বৃহস্পতিবার মাঝরাতে আদিত্য বর্মা যখন গভীর আনন্দের সঙ্গে তাঁর এক শুভানুধ্যায়ীকে খবর দিচ্ছিলেন, আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হেস্তনেস্ত হয়ে যাবে। সম্ভবত বিদায় নেবে পুরনো শাসন। তখন ফোনের ও পারে থাকা ভদ্রলোকের অবশ্যই মনে হয়েছিল, আদিত্য আসন্ন ‘নমো’ অভিষেকের কথা বলছেন।
আসলে আদিত্য বলছিলেন, ‘ন’ দিয়েই নাম শুরু আরও এক জনের কথা। তিনি—নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন।
প্রায় অ্যান্টি ক্লাইম্যাক্সের মতোই যে শ্রীনি মামলা নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটবিশ্ব এবং জাতীয় কাগজের প্রথম পাতা গত ক’মাস রীতিমতো ব্যস্ত থেকেছে। তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মোড় এসে হাজির হল নরেন্দ্র মোদীর জয় ঘোষণার প্রহরেই। সুপ্রিম কোর্টের দু’নম্বর কক্ষে। ভারতীয় বোর্ডের তীব্র আপত্তি নাকচ করে যখন দুপুর-দুপুরই দুই সদস্যের বেঞ্চ মুকুল মুদগল কমিটির হাতেই আইপিএল গড়াপেটা তদন্তের ভার তুলে দিল।
ক্রিকেটজগতের কাছে অসম্ভব তাৎপর্যপূর্ণ এই রায়। নমো শব্দটা কংগ্রেসের কাছে যতটা অপছন্দের, শ্রীনিদের কাছে ঠিক ততটাই অপছন্দের বিচারপতি মুদগলের নাম। ইতিমধ্যেই যিনি আদালতকে দেওয়া বন্ধ খামে বারো জন ক্রিকেটার এবং স্বয়ং শ্রীনির নাম সন্দেহভাজন তালিকায় রেখেছেন। তাঁকেই কি না দায়িত্ব দিয়ে দিল সর্বোচ্চ আদালত। বোর্ডের তরফে বারবার বলার চেষ্টা হয়েছিল মুদগল তদন্তে পক্ষপাতপূর্ণ মনোভাব নেবেন। তা ছাড়া তাঁর আবিষ্কৃত তথ্য “সম্পূর্ণ ভুল।” বন্ধ খামের কোনও সারবত্তা নেই। বিচারপতিরা তাতে কানই দেননি।
এনডিএ-র নজিরবিহীন চুরমার করে জেতার দিনে একেবারেই যেন গ্রহণ হয়ে গেল আদালতের এই চাঞ্চল্যকর ক্রিকেট-রায়। শ্রীনি বিরোধীরা চেয়েছিলেন এ রকম একটা দিনে আরও জয়ডঙ্কা বাজুক। চ্যানেলে চ্যানেলে ব্রেকিং নিউজ দেখাক। সে সব কিছুই ঘটল না। চাপা পড়ে গেল নির্বাচনী খবরে।
ললিত মোদীর মতো কেউ কেউ তাতেও অভিযোগ করার কিছু দেখছেন না। বরঞ্চ মোদী মনে করেন, এতে ডাবল জয় হল। আদালতে পূর্ণ ক্ষমতা পেয়ে গেলেন মুদগল। ও দিকে এমন মোদী ঝড়ের মধ্যেও অমৃতসরে হেরে গেলেন অরুণ জেটলি। জেটলি শুধু ললিত মোদীর ঘোষিত বিরোধীই নন, শ্রীনি-শিবিরের অন্যতম মন্ত্রণাদাতা। বিরোধীগোষ্ঠী থেকে কেউ কেউ উল্লসিত ভাবে বলছিলেন, “কীসের অভিযোগ? বরং দু’টো আনন্দই যে এক দিনে আসবে কে ভেবেছিল?”
বিচারপতিরা মুদগলকে তাঁর পছন্দের প্যানেল গড়ে নিতে বলেছেন। বলেছেন, অগস্ট অন্তে তাঁর রিপোর্ট পেশ করতে। যে বেঞ্চ এই রায় দিয়েছে তার মুখ্য বিচারপতি পট্টনায়েক অবশ্য সেই সময় থাকবেন না। তিনি জুনে অবসর নিচ্ছেন।
বিচারপতি মুকুল মুদগল
বোর্ডে জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে মাত্র তিন মাসে যদি তদন্তের কাজ শেষ না হয়। মুদগল যদি বলেন, তাঁর আরও সময় লাগবে, তখন কী হবে? আদালত বলে দিয়েছে তদন্ত চলাকালীন শিবলাল যাদবই বোর্ডের দায়িত্বে থাকবেন। আর আইপিএল অবধি গাওস্কর কাজ চালাবেন। তার মানে শ্রীনি বোর্ড চালানোর অনুমতি পেলেন না।
এই পরিস্থিতিতে তদন্ত শেষ না হলে সেপ্টেম্বরে বোর্ডের নির্বাচনে শ্রীনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কী ভাবে? বোর্ডের আইনজীবী অনুরোধ করেছিলেন, আদালত যেন নির্দেশ দেয় তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অগস্টের প্রথম সপ্তাহে দিতেই হবে। বিচারপতিরা তা অগ্রাহ্য করে দিয়েছেন।
মুদগল কমিটিকে সাহায্য করার জন্য থাকবেন প্রাক্তন পুলিশ কর্তা বি বি মিশ্র। কমিটি দিল্লি, মুম্বই এবং চেন্নাই পুলিশের পূর্ণ সাহায্য নিতে পারে। তবে তারা কাউকে গ্রেফতার করতে পারবে না। মুদগল চেয়েছিলেন, মর্যাদাসম্পন্ন প্রাক্তন কোনও ক্রিকেটারকে কমিটিতে নিতে। আদালত সে প্রস্তাব মঞ্জুর করেছে। ক্রিকেট সার্কিটে তিনটে নাম ঘুরে বেড়াচ্ছে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। মোহিন্দর অমরনাথ। দিলীপ বেঙ্গসরকর। শোনা যাচ্ছে, এর মধ্যে মুদগলের ব্যক্তিগত পছন্দ সৌরভ।
এ বার প্রশ্ন, প্রস্তাব এলে সৌরভ রাজি হবেন? তিনি তো শুক্রবার লন্ডন চলে যাচ্ছেন তিন সপ্তাহের জন্য। কমিটির জন্য নিজের সফরসূচি বদলাবেন? অন্য সময় হলে জাতীয় প্রচারমাধ্যম এই প্রশ্ন তুলে হয়তো একটা শো-ই বসিয়ে ফেলত! এ দিন ক্রিকেটের গ্রহণের দিন। একেবারে সার্কিটের লোকজন ছাড়া কারও মাথাতেই নেই।
ললিত মোদী অবশ্য অবিচলিত। টুইট করে চলেছেন; নমো অভিষেকে অপশাসন বহিষ্কৃত হওয়ার আনন্দের দিনেই ক্রিকেটবিশ্বও গভীর আনন্দিত। ফিক্সারদের দিন শেষ!