়েন্কা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান বলছিলেন, “ফুটবলে কলকাতার সাফল্যের সম্ভাবনা অনেক বেশি। একটা সৌরভ হয়েছে। কিন্তু পরের সৌরভ কবে আসবে কেউ জানে না। তার চেয়ে সম্ভাবনা বেশি আন্তর্জাতিক ফুটবল তারকা উঠে আসার। কুড়ি বছর বাদে অবসর জীবনে যদি দেখি আটলেটিকোয় কোচিং নিতে যাওয়া আমাদের কোনও ছেলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাঁপাচ্ছে, তার চেয়ে সন্তুষ্টির আর কী আছে?”
মাদ্রিদ কর্তাদের সঙ্গে সঞ্জীব বা সৌরভ মঙ্গলবারই প্রথম বসবেন। হর্ষ অবশ্য তাঁদের চেনেন। দুবাইয়ে টিমের কর্তাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কথাবার্তা বলতে তিনিই গিয়েছিলেন। ‘মউ’ স্বাক্ষর তিনিই করে এসেছেন। শোনা যাচ্ছে যে, টিম সংক্রান্ত অপারেশনের দিকটা দেখবেন হর্ষ। অর্থকরী দিকটা পরিচালনা করবেন সঞ্জীব। কোচিং ও ফুটবলের দিকটা নির্ভর করা হবে আটলেটিকোর ওপরে। সৌরভ থাকবেন প্রকল্পের মুখ এবং কো-অর্ডিনেটর হিসেবে।
সঞ্জীবের প্যাশন ক্রিকেট। ডার্বি ম্যাচ টিভিতে দেখেছেন আজ পর্যন্ত একটা। অথচ এমন নির্বাচনে জর্জরিত আইপিএল সময় পেলেই দেখতে বসে যান। প্রিয় ক্রিকেটারদের মধ্যে সৌরভ অগ্রগণ্য। এমনকী আর পি সঞ্জীব গোয়েন্কা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান নাকি আইপিএল নিলামের সময় কেকেআর টিমটা কিনতেও চেয়েছিলেন। আজও স্বীকার করছেন কলকাতা না পেয়ে বেশ হতাশই হয়েছিলেন।
“তবে ফুটবলে ঢোকা ক্রিকেট না পেয়ে নয়। এখানেও হৃদয়ের ডাক আছে। বারবার মনে হয়েছে এই শহরটাকে অনেক কিছু আমাদের দেওয়ার আছে। নানা ভাবে নানা প্রকল্পের মধ্যে দিতে চেয়েছি। কখনও অত্যাধুনিক শপিং মল করে। কখনও বিদেশের মতো ডিপার্টমেন্টাল স্টোর করে। ফুটবল তার মতোই একটা। তবে ক্ষেত্রটা অনেক বড়। দেখি না আমি-হর্ষ-সৌরভ সবাই মিলে কলকাতা থেকে একটা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে পারি কি না,” বললেন সঞ্জীব।
যদি শহরের হৃদয়ের ডাক তাঁর কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ-ই হয়, তা হলে মিউজিক ওয়ার্ল্ড তুলে দিয়েছেন কেন? নিশ্চয়ই এখানে হৃদয়ের সঙ্গে ব্যবসাও আছে? ভিক্টোরিয়া হাউসে বসে সঞ্জীব জবাব দেন, “মিউজিক ওয়ার্ল্ডটা উপায় ছিল না। দিনে এক কোটি টাকা করে ক্ষতি হচ্ছিল। এখানে ব্যবসা থাকবে। কিন্তু ওই যে বললাম তিনটে ছেলেও যদি আগামী কুড়ি বছরে আন্তর্জাতিক মানচিত্রে উঠে আসতে পারে, আমাদের সবার রোমাঞ্চিত লাগবে।”
সঞ্জীব অবশ্য স্বীকার করে নিচ্ছেন, সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠেয় টুর্নামেন্টে বড় টিম থেকে অনায়াসে প্লেয়ার পাওয়া যাবে কি না। আটলেটিকো থেকে ক’জন খেলবে। ফেডারেশন কী কী অনুমতি দেবে। এ সব ব্যাপারে তাঁদের সম্যক ধারণা নেই। অনেকটাই ধোঁয়াশা।
বার্ষিক আনুমানিক পনেরো কোটি টাকা টিম চালাতে মোট খরচ। এটা অনেকটাই করা হচ্ছে একটা রঙিন স্বপ্নের কথা ভেবে। হর্ষ যেমন উত্তেজিত। সৌরভ যেমন টাইম ম্যানেজমেন্ট কী করে আরও নিখুঁত করবেন, ক্রিকেটের ফাঁকে কী ভাবে ফুটবলের জন্য আরও বেশি সময় বার করবেন, তা নিয়ে ভাবছেন। সঞ্জীব তেমনই ফুটবলের বইপত্র আনাচ্ছেন। আর ফাঁকে সুযোগ পেলে ইউ টিউবে আধুনিক আন্তর্জাতিক ফুটবলের ঝলক দেখে নিচ্ছেন।
সৌরভের যেমন দিয়েগো কোস্তা নন, প্রিয় ফুটবলার মেসি। সঞ্জীবের তেমন সিআর সেভেন। তবে আটলেটিকো তারকাদের নাম মুখস্থ করতে শুরু করে দিয়েছেন।