নেইমার-সুয়ারেজদের দাপটে ঘরের মাঠে বিপন্ন রোনাল্ডো। শনিবারের বের্নাবাও। ছবি: এএফপি, রয়টার্স
বার্সেলোনা ৪(সুয়ারেজ-২, নেইমার, ইনিয়েস্তা): রিয়াল মাদ্রিদ ০
লিওনেল মেসির কামব্যাক ম্যাচ।
রাফা বেনিতেজের প্রথম এল ক্লাসিকো।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর নিজেকে প্রমাণের ম্যাচ।
গত কয়েক দিন ধরে এল ক্লাসিকো নিয়ে নানা খবর নেটে খোঁজাখুঁজির সময় এগুলোই চোখে পড়ছিল। ফুটবল বিশ্বের মতো আমারও আগ্রহ ছিল, দু’মাস পর মাঠে ফিরে মেসি কী করে দেখার। দেখার ইচ্ছে ছিল রোনাল্ডোকেও। ইদানীং রিয়ালে ওকে নিয়ে নানা ঝামেলার জল্পনা ছড়িয়েছে। দেখতে চেয়েছিলাম, এত সমালোচনার প্রতিশোধটা ও বার্সার বিরুদ্ধে নেয় কি না।
কিন্তু একটাও হল না। মেসি নামল, ম্যাজিক দেখাল, কিন্তু তা বড় অল্প সময়ের জন্য। শনিবারের রোনাল্ডোকে তো একটা ছবিতে বুঝিয়ে দেওয়া যায়। ব্রাভোর সঙ্গে ওয়ান-ইজ-টু ওয়ান মিস করে প্রচণ্ড হতাশায় মাথা ঝাঁকাচ্ছে। বরং বিশ্ব আবার দেখল, নেইমার দ্য সিলভা কী জিনিস।
লুই সুয়ারেজ এ দিন দু’টো দুর্দান্ত গোল করতে পারে। কিন্তু রিয়াল ডিফেন্সকে ঠিকঠাক বললে শেষ করে দিল দু’জন বেঁটেখাটো চেহারা। নেইমার এবং আন্দ্রে ইনিয়েস্তা। আর এই দুইয়ের মধ্যে বিচারে নেইমার আরও মারাত্মক। বল কন্ট্রোল বা ড্রিবল করে বেরিয়ে যাওয়া— নেইমার আজ দশে দশ পাবে। নিজে গোল করেছে। করিয়েছে। শেষ দিকে এমন দু’টো সহজ সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে যে, বার্সা অনায়াসে হাফ ডজন দিতে পারত। আবার ইনিয়েস্তা যে গোলটা করল, তার পিছনে নেইমারের ব্যাকহিলটাও মনে থাকবে। নেইমার বুঝিয়ে দিল যে, ফুটবলটা ও পা দিয়ে খেলে না। খেলে মাথা দিয়ে।
সবচেয়ে আশ্চর্য লাগল রিয়ালের খেলা দেখে। এটা কোন রিয়াল? দেখে তো মনে হচ্ছিল লেভান্তের সঙ্গে বার্সেলোনা খেলছে! রাফা বেনিতেজের টিমের না ছিল কোনও গেমপ্ল্যান, না ছিল কোনও কম্বিনেশন। কেমন যেন ছন্নছাড়া ভাবে গোটা টিমটা মাঠে ঘুরে বেড়াল। দ্বিতীয়ার্ধে তবু একটু-আধটু ঝাঁঝ দেখলাম। কিন্তু ততক্ষণে তো দু’গোল খেয়ে গিয়েছে। রোনাল্ডো এমন এমন জায়গায় চলে যাচ্ছিল, যেখানে ওকে ভাল পাস দেওয়া খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। মেসি আজ অনেক পরে নেমেছে। চোট থেকে ফিরে এই প্রথম। কিন্তু তাতেও মেসি যা খেলেছে, তার ধারেকাছে পৌঁছতে পারেনি রোনাল্ডো। তাতে যা হওয়ার তাই হল। প্রথম দশ মিনিটের ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিল বার্সেলোনা। ছোট ছোট পাসে রিয়ালকে ঝাঁঝরা করে। মাঝমাঠটা পুরো দখলে নিয়ে। বক্সের বাইরে রিয়ালের কোনও মুভই ওরা তৈরি করতে দেয়নি বলতে গেলে। ইনিয়েস্তা-বুস্কেতস-রাকিটিচের মিডফিল্ড প্লে তো বটেই, আরও একটা ছেলের খেলা চোখ টানল। সের্জিও রবের্তো। সুয়ারেজকে দিয়ে যে গোলটা করাল, অসাধারণ। বল পেয়ে হোল্ড করল, তার পর তাড়াহুড়ো না করে রিয়াল ডিফেন্স টুকরো করে পাস। লা মাসির ট্রেনিংয়ের ছাপ একেবারে স্পষ্ট।
এবং ম্যাচে শুধু রিয়ালের চার গোল খাওয়া নয়, আরও একটা জিনিস দেখলাম। বার্সা কিন্তু দেখিয়ে গেল ওরা মেসি-নির্ভরতা ওরা কতটা কমিয়ে ফেলেছে। ওরা বুঝিয়ে গেল, মেসি না থাকলেও সুয়ারেজ দু’গোল করে চলে যাবে। বুঝিয়ে গেল, মেসি না থাকলেও ওদের হাতে একটা ব্রাজিল বোমা আছে, যে ডিফেন্স তছনছ করে দেবে। আর আমার মনে হয়, এই বার্তাটাই আগামী দিনে বাকি ক্লাবগুলোর কাছে বেশি আতঙ্কের হতে চলেছে।
মেসি থাকলে তো বটেই, না থাকলেও বার্সেলোনা বিপক্ষকে ছিঁড়ে ফেলবে!