সবচেয়ে দামি হতে পারেন সুব্রত পাল, রহিম নবি, গৌরমাঙ্গী সিংহ।
রহিম নবির টেনশন ডার্বি ম্যাচের আগের দিনের চেয়েও বেশি। কলকাতা টিমের হয়ে খেলতে চান। কিন্তু জানেন না, শেষ পর্যন্ত কেনা-বেচার পর কোন ক্লাবে গিয়ে পড়বেন? মুম্বইয়ের বিমানে ওঠার আগে নবি বলে গেলেন, “দাদা যদি আমাকে নেয় তা হলে কিন্তু জান লড়িয়ে দেব।”
গৌরমাঙ্গি সিংহ আর নির্মল ছেত্রী অবশ্য দুটো টিমের কথা ভাবছেন। কলকাতার সঙ্গে গুয়াহাটি। দু’জনেই পাহাড়ের ছেলে। নবির মতো কলকাতার তিন প্রধানে চুটিয়ে খেলা নির্মল বলছিলেন, “এতদিন আমরা ঠিক করতাম কোথায় খেলব। এখন টিম ঠিক করবে। কেমন যেন টেনশন হচ্ছে। আমাদের দরাদরি দেখতে দেবে তো?” পাশে বসে গৌরমাঙ্গির সংযোজন, “ক’টা ক্লাব আমাকে চায়, কে জানে।”
আর ডেনমার্ক এবং জার্মানিতে খেলে আসা সুব্রত পাল বলে দিলেন, “যে দল নেবে সেখানেই খেলব। এখানে একটাই সুবিধা কোনও দলই এগিয়ে নেই। সবাই শুরু করবে প্রথম থেকে। তবে টেনশন হচ্ছে এটা ভেবে চোখের সামনে হয়তো দেখতে পাব কে আমাকে চাইছে।”
আজ মঙ্গলবার সকাল দশটা থেকে ভারতীয় ফুটবলারদের ড্রাফট পুল থেকে সুপার লিগ বা আইএসএলের ছয় ফ্র্যাঞ্চাইজির (গোয়া এবং গুয়াহাটি টেবিলে বসলেও পুল থেকে ফুটবলার নেবে না। তারা যথাক্রমে ডেম্পো ও লাজং থেকে ফুটবলার নেবে) কর্তারা বেছে নেবেন তাদের সাত ফুটবলারকে। পরের দিন বুধবার আরও সাত। এখনও পর্যন্ত যা খবর, তাতে প্রতিটি টিমের মাঠে নামা এগারো ফুটবলারের মধ্যে পাঁচ জন হবেন ভারতীয়। আইকন নিয়ে বাকি ছয় জন হবেন বিদেশি। মোটামুটি ঠিক আছে বিদেশিদের কেনা-বেচা হবে অগস্টে। উদ্যোক্তা আইএমজিআর কর্তারা চাইছেন, ভারতীয় ফুটবলারদের বাছাই পর্বটা আগে সেরে নিতে। শোনা যাচ্ছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সঙ্গে সংঘাতে না গিয়ে পূর্ব নির্ধারিত ১৯ সেপ্টেম্বরের বদলে তা শুরু হতে পারে ৫ অগস্ট। টিভি স্পনসর স্টার সেটাই চাইছে।
কিন্তু টুর্নামেন্ট শুরুর দেড় মাস আগে ৮৪ ভারতীয় ফুটবলারের কেনা-বেচা নিয়ে মুম্বইয়ের লোয়ার প্যারেলোর প্যালেডিয়ান হোটেলের ঘরে ঘরে যা মিটিং চলছে, সে রকম গম্ভীর আর গোপন আলোচনা হার মানাতে পারে ভোটের আগের রাজনৈতিক দলের শিবিরকেও। প্রত্যেকটি ঘরই যেন ওয়ার রুম। এ দিন কীভাবে দলে নেওয়ার সুযোগ আসবে, কে কোন টার্মে সুযোগ পাবেন তা নিয়ে বিস্তারিত বুঝিয়ে দেওয়া হয় মুম্বইতে আসা আট ফ্র্যাঞ্চাইজির কর্তাদের। কলকাতা পেয়েছে পাঁচ নম্বর টেবল। এতে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের দল কিছুটা সমস্যায় পড়ল। কারণ তাদের টার্গেটে থাকা ফুটবলার নিয়ে যেতে পারে আগের চার টেবিলে বসে থাকা পুণে, মুম্বই, কোচি বা বেঙ্গালুরু। একেবারে শুরুর টেবিলে বসবে পুণে। শেষে গুয়াহাটি। প্রত্যেক টিম ফুটবলার বাছার জন্য প্রতি রাউন্ডে সময় পাবে পাঁচ মিনিট।
টেবিল ও নিয়ম ঠিক হয়ে যাওয়ার পর-ই ঘরে ঘরে শুরু হয়ে যায় গোপন বৈঠক। সবাই কোন পজিশনে কোন ফুটবলারকে নেওয়া হবে, কত টাকা খরচ করা হবে তা নিয়েই অঙ্ক কষতে শুরু করেছে। কোনও ফুটবলার না পাওয়া গেলে ‘প্ল্যান বি’ কী হবে তা নিয়েও রীতিমতো হোম ওয়ার্ক করে মাঠে নামছেন বিভিন্ন টিমের কর্তারা। কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে নারাজ। হোসে ব্যারেটো আর আটলেটিকোর এক কর্তাকে নিয়ে বসে পড়েছেন কলকাতার সাত কর্তা।
সাতশো কোটির আইএসএল কতটা সফল হবে, আদৌ হবে কী না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে দেশজুড়ে। বিশেষ করে ফুটবল মহলে। সেটা টুর্নামেন্টের বল না গড়ালে বোঝা সম্ভবও নয়। তবে আপাতত যেভাবে সলতে পাকানোর কাজটা চলছে তা বেশ আকর্ষণীয়। এদেশের ফুটবল ইতিহাসে নজিরবিহীনও। আইএমজিআর তাদের টুর্নামেন্ট সফল করতে কোমর বেঁধে নেমেছে। ফুটবলারদের দাম কত হবে তা অবশ্য গোপন রাখা হয়েছে।
বেসরকারি ভাবে যা জানা গিয়েছে তাতে সংগঠকদের প্যানেলের সবচেয়ে দামি ঘোষিত হতে চলেছেন সুব্রত পাল, রহিম নবি, গৌরমাঙ্গী সিংহ। প্রত্যেকের দাম আশি লাখ। ক্লাব থেকে লোন নেওয়া সর্বাধিক মূল্যের মেহতাব হোসেন (৩৫ লাখ)। মেহতাব, অর্ণব মণ্ডল, জেজেরাও উপস্থিত থাকবেন কেনা-বেচার সময়। তৃণমূলের সভা শেষ করে ভাইচুং ভুটিয়াও চলে এসেছেন। কিন্তু সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় কি আসবেন? সন্ধ্যের খবর ছিল তিনি ইংল্যান্ড থেকে আসতে পারবেন না। কিন্তু লর্ডস টেস্ট শেষ হয়ে যাওয়ায় তিনি হয়তো আসলেও আসতে পারেন। কলকাতার মালিকদের মধ্যে আটলেটিকোর এক যুব দলের কর্তা ছাড়া মালিকদের কেউই আসছেন না। তবে রাতের খবর, সৌরভ আসুন বা না আসুন, কোন ফুটবলার কেনা হবে তা নিয়ে নির্দেশ দিচ্ছেন ব্যারেটোদের। মহারাজ যে হারতে চান না কোথাও!